উৎসবের তত্ত্বাবধানে উৎসবমুখর পরিবেশে বিলীন হচ্ছে জাফলং চা বাগান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃ

সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার মধ্য জাফলং ইউনিয়নের বিট অফিসার এস আই উৎসব কর্মকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উৎসবমুখর পরিবেশে বিলীন হচ্ছে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং চা বাগানের কাটারি এলাকা ।

জাফলং চা বাগানের কাটারি এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের মহোৎসবের কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে জাফলং চা বাগানের কাটারি এলাকা।

দিন ও রাতে সমানতালে উৎসবমুখর পরিবেশে চলমান এই ধ্বংসযজ্ঞের ফলে চা বাগানের বিশাল অংশ ধ্বসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, যা বাগানটির অস্তিত্বকে সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জনাযায় এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন মধ্য জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আরিফ এবং তাদের সহযোগী জসীম, লিয়াকত, লুনির কামরুল ও খাইরুল।

তারা প্রতি ফুট বালু থেকে ১০টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। আর এই বেআইনি কাজে সহায়তা করছেন খোদ গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের অসাধু কর্মকর্তা মধ্য জাফলং ইউনিয়নের বিট অফিসার এস আই উৎসব কর্মকার।

এসব লেবাসধারী নেতা ও গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের এই অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে এই চক্রটি পরিবেশ ধ্বংসকারী বোমা মেশিন, শ্যালো মেশিন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বালু ও পাথর উত্তোলন করছে।

এর ফলে কেবল চা বাগানই ধ্বংস হচ্ছে না, পুরো এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চা শ্রমিকরা, যারা এই বাগানের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের ভয়, বাগান ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে।

ভুক্তভোগী একাধিক চা শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান ও তার বাহিনীর পক্ষ থেকে হুমকি এবং হয়রানির শিকার হতে হয়।

এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ করলেও তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। তাদের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসন সবকিছু দেখেও নীরব ভূমিকা পালন করছে।

এই ধ্বংসযজ্ঞের একাধিক স্থির ও ভিডিও চিত্র স্থানীয় বাসিন্দা ও স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করার পরও পুলিশ প্রশাসনের এই নির্বিকার ভূমিকায় তারা হতাশাগ্রস্থ।

দিনে লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও রাতের আধাঁরে আবার আগের মতোই চলে বালু পাথর উত্তোলন ও চাঁদাবাজি।

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘লাইফ’-এর কেন্দ্রীয় নেতা এম আলী এই পরিস্থিতিকে দেশ ও সমাজের জন্য শত্রুতার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, “জাফলং একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র এবং পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকা। এখনি ব্যবস্থা না নিলে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশ দুটোই চিরতরে হারিয়ে যাবে।”

তিনি এই ধ্বংসযজ্ঞে জড়িতদের এবং তাদের সহায়তাকারী অসাধু কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জোর দাবি জানান।

গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের মধ্য জাফলং ইউনিয়নের বিট অফিসার এস আই উৎসব কর্মকার এই বিটের দায়িত্বে আসার পরথেকেই বারবারই জড়িয়ে পড়ছেন অনৈতিক কাজে,মধ্য জাফলংয়ের চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ একাধিক অবৈধ কাজে সম্পৃক্ততার জন্য অতীতে একাধিক গনমাধ্যমের সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন তিনি।তারপরও থেমে নেই তার চাঁদাবাজি বাণিজ্য।

এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগে অভিযুক্ত মধ্য জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগকারীদের পরিচয় জানতে চান। এবং অভিযোগ অস্বীকার করেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগে অভিযুক্ত মধ্য জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আরিফ বলেন, আমি বাগান রক্ষায় কাজ করছি।

অভিযোগ অস্বীকার করে মধ্য জাফলং ইউনিয়নের বিট অফিসার এস আই উৎসব কর্মকার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চা বাগান আমাদের জাতীয় সম্পদ এবং এটি রক্ষায় আমরা জিরো টলারেন্সে আছি।’

এদিকে, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার জানিয়েছেন, ছাত্রদলে কোনো চাঁদাবাজের স্থান নেই এবং ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি আরিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যারা অপরাধ করছে আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমানের স্পষ্ট বক্তব্য ব্যাক্তির অপকর্মের দায়ভার দল নিবে না।

তাই বিএনপির কেউ এইসব অপকর্মের জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা জানান, তারা জাফলং-এর পরিবেশ রক্ষায় তৎপর থাকলেও স্থানীয়দের সহযোগিতা পাচ্ছিলেন না।

তবে এখন অভিযোগ পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের সাথে যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে তারা প্রস্তুত।

এবিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী বলেছেন, ‘চা বাগান আমাদের ঐতিহ্য। যারা এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

 

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদের সাথে একাধিকবার উনার সরকারি ও ব্যাক্তিগত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় উনার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।