মাহবুব আলী-সুমনের লড়াই: বিভক্ত চা শ্রমিক ভোটাররা
সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে যে’কটি আসনে ভোটের লড়াই জমেছে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর ও চুনারুঘাট) আসন। এ আসনে মোট ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে ভোটের মাঠে লড়াই চলছে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের মাঝে। ৫ লাখ ১২ হাজার ৩০৮ ভোটারের এ আসনে ১৭টি চা বাগানের শ্রমিকদের ভোট আছে প্রায় ৭৩ হাজার। তাই এখানে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হলো চা-শ্রমিকের ভোট।
চা শ্রমিক ভোটাররা বরাবরই নৌকায় ভোট দিয়ে থাকেন। তবে এবার মাধবপুর ও চুনারুঘাটে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত চা শ্রমিক ভোটাররা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের একটি অংশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মাহবুব আলীর পক্ষে আর অপর একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের দিকে ঝুঁকেছে।
ফলে এখানে চা-বাগান হচ্ছে প্রচারণার মূল কেন্দ্র বিন্দু। বুধবার সরেজমিনে স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপকালে এমন তথ্য জানা গেছে।
বুধবার বিকেলে মাধবপুর বাজারে বসে কথা হচ্ছিল রিকশা চালক আবুল মিয়ার সাথে।
উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের এ বাসিন্দার সাথে ভোটের প্রসঙ্গ তুলতেই বলেন, ‘‘ভাই ভোট খুব ভালা ঝমছে (জমেছে)। আমারার উপজেলাত নৌকা-ঈগলের খেলা অইব (লড়াই হবে)। তইলে (তাহলে) যদি চা বাগানের ভোট নৌকা ফাইলায় সব, তে নৌকা পাশ। আর চা বাগানের ভোট ঈগলে নিলেগা (নিতে পারলে) ঈগল পাশ কইরালাইব (করবে)।
‘‘কিন্তু পরিস্থিতি দেইক্কা মনে অইতাছে ঈগল বাগানের বুড (ভোট) পাইলাইব (পাবে)। আমরার রিকশায় বাগানের মানুষ যায়। হেরা হেরা (নিজেরা নিজেরা) মাতে, ইতা আলোচনা হুনিয়া মনে অয় চা শ্রমিকদের মাঝে ভাঙা ধরেছে।’’
আবুল মিয়ার মতো একই কথা জানালেন মরন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের মুখে জয়, মানুষের মুখে ক্ষয়। মানুষে তো বেশি পাখির কথা (ঈগলের) কয়। নৌকার খাঁটি ভোটার চা বাগানের লোকজনই অনেকে সুমনরে ভোট দিব। তারার লগে কথা কইয়া বুঝা গেল। এখন ভোটের দিন বুঝা যাইব আসল অবস্থা।’’
আবুল মিয়া ও মরন ঘোষ ও স্থানীয় অনেকের কথার সাথে মিল পাওয়া গেল বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল এবং তরুণ চা শ্রমিক নেতা দিপক রাজ প্রধানের বক্তব্যে।
এ দুইজনের দিপক রাজ প্রধান স্বতন্ত্র প্রার্থী সুমনের পক্ষে জোরালোভাবে মাঠে কাজ করছেন। অন্যজন চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল নৌকার পক্ষে।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘চা শ্রমিকদের ১৯দিনের আন্দোলনের সময় মন্ত্রী মাহবুব আলী সারাসরি আমাদের সাথে ছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সাথে কথা বলাই দিছে। দুই তিনটা বিষয়ে উনি কাজ করেছে। আমাদের চোখের সামনে। আমাদের নিয়েই করেছেন। এজন্য উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। চা বাগানের ভোট মাহবুব আলীই পাবেন।’’
অন্যদিকে তরুণ চা শ্রমিক নেতা দিপক রাজ প্রধান বলেন, ‘‘সুমন ভাইকে সবাই মন থেকে ভালোবাসে। কারণ তাকে আমরা বিপদে আপদে পাই। আমাদের আন্দোলনের সময় থাকে পাশে পেয়েছি। তার দেওয়া খাবার অনেক শ্রমিক পেয়েছে। এজন্য সুমন ভাইকে ভালোবেসে তার জন্য খাটতাছি (কাজ করতেছি)। সুমন ভাইকে ভোট দেব।’’
এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় চা-বাগানের ভোটাররা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব আলী বলেন, ‘‘চা শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় আমি সোচ্চার ছিলাম। তাদের সমস্ত দাবিগুলোর সাথে একমত ছিলাম। বরং আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী তাদের (চা শ্রমিকদের) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। চা শ্রমিকরা সেটা জানে। চা শ্রমিকরা নৌকায় ভোট দেয়, কোনো ব্যক্তিকে দেখে না।
‘‘তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তারা বিশ্বাস করে। প্রধানমন্ত্রীকে তারা সম্মান করে। তারা একটা আদর্শকে লালন করে নৌকায় ভোট দেয়। আমরা অনেক সময় আদর্শ থেকে বিচ্যুত হই। তারা (চা শ্রমিকেরা) হয় না। তাই তারা এবারও নৌকায় ভোট দেবে। ভবিষ্যতেও দেবে।’’
স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সায়েদুল হক বলেন, ‘‘মজুরীর জন্য চা শ্রমিকদের আন্দোলনে মাঠে কেউ ছিল না। আমি ছিলাম। চা শ্রমিক ভোটাররা এখন অনেক সচেতন। তারা বুঝে আওয়ামী লীগের লোক কি না। যেহেতু বিএনপি মাঠে নেই। এটা তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। তাই চা বাগানের ভোটার আমার পক্ষ আছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়ী হব।’’
হবিগঞ্জ জেলা রির্টানিং কার্যালয় সূত্র জানায়, এ আসনের অপর ৬ প্রার্থী হলেন- আবু ছালেহ (ইসলামী ঐক্যজোট), আহাদ উদ্দিন চৌধুরী (জাতীয় পার্টি), মোহাম্মদ আবদুল মমিন (বাংলাদেশ কংগ্রেস), মো. মোখলেছুর রহমান (বিএনএম), মো. রাশেদুল ইসলাম খোকন (বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট), সৈয়দ মো. আল আমিন (বাংলাদেশ কংগ্রেস)।