সিলেটে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের দক্ষিণ সুরমা থানার চৌকশ পুলিশ টিম কর্তৃক বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে হাসান মিয়া (১৫) এর হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যার ঘটনায় জড়িত ০৪(চার) জন আসামী গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার।
সূত্রঃ — দক্ষিণ সুরমা থানার মামলা নং-০৪, তাং-০৪/০৬/২০২৩খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড।
গ্রেফতারকৃতদের নামঃ ১। মো: তারেক মিয়া (২১), পিতা-সিরাজ মিয়া, মাতা-মায়ারুন বেগম, সাং-পশ্চিম দর্শা, কান্দিগাঁও, থানা-জালালাবাদ, জেলা-সিলেট, ২। রুবেল মিয়া (২০), পিতা-লাল মিয়া, মাতা-সালমা আক্তার শেলী, সাং-গুপ্তের গাঁও, কামাল বাজার, থানা-দক্ষিন সুরমা, জেলা-সিলেট, ৩। পাবেল মিয়া (১৯), পিতা-জহির মিয়া, মাতা-জুলেসা খাতুন, সাং-কামড়াপুর, (বুল্লা বাজারের পাশে), থানা-লাখাই, জেলা-হবিগঞ্জ, বর্তমানে-সাং-লালপুর (ফারুক মিয়ার কলোনী), কামাল বাজার, থানা-দক্ষিন সুরমা, জেলা-সিলেট, ৪। রিপলু মিয়া (৩২), পিতা-মৃত রাজধর মিয়া, সাং-শিবপাশা (তছকীর চেয়ারম্যান এর বাড়ির পাশে), থানা-আজমিরীগঞ্জ, জেলা-হবিগঞ্জ, বর্তমান সাং-ভালু মিয়ার বাসা, গোটাটিকর, থানা-মোগলাবাজার, জেলা-সিলেট।
উদ্ধারকৃত আলামতঃ১।ভিকটিমের নকিয়া বাটন মোবাইল, যাহার আইএমইআই নং-৩৫৩১৯২১১২৮১৫২২৮, ৩৫৩১৯২১১২৩১৫২২৯, যাহার বর্তমান সিম নং-০১৮৫৪-৪৯৪৭৯৭, ২। ভিকটিমের ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা বিক্রয়ের নগদ ৯৫০০/-(নয় হাজার পাঁচশত) টাকা, ৩। ভিকটিম মৃত হাসান মিয়ার পরিহিত কাপড়ের বেল্ট, স্যান্ডেল, ৪। ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার (ক) ০১টি ডিফারেন্সিয়াল, যাহার সাথে ০১টি মোটর, ০১টি চাকা এবং দুই পার্শ্বে স্প্রিং সেট যুক্ত, (খ) ০২টি স্প্রিং জাম্পারসহ সামনের চাকা, (গ) মিটার, (ঘ) সিট ০২টি, (ঙ) ব্যাটারি বক্স-০১টি।
গত ইং ০২/০৬/২০২৩ তারিখ বেলা অনুমান ১৫.০০ ঘটিকার সময় দক্ষিণ সুরমা থানার ডিউটি অফিসারের মোবাইল নাম্বারে তেতলী সাকিনস্থ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পূর্ব পাশে পরিত্যক্ত বিল্ডিং এর ভিতরে একটি রুমে ধানের খড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় একটি অর্ধ গলিত লাশ পাওয়ার সংবাদের ভিত্তিতে অফিসার ইনচার্জ সহ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পিবিআই দ্বারা লাশের পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা চালায়।লাশটি পুরাপুরি পচে যাওয়ায় শুধুমাত্র কঙ্কাল দেখে পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।লাশের সাথে থাকা পায়ের স্যান্ডেল, পরিধেয় গেঞ্জি, জিন্সের প্যান্ট এবং গলায় পেচাঁনো কাপড়ের বেল্ট দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর পাওয়া মৃতের পিতা মো: মাসুক মিয়া (৫৬) মৃত দেহ তাহার ছেলে হাসান মিয়া (১৫) এর লাশ মর্মে সনাক্ত করে। উল্লেখ্য গত ইং ২৬/০৫/২০২৩ তারিখ ছেলে নিখোঁজ হওয়া সংক্রান্তে মৃতের মামা মো: কলিম উদ্দিন দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি সাধারণ ডায়রী লিপিবদ্ধ করেন। যাহার নং-১৪৪০, তারিখ-২৬/০৫/২০২৩খ্রি:।
