বিশেষ প্রতিবেদক ::
সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার জাফলংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিট অফিসার এসআই মো. ওবায়দুল্লাহর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ শ্রমিকরা।
অভিযোগ উঠেছে সিলেট জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন দুর্নীতিবাজ ওই কর্মকর্তা।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) সরকার তোফায়েল আহমেদ’কে ও তোয়াক্কা করেন না এসআই ওবায়দুল্লাহ। জাফলং বিটের দায়িত্বে আসার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এসআই মো. ওবায়দুল্লাহ ।
এসআই ওবায়দুল্লাহ’র বাড়ি কিশোরগঞ্জ এলাকায় থাকায় তিনি অতিরিক্ত প্রভাব খাটিয়ে জাফলং এলাকায় বালি, পাথর ও চোরাকারবারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
তারপরও বহাল তবিয়তে আছেন তিনি। গত ২৪শে জুন ওবায়দুল্লার চাঁদাবাজি নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করায় ট্রাক-শ্রমিক সভাপতি ছমেদকে পরদিন সকালে কারাগারে যেতে হয়েছে।
তবে শ্রমিক নেতা ছমেদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে জাফলং এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলেও গ্রেফতার করেননি জাফলং বিটের কর্মকর্তা এসআই ওবায়দুল্লাহ।
তাছাড়া ওবায়দুল্লাহর চাঁদাবাজি নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
গত (১৪ই জুন) শনিবার সিলেটে আসেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা । পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান , এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে জাফলং পরিদর্শন শেষে সিলেট শহরে ফেরার পথে অন্তর্বর্তী সরকারের ওই দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ করেন ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় তারা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
বিক্ষোভের কারণ হিসেবে স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলংসহ সিলেটের সব পাথর কোয়ারির ইজারা প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখে সরকার। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্থানীয়রা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
পরবর্তীতে পুলিশ দ্রুত তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ উপদেষ্টারা নিরাপদে হরিপুর গেস্ট হাউজে গিয়ে পৌঁছান।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন ঐ ঘটনার বিষয়ে ও আগে থেকেই অবগত ছিলেন জাফলং বিটের কর্মকর্তা এসআই ওবায়দুল্লাহ।
পরবর্তীতে নিজের চাকুরী বাঁচাতে পরদিন রোববার (১৫ই জুন) রাত ১১টায় গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওবায়েদ উল্লাহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করেন।
মামলায় বহিষ্কৃত গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
সরকার পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করলেও ওবায়দুল্লাহ জাফলংয়ে রাতের আঁধারে বালি-পাথর উত্তোলনকারীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
শ্রমিকরা যখন পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তখন তিনি নিজেই একটি পাথরখেকো চক্রকে প্রতি ফুট ১০ টাকা চাঁদা দেয়ার বিনিময়ে পাথর তুলার অনুমতি দেন।
যারা প্রতি ফুট পাথরে ১০ টাকা চাঁদা দেন, তাদের গোপনে পাথর তুলতে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন পাথর শ্রমিকরা।
জাফলং পিকনিক সেন্টার ওবায়দুল্লাহ সাপ্তাহিক টাকা নেয়ার অভিযোগ আছে। ওবায়দুল্লাহর সাথে রয়েছে চোরকারবারী ও স্থানীয় চাঁদাবাজদের গভীর সখ্যতা।
যার কারণে গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন সীমান্ত হয়ে জাফলং দিয়ে অবাধে চোরাচালানের মালামাল পরিবহণ হয়ে থাকে। তার বিনিময়ে চোরাকারাবারীদের কাছে থেকে মোটা অংকের টাকা নেন ।
একাধিক সাংবাদিক অভিযোগ করে বলেন গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক জাফলংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিট অফিসার (এসআই) মো. ওবায়দুল্লাহকে তার বিট এলাকায় যে কোন ঘটনার সত্যতা জানতে বা তার বক্তব্য নিতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ করেন না এমনকি তাদের কোন তথ্যও তিনি দিতে চান না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওবায়দুল্লাহ ওই এলাকার চোরকারাবারীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করেন।
গোয়াইনঘাট থানার এক কর্মকর্তা বলেন, ওবায়দুল্লাহর ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। গোয়াইনঘাট এলাকায় তার যা খুশি তাই করে।
এব্যপারে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান বলেন, আমি এসআই ওবায়দুল্লাহর ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।
এব্যপারে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগীকে আমার কাছে অভিযোগ দিতে বলেন।
এব্যপারে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটি এসআই ওবায়দুল্লাই ভালো জানেন।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ আমালে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অনুসারী হয়ে কাজ করতে এএসআই ওবায়দুল্লাহ।
সেই সুবাদে একসময় পুলিশে চাকুরি বাগিয়ে নেন তিনি। বিনময়ে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির নাম ভাঙিয়ে দাপটের সহিত কাড়িকাড়ি টাকা কামিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার এলাকার স্থানীয় লোকজন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জাফলংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিট অফিসার (এসআই) মো. ওবায়দুল্লাহকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।