এবার হাইটেক পার্ক বাতিল, ভেঙে গেছে কর্মসংস্থানের স্বপ্ন
সুরমা টাইমস রিপোর্ট : সিলেটসহ চার জেলার হাইটেক পার্ক প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকরা। সম্প্রতি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারা এবং প্রকল্পের অগ্রগতি কম হওয়ায় সম্প্রতি এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। ফলে হাইটেক পার্ক ঘিরে কর্মসংস্থানের যে স্বপ্ন দেখছিলেন সিলেটবাসীর স্বপ্ন ভেঙে গেছে। সিলেট ছাড়াও হাইটেক পার্কের প্রকল্প যেসব জেলায় বাতিল হতে যাচ্ছে সেসব জেলার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও কুমিল্লা।
সিলেটে হাইটেক পার্ক স্থাপিত হলে প্রায় ৬০ হাজার দক্ষ-অদক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়।
জানা গেছে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্ণি এলাকায় প্রায় ১৬৩ একর জায়গা জুড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়ন কাজ করছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বাহাটেপাক)। ইতোমধ্যে প্রকল্পটিতে মাটি ভরাটসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ শেষ হয়েছে।
কিন্তু হাই-টেক পার্কের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হলেও প্রকল্পের কাজের খুব কমই নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হয়েছে। কাজের অগ্রগতি কম হওয়ায় বাদ পড়তে চলেছে এই প্রকল্প।
২০১৬ সালের ৮ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩৩৬ কোটি টাকা। প্রথমে প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর। পরে মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে শুরু হওয়া জেলা পর্যায়ে আইটি/হাই-টেক পার্ক স্থাপন সিলেটসহ ১২টি জেলায় প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সাত বছর পরেও প্রকল্পটির তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে, প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি মাত্র ৩৬ শতাংশ হয়েছে এবং চারটি জেলায় প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩ শতাংশ।
৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়া হাইটেক পার্কগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা ও সিলেট। প্রকল্পের অগ্রগতি অত্যন্ত কম হওয়ায় এই চার জেলার হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ বাতিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব জেলায় প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩ শতাংশ হওয়ায় সরকার মনে করছে, এই চারটি জেলা বাদ দিলে প্রকল্পের ব্যয় কমবে এবং সরকারের ওপর চাপ কিছুটা হ্রাস পাবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ৯ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) রেহানা পারভীনের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) একটি মিটিং আয়োজন করেছে। সেখানে প্রকল্পের ব্যয় কমানোর জন্য বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ঠিক করে দিলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রকল্পের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এ কে এ এম ফজলুল হক বলেন, এই সিদ্ধান্তটি নেওয়ার জন্য পুনরায় পিইসি মিটিংয়ে আলোচনা করতে হবে। কারণ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় অংশীদারও রয়েছে। এই বিষয়ে ইআরডি’র মাধ্যমে ত্রিপক্ষীয় মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর ইআরডি, প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থা এবং ভারতীয় অংশীদারদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির যে প্রস্তাবনা ছিল, তা এখন আর প্রযোজ্য নয়।
ফজলুল হক বলেন, যদি চারটি সাইট বাদ পড়ে তাহলে প্রকল্পের ব্যয় কমবে এবং জিওবি পার্টের ব্যয়ও হ্রাস পাবে। এর ফলে সরকারের আর্থিক চাপ কিছুটা কমে আসবে। জিওবি পার্টের ব্যয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর কথা ছিল, তবে তা এখন অর্ধেকে নেমে আসবে। এর মধ্যে ১৭৮৩ কোটি টাকা সিডি ভ্যাট (ভারত থেকে মালামাল আনার জন্য সরকারকে পরিশোধ করতে হয়) অন্তর্ভুক্ত ছিল। সিডি ভ্যাটটি কমিয়ে আনলে সরকারের প্রায় ১,৩০০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে।