সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরিফের দাবি::
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দাবি করেছেন- ‘সারাদেশের অন্য নগরভবনগুলোর সাথে তুলনা করলে সিলেটের সাথে চরম বৈষম্য করা হচ্ছে।
মহানগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অর্থ বরাদ্দ না থাকার কারণে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র প্রদান না করার কারণে আটকে আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় সিলেট নগরভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘সিলেটে ঘনঘন ভূমিকম্প; দূর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি উত্থাপন করেছেন।’
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের মতে সারাদেশের মধ্যে সিলেট ভূমিকম্পের ডেঞ্জারজোনে রয়েছে। গতবছরে এক সপ্তাহের মধ্যেই ৭/৮ বার ভূমিকম্প হয়েছে। সবার মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা রয়েছে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
এমন পরিস্থিতির যদি সৃষ্টি হয় তবে যাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় সে লক্ষ্যে তারা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা যাতে ১৫/১৬ তলা ভবনগুলোতে রেসকিউ করা যায় আর নগরজুড়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতে পর্যাপ্ত খোলামাঠের ব্যবস্থা রাখা। সিলেটের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে পারছে না শুনেছি তাদের এসব রাখার জায়গা নাই।
আর সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে ৪টি গরুর হাট ও ৪টি খেলার মাঠের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। যা যা করার সবকিছু প্রস্তুত করে প্রপোজাল পাঠানো হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে সেগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারতাম। কিন্তু সেটাও অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে এমন কেউ বাকি নাই যাদের কাছে ধর্না দেইনি। সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে উদাসীন।’
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নগরবাসীর জন্য ইচ্ছে স্বত্ত্বেও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে পারছে না সিসিক। এর পিছনে দায় নগরভবনের নয়। নগরভবন যা যা করার সব প্রস্তুত করে আজ থেকে ৪ বছর আগে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যানের জন্য প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। জমি অধিগ্রহণসহ সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধুমাত্র একনেকে উঠবে। অনুমোদন হবে।
কিন্তু এটা দীর্ঘসূত্রিতার বেড়াজালে পড়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছেও গিয়েছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জোরালো অনুরোধের পরও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আটকে আছে। এখন তারা বলছেন সিলেটে ওয়াসা হয়েছে। ওয়াসার কার্যক্রম চালু হলে তারাই এসব দেখবে।
কিন্তু ওয়াসা কবে কাজ শুরু করবে সেটার কোনো নির্দেশনা নাই। তাদের লোকবলও নিয়োগ দেয়া হয়নি। না এমডি, না চেয়ারম্যান। এসব হতে আরও ৩/৪ বছর লেগে যাবে হয়তো। এতোদিন নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি কিভাবে সরবরাহ করবে? কে সরবরাহ করবে? সিসিকের সীমানা বেড়েছে। দায়িত্ব বেড়েছে। মানুষের চাহিদা বেড়েছে।’ এজন্য অনতিবিলম্বে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
টানা দুই মেয়াদে দায়িত্বরত এই নগরপিতা বলেন, বর্তমানে সবকিছুর দামই আকাশছোঁয়া। বাড়তেই আছে। আগে যেটা ১০টাকা ছিল সেটা এখন ৯০টাকা। আগে যে প্রকল্পব্যয় ৫ হাজার কোটি টাকা ছিল এখন সেটা গিয়ে ১৫ হাজার কোটিতেও সংকুলান করা যাবে কি না সন্দেহ আছে! এরমধ্যে যদি ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসে তখন তো বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষের প্রাণ যাবে। এ দিকে দায়িত্বশীলদের দ্রুত দৃষ্টি দিতে হবে।
মেয়র আরিফুল হক বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আবদুল মোমেন এ বিষয়ে চার-চারটি ডিও লেটার দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। যেভাবে আছে সেখানেই রয়ে গেছে। সিলেটের কথা আসলেই কিছুই হয় না।
অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থার কথা উঠে আসে। অথচ দেখেন গত কয়েকটা একনেকে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমাদের সাড়ে ৪/৫ হাজার টাকার অতীব জরুরি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি অনুমোদন হলো না। নগরের বর্ধিত এলাকাতে জনগণকে সেবা দেয়ার রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা চেয়েছি। সেটাও হলো না।
মেয়র জানান, ভূমিকম্প বা অন্য যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সিলেট নগরভবনের ৬ষ্ট তলাতে একটি অত্যাধুনিক মনিটরিং হল স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে বিশে্বর সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক সকল যন্ত্রপাতি।
কিন্তু যদি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভূমিকম্প হয় তবে রেসকিউ করার জন্য কোনো কাজই আগ বাড়ানো যাচ্ছে না। না ফায়ার সার্ভিসকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। না নগরীতে খোলা মাঠ প্রস্তুতের বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভাঙতেও বাঁধার মুখো পড়তে হচ্ছে নগরভবনকে।
মামলা-মোকদ্দমা মোকাবেলা করেও থেমে নেই কাজ। আমি নগরবাসীকে প্রকৃত অবস্থা জানালাম। প্রয়োজনে আমি ডিও লেটারগুলোও অফিসে অফিসে পাঠাবো। আপনারা এসব প্রকাশ করুন।
যাতে মানুষ আমাদেরকে দায়ী না করেন। নগরভবন যা যা করার সবকিছুই করেছে। বাকিটা উপরের লোকদের দায়িত্ব। তারা যেনো পূণ্যভূমির প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখেন। তারা যেনো ডেঞ্জারজোনে থাকা সিলেটবাসীর দুশ্চিন্তা লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
মেয়র সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।