নাজিরবাজারে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা,নিহত ১৫ : দুই চালকের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক::

 

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহতের ঘটনায় দুই চালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের ভাটিপাড়ার ইজাজুল বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। ইজাজুলের বাবা গতকাল বুধবারের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

গতকাল নিহতের সংখ্যা ছিল ১৪ জন ।আজ বৃহস্পতিবার (৮ই জুন) ভোরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজন মারা যান।

 

মারা যাওয়া বাদশা (২২) নামের ওই যুবক দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মায়েদ নুরের ছেলে।

আজ বৃহস্পতিবার (৮ই জুন) দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দোহা মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন ১৫ জন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় পিকআপ ও ট্রাকচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তারা এখনও পলাতক। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ গাড়ির নাম্বার দিয়ে মালিকের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে।

প্রসঙ্গত,গতকাল ৭ই মে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুরে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া পিকআপে প্রায় ৩০ জন নির্মাণ শ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছলে মুনশীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী বালুবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও ৪ জন।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মৃত সজিব আলীর ছেলে রশিদ আলী (২৫), শান্তিগঞ্জ উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের মৃত হারুন মিয়ার ছেলে দুলাম মিয়া (২৬), একই উপজেলার বাবনগাঁ গ্রামের মৃত ওয়াহাব আলীর ছেলে শাহিন মিয়া (৪০), দিরাই উপজেলার আলীনগর গ্রামের মৃত শিশু মিয়ার ছেলে হারিস মিয়া (৬৫), হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার হলদিউড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪৫),
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে সায়েদ নূর (৫০), শান্তিগঞ্জ উপজেলার তলেরতন গ্রামের মৃত আওলাদ উল্লার ছেলে আওলাদ হোসেন (৬০), দিরাই উপজেলার পাথারিয়া গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে একলিম মিয়া (৫৫), গচিয়া গ্রামের বারিক উল্লার ছেলে সিজিল মিয়া (৫৫), ভাটিপাড়া গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৭), নেত্রকোনার ভারহাট্টা উপজেলার দশদার গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে আওলাদ মিয়া (৩০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের শমসের নুরের মেয়ে মেহের (২৪), দিরাই উপজেলার মধুপুর গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে দুদু মিয়া (৪০), একই গ্রামের শাহজাহানের ছেলে বাদশা (২২) ও দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মায়েদ নুরের ছেলে বাদশা (২২)।

 

জানা যায়, নিহতদের বেশিরভাগই সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। তাদের স্বজনরা জানান, নিহত সবাই নির্মাণ শ্রমিক। দৈনিক মজুরীতে তারা বাসার ছাঁদ ঢালাইয়ের কাজ করতো। গতকাল বুধবার ভোরেও তারা একটি বাসার ঢালাইকাজের জন্য সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগর থেকে পিকআপে (সিলেট-ন ১১-১৬৪৭) করে প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ নির্মাণ শ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছলে মুনশীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী বালুবাহী ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট ১৩-০৭৮০) সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়।

এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করেন।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।