সিলেট নগরীতে মা-ছেলে হত্যা মামলায় দুজনের মৃত্যুদন্ড

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ

সিলেট নগরীর মিরাবাজারের মা-ছেলে হত্যা মামলায় দুইজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ( ১১ই মে ) দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক নূরে আলম ভূঁইয়া এ রায় দেন। এ রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজনকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডও প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও রায়ে এক শিশুকে হত্যাচেষ্টার দায়ে আসামিদের ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায়ও দিয়েছেন আদালত।  দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কুমিল্লার তিতাস এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ খান ও তাঁর কথিত স্ত্রী তানিয়া বেগম। 

 

রায় ঘোষণার সময় আদালতে দুই আসামি উপস্থিত ছিলেন। 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১লা এপ্রিল সিলেট নগরীর মিরাবাজার খারপাড়ার ‘মিতালী ১৫/জে’ বাসার নিচতলার একটি ফ্লাট থেকে রোকেয়া বেগম (৪০) নামের এক নারী ও তার ছেলে রবিউল ইসলামের (১৬) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত রোকেয়া বেগম সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলি গ্রামের হেলাল মিয়ার স্ত্রী। সে সময় রোকেয়া বেগমের পাঁচ বছর বয়সী শিশুকন্যা রাইসা ইসলামকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. জাকির হোসেন বাদী হয়ে ঐ দিন রাতে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। 

 

মামলার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঐ বছরই ১০ই এপ্রিল কুমিল্লা থেকে অভিযান চালিয়ে তানিয়া ও ইউসুফ খানকে গ্রেফতার করে। ঘটনার সময় রোকেয়ার বাসায় কাজ করতেন তানিয়া। পরে এক মনোমালিন্যের জেরে তানিয়া চলে গিয়েছিলেন। তিনি স্বামী ইউসুফ খানের সঙ্গে নগরীর একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।  পূর্ববিরোধের জেরেই ইউসুফ ও তানিয়া মিলে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে মা-ছেলেকে খাইয়ে তাদের কুপিয়ে খুন করে বিছানায় লাশ ফেলে যান। এ সময় রোকেয়ার পাঁচ বছর বয়সী শিশুকন্যা রাইসা ইসলামকেও শ্বাস রোধ করে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

 

একপর্যায়ে ঐ শিশু অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যান তানিয়া ও ইউসুফ। তারা উভয়েই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এদিকে, ঘটনাস্থলে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী নিহত রোকেয়া বেগমের মেয়ে রাইসা। তারও জবানবন্দিও রেকর্ড করেন আদালত। আদালতে রাইসা ও আসামিদের জবানবন্দি হুবহু মিলে যায়।

 

সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি মোহাম্মদ জুবায়ের বখত বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি তদন্ত করে পিবিআই। ২০১৯ সালের ১৯শে মে তদন্ত শেষে আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পিবিআই’র পরিদর্শক দেওয়ান আবুল হোসেন। ২০২০ সালের ৯ই জানুয়ারি আদালত চার্জ গঠন করে বিচারকার্য শুরু করেন।

 

দীর্ঘ শুনানিতে ২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন। বাদিপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মিসবাউর রহমান আলম জানান, গৃহকর্ত্রী রোকেয়া বেগমের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই গৃহকর্মী তানিয়া তাকে হত্যা করে।

 

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট দিদার আহমেদ জানিয়েছেন তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।