জৈন্তাপুরে চোরাকারবারী চক্রের অমানবিক নির্যাতনের শিকার যুবক,পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ!

বিশেষ প্রতিবেদক::

জৈন্তাপুরে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী চক্রের রোষানলে পড়ে এক গাড়ি চালক অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

ভুক্তভোগীর পিতা জৈন্তাপুরের হেমু ভাটপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছ অভিযোগ করেন,

 

চোরাকারবারীরা পৈশাচিক কায়দায় তার ছেলে সুমন আহমদের হাত পা বেঁধে নির্যাতন করেছে। পরবর্তীতে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

 

এ বিষয়ে তিনি মামলা দায়ের করলেও জৈন্তাপুর থানা পুলিশ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। গতকাল রোববার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তার ছেলে সুমন ডিআই গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।

গত ডিসেম্বর মাসে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে হরিপুর বাজার থেকে চোরাই চক্রের বিপুল পরিমাণ অবৈধ মালামাল আটক করে।

 

এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত চোরাকারবারীরা এই অবৈধ মালামাল গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়ার জন্য তার ছেলেকে সন্দেহ করে। অথচ এ ঘটনায় তার ছেলের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি জানান, এই চোরাকারবারী চক্রের মধ্যে রয়েছে হেমু হাউদপাড়া গ্রামের মো. ইলিয়াছ মিয়ার পুত্র জুবের আহমদ, একই গ্রামের মৃত ফখরুল ইসলাম মোহরীর পুত্র জাহাঙ্গীর আলম, আজিজুর রহমানের পুত্র সোহেল আহমদ ও মৃত হাফিজ মাহমুদ হাসানের পুত্র ইয়াহিয়া মাহমুদ, উপর শ্যামপুর গ্রামের লুদাই মিয়ার পুত্র মো. সালমান আহমদ, লামা শ্যামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের পুত্র ইলিয়াছ মিয়া,

 

আমিন আহমদের পুত্র মো. ফখরুল ইসলাম, মো. রইছ মিয়ার পুত্র মো. সায়েম, শ্যামপুর পাটুয়া গ্রামের মৃত জমসেদ আলী উরফে ছনির মেম্বারের পুত্র লোকমান উরফে লম্বা লোকমান, বাগের খাল দলাইপাড়া গ্রামের হেলাল উদ্দিনের পুত্র আফাজ আহমদ, জুহাইর টুল গ্রামের মুসা মিয়া ওরফে কুটিনার পুত্র নাজিম উদ্দিন,

 

উপর শ্যামপুর গ্রামের লোদাই মিয়ার পুত্র রেজোয়ান, লামা শ্যামপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর পুত্র আমিনুর রশীদ, হেমু ভেলোপাড়া গ্রামের সামসুল হকের পুত্র শাকিল আহমদ, হেমু ভাটোপাড়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের পুত্র জুবের আহমদ, একই গ্রামের মৃত মইন উদ্দিনের পুত্র শাহ আলম সোকাই,

লামা শ্যামপুর গ্রামের সামসুল হোসাইনের পুত্র সোয়েব আহমদ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল কুদ্দুস জানান, গত ২৮শে ডিসেম্বর সন্ধ্যা রাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই চোরাকারবারীরা হরিপুর বাজার থেকে তার পুত্রকে অপহরণ করে শারীরিক নির্যাতন ও খুনের উদ্দেশ্যে একটি প্রাইভেট কারে তুলে লামা শ্যামপুর গ্রামের দিকে নিয়ে যায়।

এ খবর শুনে তিনি বিষয়টি জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশকে জানালে অফিসার ইনচার্জ ( ওসি ) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন আমরা বিষয়টি দেখছি। কিন্ত রাত ১১ টা অতিক্রম হয়ে গেলে ও কোন পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ ।

আবার যোগাযোগ করলে ওসি বলেন, তাকে এখন অপহরণ করা হয়েছে আপনারা অপহরণের মামলা করেছেন। যদি তাকে হত্যা করে ফেলে সমস্যা নাই আমরা হত্যা মামলা নেব।

এ কথা শুনে আব্দুল কুদ্দুছ নিরাশ হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দরবস্ত ক্যাম্পে গেলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিবরণ শুনে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জৈন্তাপুর থানায় যোগাযোগ করেন। তখন পুলিশ জানায় তারা বিষয়টি দেখছে।

এ কথা শুনে সেনাবাহিনীর দায়িত্বরত অফিসার পুলিশকে বলেন, উদ্ধার কাজে আমাদের সহযোগিতা নিতে পারেন। তারপরও সারারাত পুলিশ কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি।

আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, পরে ভোর রাতে অপহরণকারীরা নিজ থেকে জৈন্তাপুর থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করে আমার ছেলেকে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

পরে ঐ দিন দুপুরে আমার ছেলে সুমনকে পুলিশ হেফাজতে সিলেট কোর্টে নেয়া হয়। সেখানে আদালতের নিকট সে জবানবন্দী রেকর্ড করে।

অবশেষে দীর্ঘ সময় পর পুলিশ তার ছেলেকে উদ্ধার করলেও চোরাকারবারী চক্রের কাউকে গ্রেফতার করেনি।

গত ২৯শে ডিসেম্বর রাতেই তিনি বাদী হয়ে উল্লেখিত চোরাকারবারীদের আসামী করে জৈন্তাপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন যাহার মামলা নং ২৫, ২৯/১২/২০২৪। ধারা 364/34 the penal code 1860.

থানায় মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন আসামী গ্রেফতার করেনি।

উল্টো জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান, ও মামলার তদন্তারী কর্মকর্তা এসআই শংকর চন্দ্র দেব চোরাকারবারীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার ছেলের উপর নির্যাতনকারী চোরাকারবারী চক্রকে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশের আইজিপি, সিলেটের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।