টানা বৃষ্টিতে জলের নগরে পরিণত হয়েছে সিলেট

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ

 

গত তিন ধরে সিলেটে হচ্ছে অবিরাম বৃষ্টি। গতকাল শুক্রবার দিনভর ঝরেছে ভারী বর্ষণ। এর ফলে ফের জলের নগরে পরিণত হয়েছে সিলেট। গতকাল শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে সিলেট নগরের অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠটানে ঢুকে পড়েছে পানি। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন ভোগান্তিতে পড়া নগরবাসী।

ভোর ৫টার দিকে নিজ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। তাঁর নিজের বাসাও জলমগ্ন। ভিডিওতে দেখা যায়- ফরহাদ চৌধুরীর বাসার নিচ তলায় পানি থৈ থৈ করছে। আসবাবপত্র অর্ধেক ডুবে আছে পানিতে। নিজ পরিবার এবং এলাকার মানুষের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে তিনি লাইভে।

এসময় কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন- সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মহানগরের ছড়া, নালা ও খালগুলো যথাসময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলেও আমাদেরকে ফের জলাবদ্ধতার শিকার হতে হয়েছে। সুরমা নদী খনন না করলে এ ভোগান্তি থেকে আর রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের উপশহর, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, কাজলশাহ, শেখঘাট, বনকলাপাড়া, কালীঘাট, পীরমহল্লা, সেনপাড়া, আদিত্যপাড়া, কেওয়াপাড়া, পায়রা, দরগাগেট, চৌহাট্টা, মেজরটিলা প্যারাগন আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট ও বাসায় পানি ঢুকেছে।

 

গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি জমেছে।তালতলা এলাকার বাসিন্দা সানাওর রহমান চৌধুরী বলেন- রাত ৩টার দিকে আমার ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ঘরের আসবাবপত্রসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর যেভাবে টানা বৃষ্টি চলছে পানি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলা মুশকিল।

নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক এম জে এইচ জামিল বলেন- আমরা একটি ভবনের ৪ তলায় থাকি। কিন্তু নিচ তলায় রাতে পানি ঢুকে পড়েছে। এর বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। আমাদের পাড়ার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- সিলেট মহানগরের জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ফলে বার বার নগরবাসীকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে।

 

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও নিচতলায় পানি জমেছে। ফলে রোগী, তাঁদের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগী বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, প্রধানত তিনটি কারণে নগরে অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই এখন জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এগুলো হচ্ছে নগরের ছড়াগুলোয় (প্রাকৃতিক খাল) অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজ, অনেক ড্রেনের উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে চলায় পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হয়ে পড়া এবং ছড়া-নর্দমার তলদেশে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্যে ভরাট হয়ে থাকা।

 

এর বাইরে শহরের বুক চিরে প্রবাহিত সুরমা নদীর নাব্যতা হারানোও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ বলে তাঁরা মনে করেন।

এদিকে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাহমুদুল হাসান সোহেল বলেন, গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে আজ শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এটা অতিভারী বৃষ্টি।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।