আদালতের রায় ও নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে গোলাপগঞ্জে সড়কের উপর মার্কেট নিমার্ণ,এলাকায় উত্তেজনা

আব্দুল্লাহ গোলাপগঞ্জ থেকে : : সিলেটের গোলাপগঞ্জের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার দাড়িপাতন এলাকায় হাজারো মানুষজন ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের রাস্তার উপর নির্মাণ করা হচ্ছে মার্কেট। প্রভাবশালীরা জনস্বার্থে চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির উপর মার্কেট নির্মাণ করায় নানা গুঞ্জনের পাশাপাশি এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অবশ্য উক্ত বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে জনস্বার্থে চলাচলে রাস্তা অপসারণ করার জন্য বিজ্ঞ আদালতে একটি আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত সত্যতা পেয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপনা অপসারণ করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে এলাকায় জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি চলাচলে বিগ্ন না ঘটার জন্য সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দিয়েছেন গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি)। রহস্যজনক কারণে সে আদেশের স্থগিতাদেশ প্রতিপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় একদিন পর। ফলে প্রতিপক্ষ শ্রমিক বেশি লাগিয়ে মার্কেটের বেশির ভাগ কাজ সেরে নিয়েছেন। অপর দিকে প্রতিপক্ষ নিষেধাজ্ঞার নোটিশ পাওয়ার পরও আদালতের আদেশকে কোন তোয়াক্কা না করে তিনি সরকারি জায়গার উপর মার্কেটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
উপজেলার গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের দাড়িপাতন গ্রামটির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে দাড়িপাতন ১নং সড়ক। সেটি সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক থেকে সংযোগ হয়ে দাড়িপাতন হয়ে পাশ্ববর্তী গ্রাম ঘোগারকুল ও রণকেলী নয়াগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের সংযোগ সড়ক হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সড়ক দিয়ে শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষজন যাতায়াত করেন। রাস্তাটি বিগত সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দাড়িপাতন মৌজার, জেল নং-৮ ও ২নং খতিয়ানের সিলেট জেলা পরিষদের নামে রাস্তা ছিলো। বর্তমানে সড়কটি চলমান বিএস জরিপি ৪২৭নং দাগের ১নং খাস খতিয়ানে রাস্তা হিসেবে অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। উক্ত রাস্তা ঘেষে বসতবাড়ি রয়েছে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যন মৃত ফজলুর রহমানসহ গংদের। তৎকালীন সময়ে ফজলুর রহমান ওই সড়কের অধিকাংশ অবৈধ ভাবে দখল করে স্থায়ীভাবে পাকা দেয়াল নির্মাণ করে তার দখলে নিয়ে যান। এতে করে সড়কে সৃষ্টি হয় প্রতিবন্ধকতা। রাস্তা সরু হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষজন ও মুসল্লীরা ভোগান্তির শিকার হয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতেন। উক্ত বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে পড়লে তৎকালীন সময়ে ফজলুর রহমানকে স্থানীয়রা দেয়ালটি অপসারণ করে নিজ বাড়ির সীমানায় দেয়াল নির্মাণের জন্য চাপ দেন। এতে করে ফজলুর রহমান কাউকে কোন পাত্তা না দিয়ে ও বাঁধাকে কর্ণপাত করে জোরপূর্বক দেয়াল করেন। এ নিয়ে সৃষ্টি হয় এলাকায় উত্তেজনা। পরে স্থানীয়রা গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি অপসারণ ও অবমুক্ত করতে বিজ্ঞ আদালতে ২০১৩ সালে এলাকাবাসীর পক্ষে একই এলাকার বিলাল আহমদ সিলেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে মামলা করেন। উক্ত মামলাটি বিজ্ঞ আদালত পর্যালোচনা করে ও বিভিন্ন তদন্ত রিপোর্টের আলোকে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক রায় দিয়ে আদেশ দেন ফজলুর রহমান জনস্বার্থে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন এমতা অবস্থায় ৪২৭নং দাগের উপর থেকে ফজলুর রহমান নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য আদেশ দেন এবং প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ৫৮/৫নং স্মারকে উপজেলা সহকারী কমিশনা (ভূমি) ও গোলাপগঞ্জ মডেল থানাকে অনুলিপি প্রেরণ করা হয়। বিজ্ঞ আদালতের আদেশের পরও প্রভাবশালী ফজলুর রহমান আইন আদালতের আদেশকে কোন তোয়াক্কা না করে বহাল তবিয়তে থাকেন। এমতা অবস্থায় হঠাৎ এক মর্মান্তি সড়ক দুর্ঘটনায় ফজলুর রহমান মারা যান। এর পর রহস্যজনক কারণে সে সড়কটি আর অপসারণ করা হয়নি।
গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির আদালতের আদেশ বহাল থাকার পরও ওই সরকারি বিরোধকৃত সড়কের ভূমিতে জনচলাচলের রাস্তার উপরের দেয়াল ভেঙ্গে মৃত ফজলুর রহমানের ভাই ও মৃত নুর উদ্দিনের ছেলে প্রবাসী হেলিম আহমদ ও তার অপর ভাই আলম আহমদ স্থায়ীভাবে পাকা করে মার্কেট নির্মাণ করছেন। উক্ত বিষয়ে ও জনস্বার্থে চলাচলে বিগ্ন না ঘটার জন্য সড়কের উপরে মার্কেট নির্মাণ বন্ধ করতে সিলেটের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর বরাবর একই এলাকার কুটু চান মিয়ার ছেলে বিলাল আহমদ মামলা নং-১৩৬/২০২৪ দায়ের করলে ওই মামলার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণসহ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলসহ বিবাদিদের কারণ দর্শানোর জন্য দির্দেশ দেন। রহস্যজনক কারণে আদালতের আদেশের কপি পুলিশ ১দিন পর প্রেরণ করেছে। পাশাপাশি প্রবাসী হেলিম আহমদ ও তার ভাই আলম আহমদ নিষেধাজ্ঞা পেয়েও প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক সরকারি জনচলাচলের সড়কের উপর মার্কেটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে এলাকায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়টি নিরসনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে এলাকায় বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
এ ব্যপারে আলম আহমদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিজ্ঞ আদালতের আদেশের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি সরকারি সড়কের উপর কোন স্থাপনা করছেন না। তার বাড়ির সীমানার দেয়াল ভেঙে মার্কেট করছেন।
এ ব্যপারে একই এলাকার বিলাল আহমদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, হেলিম আহমদ ও আলম আহমদ জনগণের চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উপর স্থায়ী ভাবে মার্কেট করায় তিনি এলাকাবাসীর পক্ষে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিকার চেয়ে মামলা করেছেন। উক্ত বিষয়ে ২০১৬ সালে বিজ্ঞ আদালত সত্যতা পেয়ে আদালতের বিচারক তৎকালীন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে রায় প্রদান ও নিজ উদ্যোগে স্থাপনা ভেঙে সড়কটি অবমুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন। ওই আদেশকে তোয়াক্কা না করে বর্তমানে হেলিম আহমদ ও তার ভাই আলম আহমদ মার্কেট করছেন। তিনি এলাকার জনস্বার্থে চলাচলের সরকারি রাস্তাটি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।