এবার অপসারিত হচ্ছেন দেশের ৪৫৭১ ইউপি চেয়ারম্যান
সুরমা টাইমস ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রসহ জেলা ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের অপসারণ করেন। বাংলাদেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এবার সরানো হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের। এ জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ কাজ শুরু করেছে। সারা দেশের ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারণের জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের আগামী বৈঠকে তোলা হতে পারে বলে জানা গেছে। জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। তবে তৃণমূলে সাধারণ নাগরিকদের সেবার কথা বিবেচনা করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)-এর চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দল সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যানদের অধিকাংশই আত্মগোপনে রয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এসে নাগরিকরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। তৈরি হয়েছে অচল অবস্থা। সে কারণে ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে এবার প্রশাসক বসানোর পরিকল্পনা চলছে। চলতি সপ্তাহেই এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন হতে পারে বলে জানা গেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, সারা দেশের অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের একটা সারাংশ তৈরি করা হয়েছে। এটা উপদেষ্টা পরিষদে পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হবে। উপদেষ্টা পরিষদ অপসারণের সিদ্ধান্ত দিলেই স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের আইন অনুযায়ী, পদত্যাগ করলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যপদ শূন্য হবে। এ ছাড়া পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কারণে চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলে নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবে। তবে শূন্য হওয়া ছাড়াও আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি বা দন্ডিত হলে, পরিষদের স্বার্থ পরিপন্থি কাজ করলে- চেয়ারম্যানদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে সরকার। এ ছাড়াও দুর্নীতি, অসদাচরণ বা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধ কিংবা বিনা অনুমতিতে দেশত্যাগের কারণে ইউনিয়ন পরিষদ আইন অনুযায়ী তাদেরকে অপসারণ করতে পারে সরকার। জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত অনেকেই চলে যান আত্মগোপনে। তাদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অনেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন খোলা থাকলেও অনেক জায়গায়ই নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানরা পরিষদে যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানরা যে সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন, সে সব জায়গায় তালাও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের অনেক জায়গায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন। সারা দেশের বেশ কিছু জেলায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে মিছিল কিংবা পরিষদ ঘেরাওয়ের কর্মসূচিও চলছে।
সম্প্রতি ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, জাতীয় থেকে স্থানীয় সরকার সব পর্যায়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। দলীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ কর্তৃত্ব, জনবল, আর্থিক সামর্থ্য ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে স্থানীয় জনগণকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হয়। বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাগুলো অত্যন্ত প্রকট। এ প্রসঙ্গে সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘নাগরিক সেবার বিষয়ে যেখানে জড়িত সে জায়গায় সরকার চাইলে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে। যেহুতু অনেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন। নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে, সে কারণে সরকার চাইলে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে। এটাই প্রথম নয়, এর আগেও ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের ঘটনাও আছে।’