ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূতিতে মৌলভীবাজার এনডিএফ-এর যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ

ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে একক পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে ন্যাটো জোট এবং প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার মধ্যে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ এক বছর পূর্ণ করে দীর্ঘস্থায়ী ও সম্প্রসারিত হয়ে পারমানবিক যুদ্ধ ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ। ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূতিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ করে। ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌমুহনায় এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।

জেলা এনডিএফের সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এনডিএফ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ, শ্রীমঙ্গল স’মিল শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, জুড়ী রাইসমিল শ্রমিক সংঘের সভাপতি মোঃ জমির উদ্দীন প্রমূখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন বাজার ও প্রভাব বলয় পুনর্বন্টন নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রা যুদ্ধ, স্থানিক ও আঞ্চলিক যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় রুশ-ইউরোপ সীমান্তে ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ বছর পেরিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সম্প্রসারিত হয়ে পারমাণবিক যুদ্ধ ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদকে তরান্বিত করছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্ব›দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা মূর্ত হয়ে উঠেছে। সাম্রাজ্যবাদীরা জোরদার করছে সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতিকে।

তাদের এই যুদ্ধ প্রস্তুতি থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। ভ‚-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্ব›দ্ব সুতীব্র। এ প্রেক্ষিতে রণনীতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারত মহাসাগর ও প্যাসিফিকসহ চীন সাগরের উপর নিয়ন্ত্রণের জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে চলছে যুদ্ধজনিত মুখোমুখি দ্ব›দ্ব-সংঘাত। ভ‚-রাজনৈতিক এই প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেমন বাংলাদেশকে আইপিএস, আইপিইএফসহ কোয়াড প্লাস-এ যুক্ত করতে অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করে চলেছে তেমনি প্রতিপক্ষ চীনও বাংলাদেশকে বিআরআই-এ যুক্ত করাসহ বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশে তার প্রভাব বৃদ্ধির পাশাপাশি মার্কিনের তৎপরতার প্রকাশ্য বিরোধিতা করে চলেছে। সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহ ও তার এদেশীয় দালালরা স্বীয় স্বার্থে বাংলাদেশকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। তাই দেশের সকল দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে জাতীয় গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

সমাবেশে বক্তারা সাম্প্রতিক সময়ে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন চাল-ডাল, তেল-লবন-চিনি, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ, শাক-সবজি মূল্যবৃদ্ধিসহ গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালনিতেল, বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিতে জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের মূল্য হু হু করে বাড়ছে, অথচ বাড়ছে না মানুষের আয় ও ক্রমক্ষমতা। বাজার ব্যবস্থার উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারের সাথে যোগসাজসে ব্যবসায়ীরা চিনি, ভোজ্য তেল, ডিম, ব্রয়লার মুরগী ইত্যাদির কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিচ্ছে।

অথচ সরকার অসৎ ব্যবসায়ী, কালো টাকার মালিক, ঋণ খেলাপী, বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সকল দায় জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানি থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। বক্তারা সরকারের ভর্তুকি প্রত্যাহারের নীতির সমালোচনা করে বলেন ভর্তুকি প্রত্যাহার নয়, বরং খেলাপি ঋণ আদায়, কালো টাকা উদ্ধার, ঘুষ-দুনীর্তি-লুটপাট বন্ধ, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বিদেশে পাচার কৃত অর্থ ফিতর এনে এবং ভ্যাটের আওতা কমিয়ে উচ্চ বিত্তের উপর প্রত্যক্ষ করের হার বৃদ্ধি করে ভর্তুকির পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে, জনগণের জন্য স্বল্প মূল্যে সর্বাত্মক রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানান।

 

=বিজ্ঞপ্তি ।।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।