সুরমা টাইমস ডেস্ক :
টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক একাধিক সন্তান নিয়ে একটি ‘বাহিনী’ গড়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। এই উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ ব্যবহার করে সম্ভাব্য মায়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
এ ছাড়া সন্তান জন্মের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে অনেককে তিনি সারোগেট মাদার হওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্ক এখন পর্যন্ত চারজন নারীর ১৪টি সন্তানের বাবা হয়েছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মাস্কের সন্তানের মা হওয়া এই নারীরা হলেন অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ার, গায়িকা গ্রাইমস, নিউরোলিঙ্কের নির্বাহী কর্মকর্তা শিভন জিলিস ও তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী জাস্টিন মাস্ক।
তবে একটি সূত্রের দাবি, মাস্কের সন্তানের প্রকৃত সংখ্যা এরচেয়ে বেশি হতে পারে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানের কিছু কর্মকর্তার অনুরোধে মাস্ক একজন হাইপ্রোফাইল জাপানি নারীকেও নিজের শুক্রাণু পাঠিয়েছেন।
মাস্কের চার সন্তানের মা শিভন জিলিসকে অন্য মায়েদের মধ্যে ‘বিশেষ মর্যাদার’ অধিকারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। জিলিস মাস্কের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
এর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা ও বড় প্রযুক্তিবিদদের অংশগ্রহণে একটি নৈশভোজ।
২৬ বছর বয়সী সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ার গত সেপ্টেম্বরে মাস্কের ১৩তম সন্তানের জন্ম দেন।
অ্যাশলি জানান, মাস্ক তাঁকে একাধিক বার্তা পাঠিয়ে ‘বিশাল পরিবার’ গড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। একটি বার্তায় মাস্ক তাঁকে বলেছেন, ‘আমি চাই তুমি আবার গর্ভধারণ করো… এই পৃথিবী ধ্বংসের আগে আমাদের একটা ‘‘লিজিয়ন’’ তৈরি করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, ‘লিজিয়ন’ বলতে মূলত একটি সৈন্যদলকে বোঝায়, যাতে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার মানুষ থাকে। রোমান যুগে, ‘লিজিয়ন’ বলতে সেনাবাহিনীর একটি বৃহৎ ইউনিটকে বোঝাত এবং এখনো অনেক সামরিক বাহিনীতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ার জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তাঁকে ১৫ মিলিয়ন ডলার ও মাসিক ১ লাখ ডলার সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
আর শর্ত ছিল, তিনি জন্ম সনদে মাস্কের নাম উল্লেখ করতে পারবেন না এবং পিতা হিসেবে মাস্কের পরিচয়ও প্রকাশ করতে পারবেন না।
এসব প্রস্তাব দেন মাস্কের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জ্যারেড বার্চাল। যিনি অ্যাশলির সন্তান প্রসবের সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাশলি গোপনীয়তার শর্তে সম্মত না হলেও জন্ম সনদে মাস্কের নাম উল্লেখ করেননি। তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে মাস্কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আনেন।
এর পরেই মাসিক সহায়তা ১ লাখ থেকে ৪০ হাজার ডলারে নেমে আসে এবং পরে তা আরও কমে ২০ হাজার ডলারে দাঁড়ায়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মাস্ক ক্রিপ্টো প্রভাবশালী টিফানি ফংয়ের মতো অন্য নারীদের সঙ্গেও সন্তান জন্মদানের প্রস্তাব নিয়ে যোগাযোগ করেন।
ফং যখন এই বার্তাগুলো প্রকাশ্যে শেয়ার করেন, তখন মাস্ক তাঁকে এক্সে আনফলো করেন বলে জানা গেছে।
অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ারসহ বেশ কয়েকজন নারী দাবি করেছেন, মাস্কের দল এসব বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে অর্থ ও কঠোর গোপনীয়তার চুক্তি ব্যবহার করে।
মাস্কের এই পারিবারিক ব্যাপারগুলো দেখাশোনা করেন জ্যারেড বার্চাল। তিনি মাস্কের এসব কর্মকাণ্ডকে ‘মেধার ভিত্তিতে পরিচালিত’ বলে বর্ণনা করেছেন, যেখানে ‘ভালো কাজের জন্য’ সুবিধা দেওয়া হয়।
মাস্কের অসংখ্য সন্তান জন্মদানের ইচ্ছা তাঁর এই বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত যে—জনসংখ্যার হ্রাস মানব সভ্যতার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি প্রায়ই বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি না হলে ‘সভ্যতা ভেঙে পড়বে’ ও ‘বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের’ আরও সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা উচিত।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, মাস্কের জীবনের বেশির ভাগ অংশ আইনি ও আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সুরক্ষিত। মাস্কের তিন সন্তানের মা কানাডিয়ান সংগীতশিল্পী গ্রাইমস জানিয়েছেন, সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য মাস্কের সঙ্গে আইনি লড়াই তাঁকে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি তাঁর এক সন্তানের চিকিৎসার জন্য মাস্কের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু মাস্ক তাঁকে কোনো সহায়তা করেননি।
ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, ইলন মাস্ক ৩৬৭.৯ বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক ও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।
তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধান ও তাঁর মন্ত্রিসভার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।