নারী বেশি বোঝে: যোগ্যতায় অর্জিত সত্য!

শিক্ষিত নারীরা বেশি বোঝে! কথা সত্য। অশিক্ষিত পুরুষের চেয়ে শিক্ষিত নারীরা বেশি বুঝবে- সেটাই তো স্বাভাবিক, নাকি? এমনকি নারী এবং পুরুষ যদি সমান শিক্ষিত হয় তবুও নারী বেশি বুঝবে! নারীর ম্যাচিউরিটি লেভেল পুরুষের চেয়ে উচ্চস্তরের! ইন্টার পাশ করে মাস্টার্স পাশ মেয়ে বিয়ে করবেন আর বলবেন, মেয়েরা বেশি বোঝে!- তাহলে তো হবে না দাদো! লেভেলটা অন্তত সমান সমান রাখুন! নয়তো সারাজীবন খোঁচা খেতে খেতে যাবে!

মাস্টার্স পাশ মেয়ে বিয়ে করলে অন্তত দু’একটা পিএইচডি ডিগ্রি হাসিল করে নিবেন! তাহলে আর মেয়েরা বেশি বুঝে- এই সত্য বচনে বিস্ময়সূচক চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করতে হবে না। জ্ঞানে-গুণে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার খাতা কাটতে কাটতে সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়! আপনার বিশ্বাস না হলে মাস্টারকে জিজ্ঞেস করেন! এমর মাস্টারকে যারা খাতা পড়ে অতঃপর নম্বর দেয়! আজকাল পড়াশোনায় ছেলেদের দল দু’নম্বর! যারা পড়াশুনা করে তারা তো এগিয়ে যাবেই! আমাদের দাদারা একবারও বলেনি, নাতি, তোমার দাদী বেশি বোঝে! আমাদের বাপ-চাচারাও বলেনি, তোমাদের মা-খালারা বেশি বোঝে! এই অভিযোগ এই প্রজন্মের! আমাদের প্রেমিকারা, বউয়েরা- বেশি বোঝে! কী সাংঘাতিক কথা! নারী বেশি বুঝবে কেন?

কয়জন মেয়েকে পাবেন যারা কথিত ভাইয়ের/বোনের পিছনে রাজনীতি করে জীবন যৌবন খুইয়ে দিছে? সহমত ভাইতে মেয়েরা মুখে ফেনা তোলে? ওই ভাইরাই মেয়েদের কাছে সন্ধ্যার পরে কাচুমাচু করে!কয়টা মেয়ে অর্ধরাত পর্যন্ত বাইরে থাকে? বিন্দাস ঘোরে? এদেশের কয়টা মেয়ে একসাথে গোল হয়ে বসে বিড়ি-গাঁজা টানে? কাজেই যে মেয়েরা পড়ে তারা বেশি না বুঝলেই বরং সমস্যা। ছেলেদের মত মেয়েরা পড়ালেখায় পরিবার-সমাজ-প্রতিষ্ঠান থেকে যদি সমান সাপোর্ট পেতো তবে মেয়েরা যে কত বেশি বুঝতো তা চান্দুরা আন্দাজও করতে পারছো না! কপালো দুঃখ ছিল!

হাইস্কুলে পড়তে থাকাকালীন বিয়ের পরে বিএ/এম এ পাশ করেছে এমন মেয়ের এই সমাজে অভাব নাই! অথচ ছেলেদের পড়াশুনায় আজকাল হাল হকিকত কী? দামী মোবাইল না হলে, বাইক না দিলে এবং পিছন থেকে না ঠেললে কয়টা ছেলে পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়? না বললে স্বেচ্ছায় পড়তে বসে? ছেলেরা এইট পাশ রাজনীতিবিদ, বিএ পাশ অটোচালক এবং এম এ পাশ বেকার! পড়াশোনার মত পড়াশোনা করলে এইসব খোঁটা খেতে হতো না! বুঝছো, বাবারা!

যে মেয়েটা বেশি বোঝে সে আমার কন্যা, আমার বোন। এই বেশি বোঝাটা সে যোগ্যতায় অর্জন করেছে। জ্ঞানে-গুণে সে এখন সিদ্ধান্ত দিতে পারে এবং সেই সিদ্ধান্ত পুরুষের সিদ্ধান্তের চেয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিপক্ব! সংসারের যে পুরুষ বউয়ের কথা শোনে সে সাক্ষ্য দেবে- কল্যাণের ক্ষেত্রে বউয়ের অধিকাংশ সিদ্ধান্ত সঠিক। মেয়েটি যদি স্বার্থপর না হয়, সংসার ভাঙার কুচক্র মাথায় না ঘোরে এবং স্বামী যদি স্ত্রী’র কথা শোনে তবে সে সংসারে উন্নতি হয়। যোগ্য হলে দু’জন দু’জনার কথা শুনবে- কোন আপত্তি নাই। দু’জনে মিলে পরামর্শ করবে। একজন যোগ্য হলে কম যোগ্যজন যোগ্যজনের পরামর্শে চলবে! এই যুগে নারীরা এগিয়ে গেছে! বেশি বোঝাটা দেষের নয় তবে ভুল বোঝাটা দোষের। বেগম রোকেয়া নারীকে বোঝার জন্য পথ দেখিয়েছেন। নয়তো নারী পুরুষের কামের খোরাকে আটকে থাকতো। নারী আজ পুরুষের ভাগ্য, সমাজ ও দেশের ভবিষ্যত বিনির্মানে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। কাজী নজরুল ইসলামের স্বপ্ন সত্য হয়েছে।.
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।