গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে আয়নাঘর পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা

সুরমা টাইমস ডেস্ক :

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের কুখ্যাত আয়নাঘর নামে পরিচিত শেখ হাসিনা সরকারের টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গতকাল বুধবার রাজধানীর কচুক্ষেত, আগারগাঁও এবং উত্তরা এলাকার তিনটি গোপন কারাগার পরিদর্শন করেন ড. ইউনূস। যেগুলো স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টর্চার সেল এবং গোপন বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহার হতো।

পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম, গুম তদন্ত কমিশন ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাসহ আয়নাঘরে গুম হওয়া ভুক্তভোগীরা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো ছবিতে দেখা যায়, অধ্যাপক ইউনূস গোপন বন্দীশালার বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখছেন।

এর আগে, গত ৬ই ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়— দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আয়নাঘর পরিদর্শনে যাবেন।

প্রধান উপদেষ্টাসহ উপস্থিত প্রতিনিধিরা সেখানে ইলেকট্রিক চেয়ারসহ নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ দেখতে পান। ভুক্তভোগীরা তাদের নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনার শাসনকালে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরেক তথ্যে বলা হয়, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৪৪ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়।

তাদের মধ্যে ৪০ জন ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে গ্রেফতার অবস্থায় পাওয়া গেছে।

যারা দীর্ঘদিন গুম থাকার পর ফিরে আসেন, তারা গুমের ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করেছেন। ধারণা করা হয়, এসব মানুষদের গুম করে রাখা হয় আয়নাঘরে।

অভিযোগ রয়েছে, আয়নাঘরেই বন্দি ছিলেন, অধ্যাপক মোবাশার হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়, মাইকেল চাকমা ও মীর আহমদ বিন কাসেমসহ অনেকে।

গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনের সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান,

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ‘বিশেষ’ স্থানে রাখা হতো।

এ নিয়ে সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এসব স্থান ‘আয়নাঘর’ নামে প্রকাশ্যে আসে।

গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর আয়নাঘর থেকে ফিরে আসেন পরিবারের কাছে। তাদের বয়ানে উঠে এসেছে আয়নাঘরের ভয়াবহতা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।