সুরমা টাইমস ডেস্ক :
করোনা মহামারিকালে অনেক চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চলছিল চিকিৎসক সংকট।
এ অবস্থায় সিলেটে সরকারিভাবে করোনা হাসপাতাল হিসেবে চিহ্নিত ‘শহিদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে’ অনেকটা সেবাব্রতী হয়ে পুরো করোনাকাল চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ তরুণ চিকিৎসক সাজ্জাদ হক।
তার সেই কর্তব্য পালন লিখে রাখেন বিভিন্ন ঘটনা ও চিকিৎসাসেবার বর্ণনায়। একজন চিকিৎসকের দেখা থেকে লেখা সেই সব গল্প গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছে সিলেটের চৈতন্য প্রকাশন।
একুশের গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত ‘করোনাময় দিনগুলি’ গ্রন্থটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার (১৩ই ফেব্রুয়ারি) রাতে সিলেটে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
হাওরের চারণ গবেষক ও গীতিকবি সজলকান্তি সরকারের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লোকসংস্কৃতি গবেষক ও লেখক ডক্টর মোস্তাক আহমাদ দীন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন লোকসাহিত্য গবেষক আবু সালেহ আহমদ, সাংবাদিক দেওয়ান তৌফিক মজিদ লায়েক, সাংবাদিক ও লেখক উজ্জ্বল মেহেদী, সাংবাদিক ও কবি শামস শামীম।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, চিকিৎসক ফারিয়েন বিলকিস, ডা. আলিম আল রাজী, ডা. সাইফুল আলম, ডা. তানজিনা ইভা, ডা. সাদিয়া মালিক চৌধুরী, ডা. আমিনা বিন্তে সাওমা ও বইটির লেখক ডা. সাজ্জাদ হক এবং তার ভাই ব্যাংকার সুজাদুল হক।
‘গাঙুড়’ প্রকাশক অসীম সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চৈতন্য প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মো. জাহিদুল হক চৌধুরী রাজীব।
মোড়ক উন্মোচনের পর লেখক সাজ্জাদ হক বক্তৃতায় করোনাকালে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনকে জীবনের সেরা একটি সময় হিসেবে অভিহিত করেন। সেই দায়িত্ব পালনে অনুপ্রাণিত করায় তিনি তার সহধর্মিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
লেখার পর গ্রন্থ প্রকাশে তার বড় ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। করোনাকালে সিলেট অঞ্চলে করোনা হাসপাতাল হিসেবে চিহ্নিত শহিদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে কর্তব্যরত থাকাকে করোনার করুণ সময় উল্লেখ করে সাজ্জাদ হক বলেন, ‘এ বইটি আমি লিখেছি লেখক হতে নয়, একজন চিকিৎসক কিভাবে সেবাব্রতী হয়ে করোনার করুণ সময় অতিবাহিত করেছেন, তার একটি দালিলিক প্রমাণ রাখতে।’
হরেক রকম বইয়ের ভিড়ে ‘করোনাময় দিনগুলি’ একুশের গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করতে পেরে চৈতন্য প্রকাশন ঐতিহাসিক একটি দায়িত্ব পালন করেছে উল্লেখ করে চৈতন্য প্রকাশনের সত্ত্বাধিকারী মো. জাহিদুল হক চৌধুরী রাজীব বলেন, এটি একটি দালিলিক বই।
বইমেলা শেষে বইটির প্রচার ও প্রসারে চৈতন্য নিজ দায়িত্বে কাজ করবে। চৈতন্য প্রকাশন এ রকমের বইয়ের প্রচারণা বছরব্যপী চালিয়ে থাকে। করোনাময় দিনগুলি প্রকাশ করতে পেরে চৈতন্য প্রকাশন গর্বিত।
আমন্ত্রিত আলোচকেরা করোকালে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসকের লেখা বইটি পাঠসমাদৃত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তারা বলেন, করোনাকালে সক্রিয় চিকিৎসকেরাও এ বইটিতে নিজেকে খোঁজে পাবেন। আর নিজেকে রক্ষার নামে নিস্ক্রিয় থাকা চিকিৎসকেরা নিজেকে দেখতে পারবেন। এ জন্য বইটি দালিলিক গ্রন্থ।
‘করোনাময় দিনগুলি’র পাঠ প্রতিক্রিয়ায় ডক্টর মোস্তাক আহমাদ দীন বইটি ভবিষ্যতের জন্য একটি দলিল হিসেবে অভিহিত করে বলেন, চিকিৎসকের লেখনি শক্তির জন্য বইটি পাঠ সমাদৃত হবে।
যে গল্পগুলো তিনি লিখেছেন, তা সবই জীবনের গল্প। দেখা থেকে লেখা। এখানে কোনো কিছুই কাল্পনিক নয়।
এক সময় এই বই পাঠের মধ্য দিয়ে মানুষ জানবে করোনার দিনগুলো কেমন ছিল। আর বইটির লেখক একজন চিকিৎসক হওয়ায় বিশ্বাসযোগ্যতার কোনো ঘাটতি থাকবে না।