সুনামগঞ্জে কথায় ও গানে অকালপ্রয়াত পাগল হাসানকে স্মরণ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃ

বাঁশের খুঁটি ও ছনের তৈরি দোচালা ঘর আর খোলা প্রান্তরে শত শত মানুষ—সবাই এসেছেন অকালপ্রয়াত সংগীতশিল্পী মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসানকে স্মরণ করতে।

গত শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চ ‘পাগল হাসান কুঞ্জে’ অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পাগল হাসানকে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর সুনামগঞ্জের শিল্পীরা পরিবেশন করেন তাঁর ‘কার আসমানে উড়রে আমার মন পিঞ্জিরার পাখি’, ‘মানুষ মইরা গেলে কদর বাইড়া যায়’, ‘ও বন্ধুরে আমার বাড়ি রইল নিমন্ত্রণ’সহ আরও অনেক জনপ্রিয় গান।

আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল। সভা সঞ্চালনা করেন নাট্যজন দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী।

 

বক্তব্য রাখেন জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুরুল হক, বংশীবাদক কুতুব উদ্দিন, সাংবাদিক লতিফুর রহমান, পাগল হাসানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সুনামগঞ্জ কালচার ফোরামের সদস্যরা।

 

আলোচনায় বক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জে অনেক বিখ্যাত বাউল-সাধকদের জন্ম। পাগল হাসান তাঁদের যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন।

 

মরমি ভাবধারার অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী তিনি। তাঁর গানগুলো ধরে রাখতে হবে। তিনি তাঁর সৃষ্টি, গানের মাধ্যমেই মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

 

২০২৩ সালের ১৮ই এপ্রিল মাত্র ৩৩ বছর বয়সে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান পাগল হাসান। তাঁর স্মরণে ছাতকের বাড়িতে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন হয়।

 

দুর্ঘটনাস্থলে নির্মিত ‘পাগল হাসান চত্বরে’ গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয় স্মরণোৎসব। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর। হাসানের সঙ্গে তাঁর ছিল ব্যক্তিগত সখ্য।

ছাতকের শিমুলতলা গ্রামের সন্তান হাসান ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বড় হন। গানে ভালোবাসা থেকেই গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব ব্যান্ড ‘পাগল এক্সপ্রেস’। তাঁর গানে ছিল গভীর দুঃখবোধ আর মায়াভরা সুর, যা তাঁকে মানুষের হৃদয়ে অমর করে রাখবে।

 

হাসান সহজ কথায় গান লিখতেন। সেই গানের কথা অগণিত মানুষের মনের কথা হয়ে প্রকাশ পেত। তার গানের ভাব ও দর্শনে প্রেম, আধ্যাত্মিকতার অনবদ্য প্রকাশ ছিল। অল্প বয়সে তার যে অর্জন সেটি অনন্য, অসাধারণ।

 

তার জনপ্রিয় কিছু গান হলো- ‘আসমানে যাইওনারে বন্ধু ধরতে পারবো না/ পাতালে যাইওনারে বন্ধু ছঁইতে পারবো না…, জীবন খাতায় প্রেম কলঙ্কের দাগ দাগাইয়া/ ছাড়িয়া যাইওনারে বন্ধু মায়া লাগাইয়া…, মানুষ মইরা গেলে কদর বাইড়া যায়, বাঁইচা থাকতে নিকৃষ্ট কয়, মরলে শ্রেষ্ট পদক পায়…, দুইদিনের সংসারি আর মিছা দুনিয়াদারি/ তোর চরণে দিলাম বিকাইয়া…, কইরো ঘৃণা যায় আসে না/ তবেই যাবে মনের তাপ/ আল্লাহর ওয়াস্তে কইরা দিও মাপ…,  জানতাম যদি তোমার পিরিত কচুপাতার পানি/ তবে কি আর কুল হারাইয়া হইতাম অপমানিরে বন্ধু…,

 

দেহ কুপির তেল ফুড়াইবে, জ্বলবে না রে বাতি, অনন্তকাল একলা রইবে, হইবে না কেউ সাথী…, নদীর বুকে চান্দে খেলায়/ জলের বুকে মিন/ পাগল হাসানের বুকেতে দুঃখ সীমাহীন…, ভব যাতনার ডাব্বা লইয়া ঘুইরা বেড়াই নিশিদিন, জীবন আমার রেলগাড়ির ইঞ্জিন…, ও পাখিরে, কে দিল রে তোর পায়ে শিকল, তোর মনে কি দুঃখ নাইরে, নাই নয়নে জল…।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।