নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃ
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় নদীতে নিখোঁজ পাভেল মিয়া (২২) নামের এক তরুণকে নিয়ে রহস্যের ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
গত সোমবার (২রা জুন) রাত ৩টার দিকে একদল লোক পাভেল মিয়াকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে পিয়াইন নদীতে যান।
সেখানে তাঁদের উদ্দেশ্যে ছিলো পুলিশের নাম ভাঙিয়ে নৌকা থেকে চাঁদার টাকা আদায় করা। কিন্তু সবাই ঘরে ফিরে আসলেও পাভেল আর ঘরে ফেরেনি।
নিখোঁজ পাভেল মিয়া গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বাউরবাগের আলোচিত চাঁদাবাজ মহরম আলীর ছেলে।
তবে স্থানীয়রা ধারনা করছেন চাঁদার লাইন বা পূর্ব বিরোধের জেরে ধরে পাভেলকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে।
নদীতে নিখোঁজ পাভেলকে রাতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল কারা ? আর কারা পাভেলের সাথে ছিল? এখন এই প্রশ্নটিই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে ।
জানা যায়, উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বাউরবাগের ‘আলোচিত চাঁদাবাজ’ মহরম আলীর ছেলে পাভেল দীর্ঘদিন ধরে জাফলং এলাকায় গভীর রাতে তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী নৌকার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন।
সেই সুবাদে গত সোমবারও তার বাড়িতে গিয়ে ৮-১০জন লোক তাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে পিয়াইন নদীতে চাঁদা আদায় করতে যান।
কিন্তু তার সাথে থাকা সবাই ফিরলেও পাভেল পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন বলে তাঁর আত্মীয়রা জানান।
তাঁর মৃত্যু নিয়ে একদল কথিত সাংবাদিক অপসাংবাদিকতায় লিপ্ত হয়েছেন। তারা পাভেলকে মৃগী রোগী এবং পানিতে পড়ে সকাল ১০টায় নিখোঁজ হয়েছন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রচার করেন সেই সংবাদে রহস্যজনক কারণে পাভেল মিয়ার পিতার নাম মহরম আলীর পরিবর্তে করম আলী হিসেবে লিখা হয়।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেসকল কথিক সাংবাদিক ফেসবুকে পাভেল পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন বলে স্ট্যাটাস দেন সেখানে অনেকই পাভেল চাঁদাবাজিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন।
তবে কারা তাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে জাফলং পিয়াইন নদীতে চাঁদা আদায় করতে নিয়ে গিয়েছিলো সে ব্যাপারে কেউ মুখ খুলছেন না।যা এখনো রয়েছে অমীমাংসিত।
তবে পাভেলের লাশ উদ্ধার হওয়ার আগেই রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনাকে ধামচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় একটি চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে জাফলং এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, লাইনের চাঁদাবাজির টাকার ভাগাভাগি বা তাঁর পজিশন নিতে পাভেলকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে তার সাথে থাকা চাঁদাবাজরা।
তিনি জানান রাত ২ থেকে ৩টার দিকে ঘটনা ঘটেছে। যদি সকাল ১০টায় পাভেল মিয়া পানিতে পড়ে ডুবে যেত তাহলে হাজার হাজার মানুষ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যেত।
তবে রাধানগর-মধ্য জাফলংয়ের সাবেক চোরচালানের লাইনম্যান সাইদুর রহমান ও একদল কথিত সাংবাদিক নামধারী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট পাভেলের রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে দৌঁড়ঝাপ করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাদিকুর রহমান নামের এক সাংবাদিক স্ট্যাটাস দেন ‘গোয়াইনঘাট জাফলং নদীতে পড়ে এক মৃগী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।’
তাঁর এই স্ট্যটাসের নিচে এসে কেএম হেলাল আহমদ নামের এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন ‘শুনলাম চাদা তুলতে গিয়ে নিখোঁজ’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক জানান, পাভেল মিয়া লাইনের ডিউটিতে গিয়েছিলো, তাঁরপর নিখোঁজ হয়। তাঁর সাথে আরো লোকজন ছিলো।
পাভেল নিখোঁজের ঘটনায় রাধানগর-মধ্য জাফলংয়ের সাবেক চোরচালানের লাইনম্যান সাইদুর রহমান জানান, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
তবে বৈঠক করে ধামাচাপার ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্ষেপে গিয়ে ফোন কেটে দেন সাইদুর রহমান।
নিখোঁজ পাভেল মিয়ার চাচা আহমদ আলী জানান, একদল লোক গত সোমবার (০২রা জুন) গভীর রাতে ৮-১০জন লোক আমার ভাতিজাকে ঘর থেকে থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তাঁরপর শুনি পাভেল নদীতে ডুবে নিখোঁজ হয়ে গেছে।
তিনি আরো জনান, নিখোঁজের ঘটনায় রাধানগর বাজারে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেই বৈঠকে এখনো পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে সকালে সিদ্ধান্ত আসলে আমরা আপনাকে জানাবো।
পাভেল মিয়ার চাচা আহমদ আলী’র কাছে তার ভাইয়ের মুঠেফোন নাম্বর খোঁজলে তিনি তার ভাইয়ের নাম্বর জানেন না বলে জানান।
এদিকে গোয়াইনঘাট রিপোর্টার্স ক্লাবের এক কথিত নামধারী সাংবাদিক নিখোঁজ পাভেল মিয়ার লাশ ২৪ ঘন্টার ভেতর পাওয়া যাবে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলেও এখনো পাভেল মিয়ার মরদেহ পাওয়া যায়নি।
পাভেল মিয়ার মরদেহ ২৪ ঘন্টার ভেতর পাওয়া যাবে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা এই ব্যক্তির নাম আব্দুর রহিম যিনি নিজেকে খুব বড় মাপের সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে বেড়ান।
পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় এই কথিত নামধারী সাংবাদিক বিভিন্ন সময় পুলিশলীগের সহযোগীতায় অবৈধ ভারতীয় পণ্যের ব্যাবসা ও পুলিশের নামে ভারতীয় অবৈধ পণ্যের গাড়ী আটকিয়ে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজীতে লিপ্ত থেকে কামিয়েছেন প্রচুর টাকা,
ভারতীয় অবৈধ পণ্যের গাড়ী আটকিয়ে চাঁদাবাজীর সময় চোরাকারবারীদের হতে গনধোলাইয়ের স্বীকারও হয়েছেন কয়েকবার । যার একাধিক ভিড়িও চিত্র ‘সুরমা টাইমস’ কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত আছে ।
স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি পাভেল নিখোঁজ হওয়ার পেছেনে এই কথিত নামধারী সাংবাদিক আবদুর রহিমের হাত রয়েছে বলে ধারণা করেছেন। তারা অবিলম্বে রহিমকে আটকের দাবিও জানান।
এব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদ জানান, পাভেল পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন। এই ব্যাপারে তদন্ত অনুযায়ী আইনানোগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।