আহমেদ শাকিল : নাম রুনু মিয়া মঈন,সভাপতি সিলেট জেলা হিউম্যান হলার চালক শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং- চট্ট-১৩২৬)।
রনু মিয়া মঈন আজ থেকে ২২ বছর আগে ছিলেন একজন সাধারণ টেম্পু চালক।বর্তমানে তিনি অনেক গাড়ি-বাড়ি ও বিত্ত বৈবভের মালিক। নগরের উপকন্ঠ দক্ষিণ সুুরমার বাস স্ট্যান্ড,বাইপাস এলাকায় নামে বেনামে রয়েছে তার বিশাল ভূ-সম্পত্তি।
সিলেট সদরের খাদিমপাড়ায় বিলাশবহুল বাড়ি সহ রয়েছে কয়েকটি বহুতল বাড়ি। এবার হত্যা মামলার জালে আটকা পড়েছেন তিনি।অবশ্য এর আগে তার বিরুদ্ধে ৪৯ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলাও হয়েছিল। সেই মামলার অভিযোগ করা হয়, হিউম্যান হলার চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ শ্রমিকদের এ টাকা আত্মসাত করে তিনি এ বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন তিনি। শ্রম আদালত সিলেট-এর বি. এল. এ (ফৌজদারি) ০২/২০২২ নং দায়েরী মামলার বাদী হচ্ছেন সিলেট জেলা হিউম্যান হলার চালক শ্রমিক ইউনিয়ন (চট্ট- ১৩২৬) এর সাবেক সভাপতি ও তামাবিল শাখার সদস্য শাহাব উদ্দিন।
মামলায় অভিযোগ করা হয় ইউনিয়নের সভাপতি রুনু মিয়া মঈন আজ থেকে ২২ বছর আগে লোক দেখানো এক নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতির আসনে বসে দীর্ঘ ২দশক ধরে অগণতান্ত্রিক পস্থায় এ পদ আকড়ে ধরে রেখেছেন।
ইউনিয়নের জন্য সরকার অনুমোদিত গঠনতন্ত্রের সবকটি ধারা-উপধারা লংঘন করে এ যাবত তিনি লুটপাট ও আত্মসাতের মহোৎসব চালিয়ে আসছেন।
বিগত সরকারের সময় অর্থাৎ ৫ আগস্টের আগ-মুহুর্ত পর্যন্ত মঈন ও তার ছেলেরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাট্টা থেকে চিনি সহ নানা ধরনের ব্যবসায় জড়িত ছিল। তাদেরকে সুবিধাভোগী গ্রুপ হিসেবে এলাকায় আখ্যায়িত করা হয়।
ইউনিয়নের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত ছাড়াও সিলেটের তামাবিল জাফলং জৈন্তাপুর এলাকায় অবৈধ স্ট্যান্ড বসিয়ে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি, বে-আইনি হিউম্যান হলার, ইমা, লেগুনা, সুজুকি, মেক্সি, রাইডার, ইত্যাকার রেজিষ্ট্রেশন বিহীন যানবাহনে পুলিশ টোকেন বাণিজ্য করে দৈনন্দিন লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করছেন।
তার এ আত্মসাতমূলক কর্মকান্ডে সহযোগিতা করছেন ওই চালক শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইনছান আলী ও ভারপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ আরিফুল ইসলাম আরিফ সহ কয়েকজন।
৪৯ কোটি টাকা গিলে খাওয়ার মামালায় এজহারভুক্ত আসামীও রয়েছেন এই গুনধররা।
অভিযোগে আরো প্রকাশ, ইউনিয়ন গঠনতন্ত্রের ১৪ (ক) ধারা, ১৪ (গ) ধারা, ১৪ (ঙ) ধারা লংঘন করেই রুনু মিয়া মঈন বিনা নির্বাচনে ইউনিয়নের জেলা সভাপতির পদ আকড়ে ধরে স্বৈরাচারী কায়দায় ইউনিয়ন পরিচালনার পাশাপাশি আত্মাসাত ও শ্রমিক হয়রানিমূলক কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছেন।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৯) এর ২৯১, ২৯২, ২৯৩ এবং ৩০৭ ধারায় দায়ের করা এই মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়- ইউনিয়ন গঠনতন্ত্রের ১৬ ধারা অনুযায়ী ব্যাংকের মাধ্যমে আয়-ব্যায় হিসাব পরিচালনা ও বার্ষিক সাধারণ সভায় এই হিসাব অনুমোদন করানোর কথা থাকলেও সভাপতি রুনু মিয়া মঈন তা’ না করে বেপরোয়াভাবে ইউনিয়নের টাকা আত্মসাত করে চলেছেন।
অতিথে এর প্রতিবাদ করলে হামলা ও মামলার শিকার হয়ে থাকেন সাধারণ শ্রমিকরা।
রুনু মিয়া মঈন চার দলীয় জোট সরকার আমলে বিএনপি নেতা ও মন্ত্রীদের নাম ভঙ্গিয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় ইউনিয়ন পরিচালনা করেছেন।
তারপর আওয়ামী আমলে সরকার দল আওয়ামী লীগের লেবাস পরে হীন কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলেন।
