কোম্পানীগঞ্জে পাথর লুট নিয়ে দুই পক্ষে সং ঘ র্ষ: আ হ ত ০৭

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃঃ

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে টিলার জায়গা দখল ও পাথর লুটপাটকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছেন।

 

এই ঘটনায় গতকাল সোমবার (১০ই মার্চ) আহত আব্দুর রহিমের স্ত্রী বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

রবিবার রাতে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের ৬ জনসহ ৭ জন আহতের ঘটনা ঘটেছে।

আহতরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হুঁশিয়ার আলী, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল করিম, মাসুক মিয়া, আবুল হোসেন, আব্দুর রহিম, রমজান আলী। দুপক্ষের মারামারি থামাতে গিয়ে আহত হন বাবুলনগর গ্রামের জুয়েল আহমদ।

 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ৫ই আগস্ট সরকারের পতনের পর থেকে শাহ আরেফিন টিলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা সিন্ডিকেট করে টিলা, মাজারের মাঠ, মসজিদের মাঠ ও কবরস্থান থেকে পাথর উত্তোলন করেছিলেন।

 

এসব জায়গায় পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে টিলা এলাকায় সংঘর্ষ, জালিয়ারপাড় ও শাহ আরেফিন বাজার এলাকায় বেশ কয়েকবার উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

 

রবিবার সকালে শাহ আরেফিন টিলার কবরস্থান থেকে পাথর উত্তোলন করতে কাজ শুরু করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হুঁশিয়ার আলী ও আওয়ামী লীগ নেতা বশর মিয়া গ্রুপ।

এর আগে তারা মাজার মসজিদ মাঠ ও কবরস্থানের বেশিরভাগ জায়গায় থেকে পাথর উত্তোলন করে বিলীন করে দিয়েছেন।

 

কবরস্থান থেকে পাথর উত্তোলনে জালিয়ার পাড়ের মাসুক মিয়ার মাধ্যমে বাধা দেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল করিমসহ জালিয়ার পাড় গ্রামের মুরব্বিরা। এতে হুঁশিয়ার আলী ও বশর মিয়া গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়।

 

এদিন সন্ধ্যার পর মাসুক মিয়া শাহ আরেফিন বাজারে গেলে তার ওপর চড়াও হয় হুশিয়ার-বশর গ্রুপ। এর কিছুক্ষণ পর আব্দুল করিমসহ অন্যরা বাজারে গেলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন।

 

আহতদের মধ্যে আবুল হোসেন, হুঁশিয়ার আলী, আব্দুল করিম, ও জুয়েল আহমদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য
সিলেটে পাঠানো হয়।

 

এসময় শাহ আরফিন বাজারে বেশ কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করে হুশিয়ার-বশর গ্রুপের লোকজন। পরে স্থানীয়রা ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

 

 

গত বছরের ৯ই ডিসেম্বর শাহ আরফিন টিলায় জায়গা দখল নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে পাড়ুয়া মাঝপাড়া গ্রামের আলী হোসেনের লোকজনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হন।

 

এ ঘটনায় গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠে আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমদের লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীনসহ কয়েকজনের নামে মামলা রেকর্ড হয় কোম্পানীগঞ্জ থানায়।

এ সব ঘটনা ছাড়াও শাহ আরফিন টিলায় জমি দখল ও পাথর উত্তোলন নিয়ে ছোট বড় কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রসঙ্গত সরেজমিন দেখা যায়, রাতের আঁধারে সিলেটের সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র থেকে সাদা পাথর ও একইভাবে ধলাই ব্রীজের নিচ থেকে বালু বারকী নৌকা দ্বারা নিয়ে যেতে দেখা যায়।

প্রশাসনের ঢিলেঢালা’ নজরদারির কারণে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও শাহ আরেফিন টিলাসহ পাথর কোয়ারি থেকে নির্বিচারে পাথর লুট চলছে।

