হোমায়রা হিমুর মৃত্যু: অবশেষে লাইভে এসে যা বললেন মিহির
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। ইতিমধ্যে সে রহস্য উদঘাটন করতে অভিনেত্রীর প্রেমিক জিয়াউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, র্যাবের ঘেরাটোপে রয়েছে মেকাপ আর্টিস্ট মিহিরও।
হোমায়রা হিমুর মৃত্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলেছেন মিহির নামের এক ব্যক্তি।
এই মিহির শুধু অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুই নয় ২০১৮ সালের মে মাসে বিনোদন জগতের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তাজিন আহমেদের মৃত্যুর সময়ও পাশে ছিলেন। এমনকি দুজনকে হাসপাতালে নেয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসকের মৃত ঘোষণা পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন মিহির। এককথায় তাদের পুরো মৃত্যুর ঘটনাটি দেখেছেন একজন মেকআপম্যান।
আজ রবিবার (৫ই নভেম্বর) ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে হিমুর বাসায় প্রেমিকের উপস্থিতি, মৃত্যুর সময়কার ঘটনা ও নিজের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে শোনা যায় মিহিরকে।
মিহির মোমোন রিয়াল নামের ফেসবুক আইডি থেকে রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লাইফ সম্প্রচার করা হয়।
ভিডিওতে নিজেকে হিমুর মেকআপম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন মিহির। ১০ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওর শুরুতেই মিহির তাঁর মানসিক অবস্থার কথা তুলে ধরেন। বলেন, হিমুর মৃত্যুর পর তাঁকে (মিহির) জড়িয়ে ফেসবুকে অনেকে বিরূপ মন্তব্য করছেন। এগুলো তাঁকে মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছে।
তিনি নিজে কোনো অপরাধ করেননি। কোথাও পালিয়েও যাননি। বরং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে হিমুর স্বজনদের সাহায্য করেছেন।
ভিডিওর একপর্যায়ে হিমুর উত্তরার বাসায় প্রেমিকের উপস্থিতির প্রসঙ্গ তোলেন মিহির। তিনি বলেন, ‘হিমুর সাথে কোনো কিছু হইছে। দুর্ভাগ্যবশত আমি তা দেখতে পারি নাই। অন্য রুমে ঘুমায়ে ছিলাম। তবে ওর বয়ফ্রেন্ড ছিল রুমে। আমি ধারণাও করিনি ও হিমুর সাথে ঝগড়া করবে বা খুনোখুনি হয়ে যাবে, মারামারি হবে।
মিহির বলেন, ‘ও (বয়ফ্রেন্ড) যখন আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে দেখাইছে, তখন আমি তাকে প্রশ্ন করছিলাম, আপনি রুমে থাকতে ঘটনা কিভাবে ঘটল। তখন বলে, সে বাথরুমে ছিল। একটা মানুষ বাথরুমে থাকবে আর আরেকটা মানুষ ফাঁসি দিয়ে ফেলবে- এটাও আমি মেনে নিতে পারতেছিলাম না। আমি কোনো কিছুই মেনে নিতে পারতেছিলাম না।’
ভিডিওতে মিহির বলেন, ‘আমার মনে হয়, হিমু ফাঁসি দিতেই পারে না। হিমু ফাঁসি দেয় নাই। হিমু এত স্ট্রং।’
নিজেকে ঘটনার রাজসাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করে মিহির বলেন, ‘আমি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সাক্ষী দিয়ে আসছি। কিন্তু এখন নতুন করে আমাকে নিয়ে ফেসবুকে যা শুরু হয়েছে, সেগুলো মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমি হতাশায় আছি। আমি যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটাই সেটার জন্য পুরো মিডিয়ার মানুষ দায়ী থাকবে। যারা উঠে-পড়ে লাগছেন তারা দায়ী থাকবেন।’
তাজিন আপা মরছে আমি ছিলাম, হিমু মরছে আমি ছিলাম এ বিষয়টি আপনাদের ভাবিয়ে তুলছে জানিয়ে মিহির বলেন, এই পাঁচ বছরের ব্যবধানে দু’জন মানুষ মরছে আমি ছিলাম। এরা আমার নিকটআত্মীয় ছিল, ফ্যামিলি মেম্বারের মতো। তাজিন আপা আমাকে বলত মুন্নার সঙ্গে আমার যখন বিয়ে হইছে তোর মতন ছেলে হইত আমার। তাজিন আপা আমাকে নিজের ছেলের মতো সম্বোধন করতো। তাজিন আপার বাসায় ছিলাম বলে আমি আপাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছি। চিকিৎসা করাইছি।
চিকিৎসা করতে গিয়ে উনি তিন-চার ঘণ্টা, পাঁচ ঘণ্টা পরে মারা গেছেন। আর না হলে তো তাজিন আপা স্ট্রোক করে বাসায় মরে পড়ে থাকত। সাতদিন ধরে দরজা বন্ধ থাকত পরে লাশ বাহির করতে হইত। আপনারা খবর পাইতেন। আমি ছিলাম বলে এরকম কিছু হয়নি। এটা কেউ বলে না যে, তুই ছিলি বলে আমরা তাজিন আপারে ফ্রেশ তরতাজা দাফন করতে পারছি।
মিহির বলেন, হিমু মরছে আমি ছিলাম। এখন আমি করছি না ওই ছেলে করছে সেটা তো ওই ছেলে নিজেই স্বীকার করছে। তারপরও কেন আপনাদের ভেতর এতো দ্বিধাদ্বন্দ্ব যে মিহির ছিল। মিহির ছিল বলেই তো ফ্রেশ হিমুরে বের করে হাসপাতালে নিয়ে আসছে। আমি উপকার করছি এই জন্য আমাকে সকলে মিলে ফাঁসি দিয়ে দেন। আমার কেউ নেই তো, কোনো বড় লেভের মানুষ নেই যে আমাকে সাপোর্ট দিবে, ব্যাকআপ দিবে। আমি মনে করতাম মিডিয়া আমার ফ্যামিলি, আমি কাজ করি, সবাই আমার পরিবার, আমি যখন যেখানে কাজ পাই তাদের জন্য মন থেকে কাজ করি। এমনকি অতিরিক্ত কাজও করে দেই। তাদের যে কাজ আমার করার না এগুলোও আমি করি শুটিংয়ের সেটে। আমি সেটে সবাইকে আপন করার চেষ্টা করি। সবাইকে ভালো করে সার্ভিস দেই। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি এত বছরের সার্ভিসে। আমার ভুলটা কোথায় একজন বের হন, একজন গাইড করেন আমাকে। তা না খালি আমাকে নিয়ে বড় বড় কথা আর বদনামি করবেন, করেন। আমি যদি কোনো ধরণের খারাপ কাজ করতাম তাহলে ভয়ে পালাইয়া যাইতাম। আমার ভেতরে ভয় লাগে না। আমার ভেতরে ঘেন্না লাগছে, ভেতরে কষ্ট হচ্ছে। আপনাদের জন্য মায়া হচ্ছে যে, আপনারা এতটা নেগেটিভ যে আপনারা মানুষকে নিয়ে ভাবতে পারেন না। মানুষের সাহায্য করতে পারেন না।
মিহির আরো বলেছেন, ‘ডিবি, র্যাব, পুলিশের যেকোনো কর্মকর্তা যে কোনো মুহূর্তে আমাকে ফোন দিলে আমি হাজির হব। আমি কোথাও পালাব না। পালিয়ে যাওয়ার ছেলে আমি না। আমি কোনো ধরনের ক্রাইম করিনি।’