যুবদল নেতা বিলাল খুন নরসিংদীতে গ্রেপ্তার সিলেটের পরিবহন শ্রমিক নেতা মঈন

সুরমা টাইমস ডেস্ক : যুবদলকর্মী বিলাল খুনে গ্রেপ্তার হলেন সিলেটের আলোচিত পরিবহন শ্রমিক নেতা রুনু মিয়া মঈন। গতকাল ঢাকায় যাওয়ার পথে নরসিংদী থেকে তাকে গ্রেপ্তার  করা হয়েছে। সে বিলাল খুনের মামলার প্রধান আসামি। নিহত বিলালের স্বজনদের দাবি- মঈনের নির্দেশে শাহপরান  গেইট থেকে যুবদল নেতা বিলালকে অপহরণ করে বহর গ্রামে মঈনের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে নির্যাতন ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বিলালকে। মঙ্গলবার বিকালে নিহত বিলালের মরদেহ যখন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে নিজ এলাকা খাদিমপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয় তখন এলাকার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এ সময় এলাকার মানুষ সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের আশ্বাস দেয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন; বিলাল খুনের ঘটনা পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড। এই হত্যার পেছনে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। এ কারণে খুনের ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। সোমবার রাতে যুবদল নেতা বিলালকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার দিন দফায় দফায় উত্তেজনা বিরাজ করলেও প্রশাসনের তরফ থেকে তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ আছে এলাকায়। তারা জানিয়েছেন- কেবল আধিপত্যই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে চিনি’র লাইনের আধিপত্য নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। আর মঈন ও ছেলে সোহেল, রুবেল ও জাকিরের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে নিরপরাধ বিলালকে খুন হতে হয়েছে। গতকাল শাহপরান ও বহর এলাকার লোকজন জানিয়েছেন-জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের একাংশের চিনি  চোরাকারবারিদের নিরাপদ রুট হচ্ছে শাহপরান এলাকা। বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের সময় মেজরটিলা এলাকার কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমের নিয়ন্ত্রণে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এ রুট নিয়ন্ত্রণ করতো। ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর থেকে স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদল নেতারা এ রুট নিয়ন্ত্রণে নামে। ফলে ওই এলাকায় যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকটি উপ-গ্রুপের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে স্থানীয় নেতা মিজান নিয়ন্ত্রণ করেন শাহপরান বাইপাস এলাকা। আর টাওয়ার গ্রুপ নামে আরও একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপি’র সোহেল ও বিলাল। মাঝখানে যুবদলের নামে পরিবহন শ্রমিক নেতা মঈনের ছেলে সোহেল, রুবেল ও জাকির আরও একটি গ্রুপের সৃষ্টি করে। কিন্তু এলাকায় তাদের রাজনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় নয়। এলাকার লোকজনের দাবি; বিগত সরকারের সময়ে মঈন ও তার ছেলেরা আওয়ামী লীগের  নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাট্টা থেকে চিনি সহ নানা ধরনের ব্যবসায় জড়িত ছিল। তাদেরকে সুবিধাভোগী গ্রুপ হিসেবে এলাকায় আখ্যায়িত করা হয়। সিলেট জেলা সিলেট হিউম্যান হলার চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মঈন। তাকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই এলাকায়। প্রভাব আছে তার। পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন। অনেক জমি-জমার মালিকও এখন মঈন। তবে অতীতের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে নানা অভিযোগে কাঠগড়ায় ছিলেন মঈন। ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপটের পর থেকে মঈন ও তার ছেলেরা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের পরিচয় দিতে শুরু করে। এলাকায় প্রভাব বিস্তার শুরু করে। এ কারণে যুবদলের টাওয়ার গ্রুপের কর্মী বিলালের সঙ্গে তাদের বিরোধ লেগেই ছিল। সোমবার এক স্কুলছাত্রকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেয় মঈনের ছেলে সোহেল, রুবেল ও জাকির সহ যুবলীগ থেকে যুবদলের ছত্রছায়ায় আসা কর্মীরা। শোডাউনের সময় এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে রাতে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয় যুবদল নেতা বিলালকে। বিলাল এলাকার ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়নালের পিএস হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ কারণে এলাকার মানুষের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। বাইপাস এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- গত দু’মাস  চোরাই চিনি’র লাইনম্যান নিয়ে দ্বন্দ্বে মঈনের ছেলে সোহেল, রুবেল সহ কয়েকজন প্রায়ই মোটরসাইকেল নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত সুরমা গেইট এলাকায় আড্ডা দিতো। এর মধ্যে কয়েক ট্রাক চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আর এ চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিতর্কিত হয়েছিল সিলেটের যুবদল। নরসিংদী এলাকা থেকে গতকাল দুপুরের পর মঈন সহ ৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন শাহপরান থানার ওসি মো. মনির হোসেন। তিনি জানিয়েছেন- রাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনকে সিলেট নিয়ে আসার কথা রয়েছে। এর আগে ঘটনায় পুলিশ সোমবার রাতেই ৬ জনকে আটক করেছিল। তবে আসামি না হওয়ায় তাদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নিহত বিলালের ভাই মোস্তফা বাদী হয়ে থানায় রনু মিয়া মঈনকে প্রধান অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা করেছেন। (সুত্র -মানব জমিন)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।