গোয়াইনঘাটের জনস্বাস্থ্য অফিস যেন টাকার খনি- প্রকৌশলীর ২কোটি টাকা আত্মসাত

সুরমা টাইমস রিপোর্ট : সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা জনস্বাস্থ্যের  উপ-সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ২কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে । শুধু মাত্র ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে গোটা উপজেলায়  ১৩৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াস ব্লক প্রকল্পে  কোনো তদারকি না করে কমিশন বানিজ্যের মাধ্যমে ১৩৬ টি ওয়াসব্লক হতে ১লক্ষ টাকা করে প্রায় ১কোটি ৩৬ লাখ টাকা ঘুষ নেন  উপ সহকারী প্রকৌশলী ইউনুস আলী।

ব্যাপক টেন্ডারবাজী আর অনিয়মের কারণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ কার্যালয়টি দুর্নীতির ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে । আওয়ামী লীগের অন্যতম দোসর মন্ত্রী ইমরানের পিএস বিকাশ সাইফুলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হওয়ায় জনস্বাস্থ্য অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইউনুস আলী বিগত সরকারের আমলে কোন প্রকার নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে খেয়াল খুশিমত নিজের পছন্দের কতিপয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে লুটপাট করেছেন । বর্তমানেও এ দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা গোয়াইনঘাটে গাপটিমেরে বসে অত্যান্ত সিদ্ধহস্তে আওয়ামী ডেভিলদের সাথে নিয়ে নিরবে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় সুত্র জানায়, গোয়াইনঘাট উপজেলায় শুধু মাত্র ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে  ১৩৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াস ব্লক প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে গুণধর উপ সহকারি প্রকৌশলী ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে। প্রতিটি একতলা বিশিষ্ট ওয়াস ব্লকের নির্মান ব্যায় ১৫ লাখ এবং দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট ওয়াস ব্লকের নির্মান ব্যায় ২০ লাখ টাকা প্রায়। আর এসব ওয়াস ব্লকের কাজ পায় আওয়ামী ডেভিল ঠিকাদার ফারুক আহমদ সহ উনার মনোনীতরা।

তাছাড়া মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঠিকাদার নির্বাচনেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যে কারণে গোয়াইনঘাট  জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রায় দুই শত কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন।

শুধু তাই নয়, নলকূপ স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জনস্বাস্থ্য অফিসের কর্মকর্তারা সরাসরি অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের অনুগত স্থানীয় ঠিকাদারের প্রতিনিধি, আওয়ামী ডেভিল এবং এলাকাভিত্তিক বেশ কয়েকজনের মাধ্যমে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে এমন দুর্নীতি করছেন ছোট ইউনুস ও বড় ইউনুস।

অভিযোগ রয়েছে, জামানত হিসেবে ৭ হাজার টাকা লাগার কথা থাকলেও জনস্বাস্থ্যের সরকারি নলকূপ পেতে সুবিধাভোগীদের দিতে হয়েছে ৪০ হাজার  থেকে ৫০ হাজার  টাকা। নির্দিষ্ট দালাল চক্রের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে এ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন গুণধর এ কর্মকর্তা। অফিসের বড় ইউনুসকে মেনেজ করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তালিকায় রয়েছেন মেকানিক ছোট ইউনুস , নলকুপ মেকানিক দেলওয়ার হোসেন, নিরাপত্তা প্রহরী জয়নুল ইসলাম,ম্যাশন সফিক সহ আরও কয়েকজন। কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন  নির্দিষ্ট দালাল চক্রের মাধ্যমে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

জনস্বার্থ উপেক্ষা করে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সুবিধাভোগীদের তালিকা করেন এ সিন্ডিকেট। বছরের পর বছর বিভিন্ন প্রকল্প থেকে এভাবে হাতিয়ে নেওয়া টাকায় তাঁরা গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তাঁদের জন্য গোয়াইনঘাট জনস্বাস্থ্যের কার্যালয় যেন হয়ে উঠেছে টাকা কামানোর মেশিন।

সম্প্রতি তালিকায় নাম থাকা সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে ঘুরে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের সুবিধাভোগী গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল ইউনিয়নের বীরকুলী গ্রামের এলাই বক্সের পুত্র আজির উদ্দিন

 জানান, দীর্ঘদিন থেকে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করতে পারেন নি, পরে এলাকার এক দালালের মাধ্যমে গোয়াইনঘাট উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের মেকানিক ইউনুসকে ৫০হাজার টাকা দেন। এতে টাকা দেওয়ার এক সপ্তাহ পর থেকে  ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন শুরু হয়ে যায়।

গোয়াইনঘাট উপজেলা মডেল স্কুলের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত ৬ মাস পূর্বে উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসে ডিপ টিউবওয়েলের জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত টিউবওয়েল পান নি।

একই উপজেলার সিটিংবাড়ি গ্রামের ফারুক আহমদ জানান, আমি গত বছর ডিপ টিউবওয়েল এর জন্য আবেদন করেছিলাম এখন পর্যন্ত পাই নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সারা দেশের মতো গোয়াইনঘাট  উপজেলায় প্রায় ৪০০থেকে ৫০০টি নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এসব টিউবওয়েল বসানোর কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে তার নিজের ভাই পরিচয়দানকারী রাসেদুল ইসলাম ও আত্মীয় স্বজনের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গোয়াইনঘাটে নলকূপ বসানোর জামানতের নাম করে চিহ্নিত দালাল চক্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৫ গুণ টাকা আদায় করা হয়েছে। উপ সহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজশে অফিসের পিয়ন, মেকানিক, অনুগত কিছু লোকের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে অনিয়ম করছেন তাঁরা। অভিযোগ উঠেছে, এই এক প্রকল্পেই অফিসের যোগসাজশে অর্ধকোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

জানা গেছে, নলকূপগুলো স্থাপনের কাজ পায় ইউনুস এর ভাই পরিচয়দানকারী  ঠিকাদার রাশেদুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠান  দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, প্রতিটি নলকূপ স্থাপনের পর শুষ্ক মৌসুমেও যেন পানির অভাব না হয়, সে জন্য সাবমার্সিবল মোটর স্থাপনের কথা ছিল। পাকা উঁচু জায়গা তৈরি করে তার ওপর পানির ট্যাংক বসানো এবং নিচে পাকা প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের কথা ছিল। কয়েকজন সুবিধাভোগী জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কম ক্ষমতাসম্পন্ন মোটর স্থাপন করেছে। বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্রেকার দেওয়া হয়নি। কোথাও আবার সুইচসহ অত্যন্ত নিম্নমানের সরঞ্জামাদি দেওয়া হয়েছে। নলকূপের পানির প্ল্যাটফর্ম, ট্যাংক বসানোর জন্য উঁচু চেম্বার নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট। কারও কারও আবার প্ল্যাটফর্ম নির্মাণই করা হয়নি। বর্তমানে দেশের সব সেক্টরে দূর্নীতির মাত্রা কমতে শুরু করলেও গোয়াইনঘাট জন স্বাস্থ্য অফিস চলছে আগের কায়দায়। নানারকম দুর্নীতি -অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিম্নমানের কাজের মধ্যদিয়ে প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এ ডিভিলের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান গোয়াইনঘাটবাসী।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের মেকানিক ইউনুসের সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান,এবং  এ প্রতিবেদককে

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের উপ সহকারী প্রকৌশলী ইউনুছ আলীর সাথে আলাপকালে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে এ রকম হয়ে থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো। (চলবে)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।