নিখোঁজ হওয়া ডায়রী সংক্রান্তে মৃত হাসান মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ হাসান মিয়াকে উদ্ধারে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অগ্রসর হতে থাকে। পুরোপুরি গলিত লাশের গলায় কাপড়ের বেল্ট দ্বারা পেচানো ও পা কাপড়ের টুকরা দ্বারা বাঁধা থাকায় দুষ্কৃতিকারী দ্বারা হাসান মিয়া (১৫) মৃত্যু হয় মর্মে নিশ্চিত হয়ে বিশ্বস্থ সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ), অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ-অপরাধ), সহকারী পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ সুরমা থানা), এসএমপি, সিলেটদের নির্দেশে ও তত্বাবধানে দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: শামসুদ্দোহা, পিপিএম এর নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)/মো: আবুল হোসেন, এসআই (নি:)/শাহিন কবির, এসআই (নি:)/মো: খায়রুল বাশার,
এসআই (নি:)/জাহাঙ্গীর আলমও ফোর্স সহ কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে সাধারণ ডায়রী মূলে নিখোঁজ হওয়া হাসান মিয়ার হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। সিলেট জেলা ও এসএমপির বিভিন্ন থানা এলাকাসহ গাজীপুর, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রামে একটানা অভিযান পরিচালনা করে মামলার ঘটনায় সরাসরি জড়িত মূল ০৩ (তিন) জন আসামীদেরকে সনাক্ত সহ আত্মগোপনে থাকা সিএমপির বায়জিদ বোস্তামি থানা এলাকা থেকে ইং ০৪/০৬/২০২৩ তারিখ বেলা ১১.২০ ঘটিকার সময় ১। মো: তারেক মিয়া (২১), ২। রুবেল মিয়া (২০) দ্বয়কে গ্রেফতারসহ মোবাইল এবং অটোরিক্সা বিক্রয়ের ৯৫০০/-টাকা তারেক এবং রুবেলের দখল হইতে ইং ০৪/০৬/২০২৩ তারিখ বেলা ১১.৪০ ঘটিকায় উদ্ধার করা হয়।মৃত হাসান মিয়ার মোবাইল সিএমপির কোতয়ালী থানা এলাকা হতে ইং ০৪/০৬/২০২৩ তারিখ দুপুর ০২.১০ ঘটিকার সময় উদ্ধার করা হয়।
সাধারণ ডায়রী হওয়ার পর থেকে ঘটনার সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত পুলিশের নজরাধীন ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কামাল বাজার লালপুর এলাকা থেকে আটককৃত পুলিশ হেফাজতে থাকা ৩। পাবেল মিয়া (২০) কে ধৃত মো: তারেক মিয়া ও রুবেল মিয়ার তথ্যমতে নিশ্চিত হয়ে ইং০৪/০৬/২০২৩ তারিখ ১১.৩৫ ঘটিকার সময় গ্রেফতার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। ধৃত ০৩ জন আসামী মামলার ঘটনার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে লোমহর্ষক এই হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেয়। যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।
উল্লেখ্য আসামী তারেক, রুবেল ও পাবেল তাদের বন্ধুদের সহ অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পন্ন করা শেষে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার নিমিত্তে অটোরিক্সা নেওয়ার লক্ষ্যে গত ইং২৫/০৫/২০২৩ তারিখ দিবাগত রাত অনুমান ০৩.০০ ঘটিকার সময় আসামী পাবেল ভিকটিম হাসান মিয়াকে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাটি ভাড়া নেওয়ার জন্য বলিলে, হাসান মিয়া অপারগতা প্রকাশ করে। অটোরিক্সাটি না দেওয়ার আক্রোশে পূর্ব পরিকল্পনা মতে ইং ২৫/০৫/২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৭.০০ ঘটিকার সময় ভাড়ার কথা বলে কৌশলে আসামী রুবেল এর মাধ্যমে ডেকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসামী তারেক মিয়া, পাবেল মিয়া ও রুবেল ঘটনাস্থলেই পাবেল ভিকটিম মৃত হাসান মিয়ার মুখ চেপে ঝাপটে ধরে মেঝেতে ফেলে দেয়।
