নবীগঞ্জে ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর হামলার ৪ দিন,নেই কোন গ্রেফতার!

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি::

 

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজারে সরকারি দায়িত্ব পালনকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর সংঘটিত হামলার ঘটনার ৪ দিনেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

 

এ ঘটনায় ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের হলেও মূল অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে জনসাধারণের মধ্যে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

গত ৩১শে মে (শুক্রবার) ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অনুমোদিত জনতার বাজার পশুর হাট বসানোকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসনের একাধিক নিষেধাজ্ঞা, মাইকিং ও প্রচারণা সত্ত্বেও বাজার কমিটি হাট বসানোর ঘোষণা দিয়ে রাতভর মাইকিং করে।

 

পরদিন বিকেলে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি টিম হাট বন্ধে অভিযানে গেলে বাজার কমিটির লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে এবং এক ম্যাজিস্ট্রেটকে মারধর করে।

এ ঘটনায় পরদিন (১লা জুন) পানিউমদা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

 

মামলায় জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল খায়ের গোলাপকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া গজনাইপুর গ্রামের আজির উদ্দিন, কাজী তোফায়েল আহমদ, কাউছার আহমেদ তালুকদার, কাজী জাহিদ আহমেদ, গোলাম মতুর্জা স্বপন, মো. নজর উদ্দিন, আব্বাস উদ্দিন, মো. জামাল মিয়া, আব্দুস শহীদ, আব্দুল হাই, আবুল কালাম, সুমন মিয়া, আব্দুল আউয়াল, হারিছ মিয়া, রিফন মিয়া, কাজী রিফন, আব্দুল বাছিত,

লুৎফুর রহমান, আফজল মিয়া, সুয়েল মিয়া, জিতু মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, মো. রাসেল মিয়া, মিজান মিয়া, খাইরুল মিয়া, সায়েক মিয়া, মোস্তাকিন মিয়া, আশ্বব আলী, ফয়েজ মিয়া, রাবেল মিয়া, সুফায়েল মিয়া এবং অলিউর রহমান ওরফে অলি মিয়াকে আসামি করা হয়েছে।

 

এ ছাড়া সাতাইহালের উমর রহমানসহ আরও অজ্ঞাতনামা অনেককে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সব আসামির বাড়ি দক্ষিণ গজনাইপুর এলাকায়।

 

তবে ঘটনার ৪ দিন হয়ে গেলেও একজন আসামিকেও গ্রেফতার করতে না পারায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- শনিবার প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে পশুর হাট বসানো ও পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর হামলার ঘটনার পরও সোমবার জনতার বাজারে পশুরহাট বসায় পরিচালনা কমিটি। রবিবার মামলা হলেও সোমবার জনতার বাজার পশুরহাটে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়।

 

স্থানীয়দের প্রশ্ন যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে এত তথ্যপ্রমাণ ও চিহ্নিত আসামিদের থাকা সত্ত্বেও কেন এত সময়েও কাউকে ধরা যাচ্ছে না?

 

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, “প্রশাসনের কর্মকর্তা
যদি নিরাপদ না হন, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে
কেউই নিরাপদ থাকবে না।”

 

জনতার বাজারে ঘটে যাওয়া এই হামলার ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তা নবীগঞ্জে প্রশাসনের প্রতি আস্থার মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন নাগরিকরা।

তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান বলেন, সরকারি কর্মকর্তার ওপর হামলা ও সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতারে আমরা কাজ করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।