মৌলভীবাজারে সামাজিকতার দ্বন্দ্বে বাড়ি ছাড়া নবদম্পতি !

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃঃ

 

সিলেটের মৌলভীবাজারে সামাজিকতার দ্বন্দ্বে নববিবাহিত দম্পতির বিয়ে না মেনে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। সামাজিকভাবে না জানিয়ে বিয়ে করায় নব বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী নিজ বাড়িতে যেতে পারছেন না। বিবাহে গ্রামের মুরব্বিদের দ্বিমত থাকায় পাত্র ও পাত্রীপক্ষের কেউই নব বিবাহিত দম্পতিকে ঘরে তুলতে পারছেন না।

 

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কনে পলি আক্তার। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবালা ইউনিয়নের উত্তর কাগাবলা গ্রামের ইমন মিয়ার সঙ্গে গত ১৯শে মার্চ সাতবাক গ্রামের পলি আক্তারের বিয়ে হয়। ধর্মীয় বিধান মেনে চার লাখ টাকা কাবিন নির্ধারণ করে নিকাহনামা রেজিস্টারের মাধ্যমে তাদের বিয়ে সম্পূর্ণ করে। বিয়ের কথা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর পথের কাঁটার মত বাঁধা হয়ে দাঁড়ান স্থানীয় মুরব্বিরা।

 

গত বৃহস্পতিবার (২৫শে মার্চ) পলি আক্তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে জানিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে পোস্ট দেওয়ার পর আলোচনায় আসে বিষয়টি সর্বমহলে।

পলি আক্তার বলেন, আমার মা শিল্পি বেগম একজন সহজ সরল গৃহিনী। তিনি আমার বিয়ের বিষয়ে আমার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় ও এলাকার মুরব্বিদের জানালে তারা আমার বিবাহকে অস্বীকার করে। বরং আমার স্বামী আমাকে অপহরণ-ধর্ষণ করেছেন বলে মিথ্যা মামলা প্রদানের জন্য আমার মাকে কুমন্ত্রণার বেড়াজালে আবদ্ধ করতে বিভিন্ন রকমের হুমকি প্রদান করে যাচ্ছেন। আমার স্বামীর আত্মীয় স্বজনকেও বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে তারা। এমনকি তারা আমার স্বামীকে প্রাণে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে বলে আমার মাকে জানিয়েছে।

তিনি বলেন, বিয়ের পর থেকে আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। গ্রামের মুরব্বিদের হুমকি ধামকির কারণে আমি ও আমার স্বামী উভয়ে একসঙ্গে বর্তমানে আত্মগোপনে আছি। আমি আমার স্বামীর বাড়িতে যেতে চাই। আমাদের সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য প্রশাসন সহ সকলের সাহায্য চাচ্ছি। আমি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

সদর উপজেলার আপার কাগাবলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খলকু মিয়া (৫৫), আগিহুন গ্রামের রুজিনা আক্তার (৪০), সাতবাক গ্রামের বশির আহমদ সুনু মিয়াকে (৪০) অভিযুক্ত করে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পলি আক্তার।

পলি আক্তারের স্বামী ইমন মিয়া বলেন, আমি গত ১৯শে মার্চ পলি আক্তারকে সরিয়া ও আইন মোতাবেক বিয়ে করেছি। বিয়ে করার পর আমাদের পাশের গ্রাম ও বাজারের কিছু মুরব্বিদের বাঁধায় পড়েছি। তারা আমাকে ও আমার পরিবারকে বিভিন্ন রকম হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। যার কারণে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে ঘরে উঠতে পারছি না।

অভিযুক্ত আপার কাগাবলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খলকু মিয়া বলেন, এখানে দুটি আলাদা সমাজ আছে। বিয়ে হলে তাদের মধ্যে ঝামেলা আসবে। কনেপক্ষ আমার কাছে এসেছিল আমি তাদের সান্ত্বনা দিয়েছি। আমি কাউকে হুমকি ধামকি এসব কিছু দেইনি। কেউ এর প্রমাণ ও দিতে পারবে না।

আপার কাগাবলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইমন মোস্তফা বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। এখানে সামাজিক বাঁধা আছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। কেউ এখনও এই ঘটনা নিয়ে কোনো সংঘাতে জড়ায়নি।

 

মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘থানায় এসে অভিযোগ দিলে এই বিষয়ে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিব।’

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘ওই দম্পতি আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি তাদেরকে থানায় গিয়ে আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য বলেছি। আমরা তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করবো।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।