তাৎক্ষনিক আসামী তারেক ভিকটিম মৃত হাসান মিয়ার দুই হাত এবং আসামী রুবেল ভিকটিম মৃত হাসান এর দুই পা ধরে রাখে। ততক্ষণে আসামী পাবেল এক হাত দ্বারা ভিকটিম মৃত হাসানের মুখ চেপে ধরে অন্য হাত দ্বারা গলায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ভিকটিম মৃত হাসান এর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য অটোরিক্সায় থাকা কাপড়ের টুকরা দ্বারা হাত পা বাঁধে এবং ভিকটিম মৃত হাসানের পরিহিত প্যান্টের কাপড়ের বেল্ট দ্বারা আসামী পাবেল ভিকটিম হাসান এর গলায় পেচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে পাশে থাকা খড়ের গাদা থেকে খড় নিয়ে মৃত দেহ ঢেকে অটোরিক্সা নিয়ে মোগলা বাজার থানাধীন গোটাটিকর এলাকায় ভাঙ্গারি দোকানে ৩০,০০০/-টাকায় বিক্রি করে। ইতিমধ্যে অদ্য ইং ০৫/০৬/২০২৩ তারিখ ১২.৫০ ঘটিকায় আসামীদের দেওয়া স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে, গোটাটিকর এলাকার মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টার প্রাইজ নামীয় ভাঙ্গারী দোকান হইতে দোকানদার রিপলু মিয়া’কে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ধৃত ভাঙ্গারীর দোকানদার রিপলু মিয়া’কে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাটি ক্রয় করার পর পার্ট পার্ট করে কিছু অংশ অনত্র বিক্রয় করে দেয়।
তার কাছে থেকে যাওয়া ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাটির অন্যান্য অংশের মধ্যে (ক) ০১টি ডিফারেন্সিয়াল, যাহার সাথে ০১টি মোটর, ০১টি চাকা এবং দুই পার্শ্বে স্প্রিং সেট যুক্ত, (খ) ০২টি স্প্রিং জাম্পারসহ সামনের চাকা, (গ) মিটার, (ঘ) সিট ০২টি, (ঙ) ব্যাটারি বক্স-০১টি আলামত অদ্য ইং ০৫/০৬/২০২৩ তারিখ ১৩.০৫ ঘটিকার সময় উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। ধৃত আসামীদয় নিজেদের মধ্যে ১০,০০০/-টাকা করে ভাগ করে নেয়।
আসামী রুবেল ও তারেক ভিকটিম হাসান এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ভাগের প্রাপ্ত টাকা নিয়ে সিলেট রেলস্টেশন হয়ে ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও সর্বশেষ সিএমপির বায়োজিদ বোস্তামি থানাধীন বার্মা কলোনীতে আত্মগোপন করে। এক পর্যায়ে সিএমপি কোতয়ালী থানাধীন ভাসমান হকারের নিকট ভিকটিমের মোবাইলটি বিক্রয় করলে ভাসমান ভ্যানচালক জনৈক সুমন মোবাইলটি ক্রয় করে ব্যবহার করতে থাকে।
পরবর্তীতে সুমনের দখল থেকে ভিকটিমের মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়। ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার বাকি অংশ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে। এ সংক্রান্তে মৃতের পিতা দক্ষিণ সুরমা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে সূত্রে বর্নিত মামলা রুজু করা হয়।