সিলেটের ১২ চা বাগানে ১৬ দিন ধরে কর্মবিরতি চলছে

সুরমা টাইমস ডেস্ক : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাভুক্ত সিলেট বিভাগরে ১২টি বাগানের শ্রমিকরা ১৬ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন। ৮ সপ্তাহের বেতন-ভাতা ও ১৭ মাসের প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকা না পেয়ে এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ৬ নভেম্বর কাজে ফিরেননি ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাভুক্ত সিলেট জেলার লাক্কাতুরা, কেওয়াচড়া ও দলদলি চা বাগানের শ্রমিকরা। এ অবস্থায় অনেকটা বির্যয়ের মুখে পড়েছে চা শিল্প। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, চা শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ। স্বল্পমজুরির চা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকা দ্রুত পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, লাক্কাতুরা, কেওয়াচড়া, দলদলি চা বাগানের শ্রমিকরা ১৬ দিন ধরে কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি গত কয়েকদিন বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেছেন। গত মঙ্গলবার শ্রমিকরা সিলেট এয়ারপোর্ট রোডে মিছিলও করেছেন। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে লাক্কাতুরা ন্যাশনাল টি কোম্পানির ফটকে এসে শেষ হয়। লাক্কাতুরা চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির কোষাধ্যক্ষ বিপন গোয়ালা বলেন- ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাভুক্ত সিলেট জেলার লাক্কাতুরা, কেওয়াচড়া, দলদলি চা বাগানে মোট ১ হাজার ১৮০ জন শ্রমিক রয়েছেন। কিন্তু ৮ সপ্তাহ ধরে আমাদের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ে আছে। আটকে আছে ১৭ মাসের প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকাও। এ অবস্থায় দফায় দফায় কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিলেও তারা সন্তোষজনক জবাব দিচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। গত কয়েকদিন বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। তবে আজ (বুধবার) শুধু কর্মবিরতিতে আছি। আমরা বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করছি। চা শ্রমিকরা বলেন- আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে বেতন-ভাতা দাবি করলে তারা অর্থসংকটে ভোগছেন বলে জানান। তারা কৃষি ব্যাংকের কাছে ঋণ দেওয়ার আবেদন করেছেন। ঋণ পেলে আমাদের টাকা পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেতন প্রতি মাসে ঠিকই পাচ্ছেন। তবে আমাদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য কেন? বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা বলেন- দরিদ্র্য চা শ্রমিদের টানা ৮ সপ্তাহের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ে থাকলেও ন্যাশনাল টি কোম্পানি কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। তারা বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে আজ (বুধবার) বিকাল ৪টার মধ্যে যোগাযোগ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেনি। এ অবস্থায় বিভাগের ১২টি চা বাগানে অচলাবস্থা সহসাই কাটবে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন- এ বিষয়ে দুদিন আগে সিলেট জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির সিলেট রিজিওনের ব্যবস্থাপক এমদাদ হোসেন বলেন- এ বিষয়ে আমি বক্তব্য দিতে পারবো না। পরে এ বিষয়ে জানতে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এদিকে, চা শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি ও একাত্মতা পোষণ করেছেন বিভিন্ন রাজননৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও  সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই ধারাবাহিকতায় বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী গত মঙ্গলবার শ্রমিকদের সভায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি এসময় বলেন, চা শ্রমিকরা এ সমাজেরই অংশ। কিন্তু তারা দিনের পর দিন ধরে অবহেলিত। তাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়াগুলো দ্রুত পূরণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।