সর্বশেষ যুবদলকর্মী বিলাল খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হলেন সিলেটের আলোচিত পরিবহন শ্রমিক নেতা রুনু মিয়া প্রকাশ মঈন। ঢাকায় যাওয়ার পথে নরসিংদী এলাকা থেকে রুনু মিয়া মঈনসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে শাহপরান রহঃ থানার একটি টিম। রুনু মিয়া মঈন যুবদল কর্মি বিল্লাল খুনের মামলার প্রধান আসামি। নিহত বিল্লালের পরিবার ও স্বজনরা দাবি করছেন – রুনু মিয়া মঈনের নির্দেশে শাহপরান গেইট থেকে যুবদল কর্মি বিল্লালকে অপহরণ করে বহর গ্রামে মঈনের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে নির্যাতন ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বিল্লালকে । ২৬ তারিখ মঙ্গলবার বিকালে নিহত বিল্লালের মরদেহ যখন ওসমানী হাসপাতাল থেকে নিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় তখন এলাকার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এ সময় এলাকার মানুষ সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
পরে আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের আশ্বাস দেয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন; বিলাল খুনের ঘটনা পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড। এই হত্যার পেছনে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। এ কারণে খুনের ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সোমবার রাতে যুবদল নেতা বিল্লালকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার দিন দফায় দফায় উত্তেজনা বিরাজ করলেও প্রশাসনের তরফ থেকে তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এলাকাবাসী তারা জানিয়েছেন- কেবল আধিপত্যই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে চিনি’র লাইনের আধিপত্য নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। আর মঈন ও ছেলে সোহেল, রুবেল ও জাকিরের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে নিরপরাধ বিলালকে খুন হতে হয়েছে। শাহপরান ও বহর এলাকার লোকজন জানিয়েছেন-জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের একাংশের চিনি চোরাকারবারিদের নিরাপদ রুট হচ্ছে শাহপরান এলাকা। তাছাড়া যুবদলের নামে পরিবহন শ্রমিক নেতা মঈনের ছেলে সোহেল, রুবেল ও জাকির আরও একটি গ্রুপের সৃষ্টি করে। কিন্তু এলাকায় তাদের রাজনৈতিক অবস্থান তেমন চাংগা নয়।
আলোচিত সিলেট জেলা সিলেট হিউম্যান হলার চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রুনু মিয়া প্রকাশ মঈন। তাকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।
প্রভাব আছে তার, পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন।
অনেকের আবার জমি-জমার মালিকও এখন মঈন। তবে অতীতের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে নানা অভিযোগে আলোচিত সমালোচিত ছিলেন মঈন।
৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপটের পর থেকে মঈন ও তার ছেলেরা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার শুরু করে।
এ কারণে যুবদলের টাওয়ার গ্রুপের কর্মী বিল্লালের সঙ্গে তাদের বিরোধ লেগেই ছিল। গত সোমবার এক স্কুলছাত্রকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেয় মঈনের ছেলে সোহেল, রুবেল ও জাকির সহ যুবলীগ থেকে যুবদলের ছত্রছায়ায় আসা কর্মীরা।
শোডাউনের সময় এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে রাতে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয় যুবদল নেতা বিল্লালকে । বিল্লাল ৩৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জয়নালের পিএস হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
এ কারণে এলাকার মানুষের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। বাইপাস এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- গত দু’মাস চোরাই চিনি’র লাইনম্যান নিয়ে দ্বন্দ্বে মঈনের ছেলে সোহেল, রুবেল সহ কয়েকজন প্রায়ই মোটরসাইকেল নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত সুরমা গেইট এলাকায় আড্ডা দিতো। এর মধ্যে কয়েক ট্রাক চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আর এ চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিতর্কিত হয়েছিল সিলেটের যুবদল।
এ ব্যাপারে শাহপরান রহঃ থানার অফিসার ইনচার্জ জানিয়েছেন- রাতে গ্রেপ্তার হওয়া রুনু মিয়া মঈনসহ ৫ জনকে সিলেট নিয়ে আসার কথা রয়েছে। তিনি আরও বলেন এর আগে ঘটনায় পুলিশ সোমবার রাতেই ৬ জনকে আটক করেছিল। তবে আসামি না হওয়ায় তাদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নিহত বিল্লালের ভাই মোস্তফা বাদী হয়ে থানায় রনু মিয়া মঈনকে প্রধান অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা করেছেন।