কোয়ারিসংলগ্ন নদ-নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। এতে আ.লীগের ও বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতার পৃষ্ঠপোষকতা আছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে হাত বদল হয়েছে চাঁদাবাজি, দখলবাণিজ্য ও চোরাচালানের। আগে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ালেও এবার এই স্থান দখলে নিয়েছেন সুযোগ সন্ধানীরা।

 

নদীতে পাথর বালি লুটপাট, সীমান্তের চোরাচালান, সবকিছুতেই শুরু হয়েছে নতুন মুখের খবরদারি। সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনিক আনুকূল্য। প্রতিদিন আদায় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

 

এসব চাঁদার টাকা বণ্টন হচ্ছে সুষমভাবে। পুলিশ, উপজেলা প্রশাসনের কয়েক ব্যক্তি, স্থানীয় দালাল মাতবর, কথিত সংবাদকর্মী সবাই ভাগ পাচ্ছে নিয়মিত।

 

বিনিময়ে শান্তিপূর্ণভাবে লুট হচ্ছে সরকারি সম্পদ, সীমান্ত দিয়ে বানের পানির মতো নেমে আসছে চোরাই পণ্য। নেই কোনো প্রতিবন্ধকতা কিংবা প্রতিকার।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরিবেশ এবং প্রতিবেশগতভাবে বিপন্ন এলাকা ঘোষিত শাহ আরেফিন এলাকার টিলা ধ্বংস করে পাথর অপসারণে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

 

সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই রাতের আঁধারে চলছে টিলা ধ্বংস করে পাথর লুটের মহোৎসব। লুটপাট নির্বিঘ্ন রাখতে পুলিশের নামে এখানে আদায় হয় মোটা অংকের বখরা। কোম্পানীগঞ্জ থানার একজন এসআই’র নেতৃত্বে এখানকার রাতের সামগ্রিক তত্ত্বাবধান চলে।

তারা জানান, ভোর হওয়ার আগেই লুটকৃত পাথর ট্রাকে করে সদর উপজেলার ধোপাগুল এবং নদীপথে ছাতক দিয়ে স্থানান্তর করা হয়।

 

অনুরূপভাবে ধলাই নদীর সাদাপাথর, দশ নম্বর এবং সংরক্ষিত রেলওয়ে এলাকা থেকে শত শত নৌকা করে পাথর ও বালু নির্বিঘ্নে নিয়ে যাচ্ছে লোকজন।

এসব নৌকা থেকেও পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাঙিয়ে আদায় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এসব লুটপাট ও চাঁদাবাজি নিয়ে পত্রিকায় দৃশ্যমান সংবাদ প্রকাশ না হওয়ায় রমরমা উৎসবমুখর জমজমাটে শুরু হয়ে ওঠে চোরাচালান, পাথর ও বালু লুট।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশের পক্ষ থেকে কুশীলব নির্বাচন করে চোরাই ঘাটের দায়িত্ব দেয়া হয়। এসব ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সীমান্তে দিনেরাতে তৎপর থেকে ভারতীয় চিনি, মাদক এবং গরু সিন্ডিকেটের কাছ থেকে প্রতিদিন আদায় করে মোটা অংকের টাকা।

 

এ সবকিছু প্রকাশ্যে চললেও প্রশাসনের মদত থাকায় এদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলতে সাহস পায় না।

সম্প্রতি এ বিষয় নিয়ে স্থানীয় কয়েক ছাত্র সমন্বয়ক সোচ্চার হলে তাদেরকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন- প্রকাশ্যে দিনের বেলায় লুটকৃত পাথরের ট্রাক আটকে পুলিশ টাকা আদায় করে। সড়কে প্রকাশ্যেই চলে পুলিশের এহেন অপকর্ম।

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, ভাই এগুলো আগে হয়েছে যার কারনে কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআইসহ ১৩ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে, আর সব বিষয় তো আমি একসাথে দেখতে পারবো না,

দুই পক্ষের মারামারির বিষয়ে তিনি বলেন ‘শাহ আরফিন এলাকায় দুই পক্ষের মারামারির খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। আহতরা চিকিৎসাধীন।

 

তিনি আরো বলেন, ‘একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এলাকায় যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ টহল অব্যাহত আছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।