কারাগারে বসে চিনি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন বাদল ও জাহাঙ্গীর

সুরমা টাইমস ডেস্ক :

সিলেটের বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন হাটবাজারে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে দেশে নিয়ে আসা চিনি বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত থাকা আলোচিত বাদল-জাহাঙ্গীর সিন্ডিকেটের মূলহোতা আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম বাদল ও জাহাঙ্গীর হোসেন ৬ দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন।

 

তবে তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা থেমে নেই। তারা অবলিলায় চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ কর্মকাণ্ড। জেল থেকে ‘মানিকজোড়’ বাদল ও জাহাঙ্গীর তাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

এদিকে সম্প্রতি দৈনিক কালবেলা পত্রিকার বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি ও বিয়ানীবাজার রিপোর্টাস ইউনিটির সাধারন সম্পাদক গণমাধ্যমকর্মী শহিদুল ইসলাম সাজুকে ‘মানিকজোড়’ সিন্ডিকেটের সদস্যরা হত্যার হুমকি দিয়েছেন।

এ ঘটনায় ওই  সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম সাজু নিজের নিরাপত্তা চেয়ে বিয়ানীবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

 

জানা যায়, গত সোমবার (৭ই এপ্রিল) দুপুরে বিয়ানীবাজার থানায় দায়েরকৃত মামলায় আমিনুল ইসলাম বাদল ও জাহাঙ্গীর হোসেন জামিন চেয়ে সিলেটের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

 

জানা গেছে, বাদল-জাহাঙ্গির সিন্ডিকেটের আমিনুল ইসলাম বাদল (৪১) সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের নন্দিরফল গ্রামের মৃত কালা মিয়ার ছেলে এবং জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৭) মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর গ্রামের বদর উদ্দিনের ছেলে।

 

এর মধ্যে লাউতা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাদল বারইগ্রাম বাজারের পশুরহাটের ইজারাদার। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে নোহাশ এন্ড মালিয়া ভেরাইটিজ স্টোর ও শাপলা ভোজ্যতেল কোম্পানির ডিলার।

 

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম বাদল স্থানীয় বারইগ্রাম বাজারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে নিজস্ব দোকান কোটা পরিচালনা করে আসছেন।

 

অন্যদিকে, জাহাঙ্গীর হোসেন পার্শ্ববর্তী বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা হলেও স্থানীয় বারইগ্রাম বাজারে বন্ধু আমিনুল ইসলাম বাদলের দাপটে চোরাই চিনি বাজারজাতকরণে সহযোগিতা করতেন। জাহাঙ্গীর হোসেন বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী কৃষক লীগের কোষাধ্যক্ষ।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আমিনুল ইসলাম বাদল ও জাহাঙ্গীর হোসেন ভারতীয় চোরাই চিনি বাজারজাত করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

 

একইসাথে স্থানীয় রাজনীতি ও ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে তাদের দাপটে অন্যরা চুপসে থাকতো। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও তাদের এই অপর্কম বন্ধ হয়নি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বারইগ্রাম বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আমিনুল ইসলাম বাদল দলীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করে দীর্ঘদিন ধরে অরাজকতা চালিয়ে আসছে।

বাজারের যেকোন সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। একইসাথে বারইগ্রাম পশুর হাটের ইজারাদার হওয়ায় তার আলাদা একটা প্রভাব ও ত্রাসের রাজত্ব বিরাজ করতো।

 

স্থানীয় বাজারে একটি ভূসিমাল পণ্যের গ্রোসারী শপ থাকলেও সে মুলত বারইগ্রাম বাজার, থানা বাজার, গোডাউন বাজারসহ বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের ছোট ছোট ভোগ্যপণ্যের দোকানগুলোতে চোরাই চিনি সাপ্লাই করতো।

 

তার এ কাজে সহযোগিতা করে বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর গ্রামের কৃষকলীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন। তাদের দুজনকে অনেকেই সিন্ডিকেটের ‘মানিকজোড়’ বলে আড়ালে-আবঢালে পরিচয় দিতেন।

 

এদিকে, মুঠোফোনে কল দিয়ে জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বাদলের গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেননি তার চাচাতো ভাই হাবিব আহমদ।

 

তিনি তখন জানান, গ্রেফতার নয়, আমার ভাই ৪-৫ দিনের জন্য ইন্ডিয়াতে গিয়েছেন। পরে অবশ্যই তিনি স্বীকার করেন, আমিনুল ইসলাম বাদল ও জাহাঙ্গীর হোসেন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে বারইগ্রাম বাজার বণিক সমিতির সভাপতি নিজামুল ইসলাম নাজিমকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

লাউতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন বলেন, আমিনুল ইসলাম বাদল একজন ব্যবসায়ী বলে জানি ও চিনি।

তবে সে যে চোরাচালানের সাথে জড়িত এসব কিছুই আমার জানা নেই। এমনকি তার বিরুদ্ধে চোরাচালানের মামলা থাকার বিষয়টিও আমার অজানা।

 

এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফ উজ্জামান, বলেন আমরা সাংবাদিকের হুমকির বিষয়টি জেনেছি ,এর বিরূদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কারাগার থেকে বসে কীভাবে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে জানতে চাইলে ,তিনি বলেন এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।