নবীগঞ্জে তথ্য গোপন করে সার ডিলারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি::

 

নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নের সার ডিলার ওসমানের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এর আগে একাধিকবার ন্যায্যমুল্যের সার কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগও উঠে ওই ডিলার নুরুল আমিন ওসমানের বিরুদ্ধে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও দাপট খাটিয়ে তার পক্ষে রায় নিয়ে নেন।

 

উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে কৃষক ও সার ডিলারগণের আবেদনকৃত পুনঃ তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণ ও লাভজনক ব্যবসায় থেকে সার ডিলারের লাইসেন্স আত্মসমর্পন না করে তথ্য গোপন করে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোঃ নূরুল আমিন উসমান নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নের কৃষক এবং বাসিন্দা না হওয়া সত্বেও প্রভাব খাটিয়ে সার ডিলার হিসাবে নিয়োজিত হন। সার ডিলার নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই কৃষকদের নিকট সার বিক্রি না করে চড়া মুল্যে অন্যত্র সার বিক্রর অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কৃষকরা মুখ খুলেন না।

 

বিভিন্ন সময় তিনি সার ডিলার ও কৃষকদের মোবাইল ফোনে হুমকি দিতেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ২০০৭ইং সালের পর থেকেই কৃষক ও সার ডিলারগণ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে আসছেন। কিন্তু দাপটের খাটিয়ে অদৃশ্য কারনে তিনি অদ্যবধি ডিলারশীপ চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও দাপট খাটিয়ে তার পক্ষে রায় নিয়ে নেন, উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে কৃষক ও সার ডিলারগণ পুনঃ তদন্তের আবেদন করেন। এছাড়াও লাভজনক ব্যবসায় থেকে সার ডিলারের লাইসেন্স আত্মসমর্পন না করে তথ্য গোপন করে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাচন করে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন।

সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ খাদ্যগুদাম এলাকা থেকে ব্যবসা পরিচালনাকারী ডিলার ওসমানের সার বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির কারনে ২০০৭ সালেই হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতির নিকট অভিযোগ দায়ের করলেও কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে নিরুপায় হয়ে এলাকার সাধরন কৃষকদের ন্যায্য অধিকার ন্যায্যমুল্যে সার পাওয়ার জন্য গত ২২/৯/২২ইং হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করলে হবিগঞ্জের কৃষি সম্পসারন বিভাগের উপপরিচালক নামমাত্র একটা তদন্ত করলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন।

 

পরে ২৭/১১/২২ইং তারিখে এলাকার সাব ডিলার মোজাহিদ আহমদ, সাবডিলার মোঃ ফয়েজ মিয়া, সাবডিলার মোজাম্মিল হক, কৃষক ও ইউপি সদস্য জাবেদ খান, দুলদুল আহমদসহ প্রায় ২ শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত অভিযোগ দায়ের করেন ওসমানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ দায়েরের পর সুচতুর ডিলার ওসমান কৃষকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে এবং সাব ডিলারদের কাছ থেকে ক্যাশ মেমোতে স্বাক্ষর আদায় করেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী মোজাহিদ আহমদের কাছে টাকা পাওনা রয়েছে বলে এলাকায় মিথ্যা তথ্য প্রচার করে এবং ফোনে হুমকি প্রদান করে।

এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের অক্টোবর ২০২২ মাসের মাসিক সমন্বয় সভায় সার ডিলার মেসার্স ওসমান ট্রেডার্স এর সত্ত্বাধিকারী নুরুল আমিন ওসমানের বিরুদ্ধে গুদামে সার লুকিয়ে রেখে কৃষক ও সাব ডিলারদের কাছে বিক্রি না করে কালোবাজারে বিক্রির ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

 

বিগত ১৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে সার ডিলার ওসমানের কালোবাজারে সার বিক্রি করে সার ডিলার ও সাধারন প্রান্তিক কৃষকদের সাথে প্রতারনার হাত থেকে বাচঁতে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট সুদৃষ্টি কামনা করেন।

 

নবীগঞ্জ ১৩ নং পানিউমদা ইউনিয়নের সার ডিলার নিয়োগের বিষয়ে উপজেলার ভিতরে কোনো ব্যক্তি ডিলারশীপ প্রদানের বিষয়ে উথাপন করলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম মাকসুদুল আলম জানান বিষয়টি জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।

 

উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত মতামত জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির নিকট পাঠানোর ব্যাপারে সভায় উপস্থিত সকলে মতামত পোষণ করেন। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক, হবিগঞ্জ মহোদয়ের বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।