বৈষম্য ষড়যন্ত্রে নৃ তাত্ত্বিক জাতিসত্তার পরিচয়,অস্তিত্ব গভীর হুমকির মুখে

সুরমা টাইমস রিপোর্ট :

দেশের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র নৃ—গোষ্ঠীর অবদান ইতিহাস বিদিত। অথচ সেই তারাই নানা বৈষম্যের শিকার, নানামুখি হুমকিতে।

বিপন্ন হওয়ার পথে তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি। বৈষম্য আর নানা ষড়যন্ত্রে নৃ—তাত্ত্বিক জাতিসত্তার পরিচয়—অস্তিত্ব গভীর হুমকির মুখে। বৈষম্য কারো কাম্য হতে পারেনা।

 

বৈষম্যহীন দেশ—জাতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সভ্যতার শুরু থেকে যে লড়াই শুরু হয়েছিল সে লড়াই এখনও চলছে।
যুগে যুগে প্রাণ দিয়েছেন অনেক মানবতাবাদি—দেশপ্রেমিক।

 

বৈষম্যের অবসান না হলে সেসব শহীদানের প্রতি অবমাননা হবে। সেদিকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের গভীর দৃষ্টি দেয়া জরুরি।

 

সরকার নিবন্ধিত বাংলাদেশের মণিপুরীদের প্রাচীনতম অভিভাবক সংগঠন মণিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতির ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

 

সংগঠনের সিলেট জেলা শাখার আয়োজনে সিলেট নগরীর ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্ণালিস্ট এসোসিয়েশনের মিডিয়া কনফারেন্স হলে এই আয়োজন করা হয়।

 

গতকাল শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মসকস সিলেট জেলা শাখার সভাপতি রোটারিয়ান নির্মল কুমার সিংহ।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম সিংহের পরিচালনায় অতিথি বক্তা ছিলেন, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্ণালিস্ট এসোসিয়েশন ইমজা’র সভাপতি, যমুনা টেলিভিশনের আশরাফুল কবীর, সাধারণ সম্পাদক, একাত্তর টেলিভিশনের সাকিব আহমদ মিঠু, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দেবানন্দ সিনহা,

 

ইমজার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মঈনুল হক বুলবুল, ইমজা নিউজ ডটকম’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী, এনটিভির সজল ছত্রী ও আনিস রহমান, ডিবিসি নিউজ’র প্রত্যুষ তালুকদার, বাংলা টিভির সিলেট বিভাগীয় অনলাইন প্রেসক্লাবের সহ সাধারণ সম্পাদক এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়া, মসকস সিলেট জেলা শাখার সহসভাপতি দীপাল কুমার সিংহ, ডা: উচিত কুমার সিনহা, মণিপুরী নেতা মিলন কুমার সিনহা জ্যোতি,

 

সুশীল বাবু সিংহ, প্রকৌশলী লিপু সিংহ, রনজিত সিংহ, উজ্জল সিংহ, নারী নেত্রী রোটারিয়ান শান্তি রাণী সিনহা, সহ সম্পাদিকা আরতি সিনহা, সিলেট মহানগরের প্রান্তিক সিনহা।

 

সভায় বক্তারা মণিপুরী তথা নৃ—তাত্বিক জনগোষ্ঠীর কিছু দাবি যাচাই বাছাইক্রমে প্রকৃত মণিপুরীসহ নৃ—গোষ্ঠীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভুক্তকরণ এবং তাদের বঞ্চিত পরিবারদের অধিকার প্রতিষ্ঠা।

 

মণিপুরী অধ্যুষিত মৌলবীবাজারের কমলগঞ্জস্থ মণিপুরী ললিতকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল ও ঐতিহাসিক বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, মহান ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও অংশগ্রহনকারী বীর মণিপুরী মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকা খচিত ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ নির্মাণ।

মণিপুরীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত জেলা—বিভাগ ছাড়াও রাজধানী ঢাকায় সমন্বিত ‘ইনডিজিনাস কালচারাল ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা।

 

যা দেশের রাজধানীতে নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর পরিচয় বহনের পাশপাশি বৈচিত্রময় সংস্কৃতি বিকাশে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেন্দে্রর ভুমিকা পালন করতে পারে।

 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত সিলেট নগরীর মাছিমপুরে নির্মাণাধীন ‘রবীন্দ্র স্মৃতি ভাষ্কর্য’ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও কবিগুরুর নামে কালচারাল একাডেমী প্রতিষ্ঠা।

মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার জনগোষ্ঠীকে নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা দানের ব্যবস্থা ও নিজ নিজ মাতৃভাষায় সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যম প্রকাশ—প্রচারের অধিকার প্রদান।

 

দেশের রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে রুটিন মাফিক সকল সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার জনগোষ্ঠীকে নিজ নিজ মাতৃভাষায় সংক্ষিপ্ত সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচারের সুযোগ প্রদান।

 

মণিপুরীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়ণ নিশ্চিতে স্বতন্ত্র ‘ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন।

মণিপুরীসহ নৃ—গোষ্ঠী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলের সকল পাবলিক মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংরক্ষণ।

 

দেশে—বিদেশে সমাদৃত ও সম্ভাবনাময় মণিপুরীসহ নৃ—গোষ্ঠীর সম্ভাবনাময় রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন, প্রদর্শন, বাজারজাত ও রপ্তানির সুবিধার্থে বিসিক শিল্প নগরী, স্পেশাল ইকনোমিক জোন বা ইপিজেডে স্থান সংরক্ষণ এবং বিভাগীয় নগরীতে শুল্কমুক্ত প্রদর্শনী ও বাজারজাত কেন্দে্রর জন্য স্থান বরাদ্ধ করা।

 

ক্ষুদ্র জনজাতির পূর্ব পুরুষদের মৌরসী ভিটেবাড়ী, সম্পদের উপর থেকে আগ্রাসী অপদখল উচ্ছেদ ও উত্তরাধীদের মালিকানা, দখল নিশ্চিত করণ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় ‘আঞ্চলিক ভূমি আইন’ কার্যকর ও প্রথাগত ভূমি অধিকার আইনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান।

 

ক্ষুদ্র জনজাতির পূর্ব পুরুষদের মৌরসী ভিটেবাড়ী, সম্পদের অপদখল উচ্ছেদ ও উত্তরাধীদের মালিকানা, দখল নিশ্চিত করণ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় ‘আঞ্চলিক ভূমি আইন’ কার্যকর ও প্রথাগত ভূমি অধিকার আইনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান।

 

মণিপুরীসহ সকল নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মীয় উৎসবের দিন তাদের নিজ নিজ এলাকায় বিশেষ আঞ্চলিক ছুটি ঘোষণা।

 

মহান জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর থেকে পুরুষ ও মহিলা সংসদ সদস্যপদ সংরক্ষণের মাধ্যমে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে দেশ ও জাতির সেবায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান।

ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন ও মণিপুরীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার সাংবিধানিক স্বীকৃতি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।