সুরমা টাইমস রিপোর্টার : সিলেট নগরীর কালীঘাটের কারখানাঘাটে কিছুতেই থামছে না ইন্টারনেট ভিত্তিক ভারতীয় শিলং তীর জুয়া ও ঝান্ডু-মান্ডু খেলা। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে এক দু’জনকে আটক করে জেলহাজতে পাঠালেও তারা জামিনে বের হয়ে আবার এ খেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে। টোকনের মাধ্যমে তীর খেলা আর পাশাপাশি বসে ঝান্ডু-মান্ডু জুয়ার আসর। এই জুয়ার বোর্ড বসিয়ে দিনমজুর থেকে অনেকে হয়ে উঠেছেন কোটিপতি। জানা গেছে, নগরীর কালীঘাট কারখানাঘাটে প্রতিদিন দিনের বেলা ও রাতে চলে জমজমাট জোয়ার আসর। এ বোর্ডের মালিক তাতিলীগ নেতা সাইফুল, তার সিন্ডিকেটে রয়েছে, দিপু, মাসুদ, কামাল, জনি, জামান, মিয়ার ভাই সাহেদ মতিন, এনাম, দিলিপ মিয়া সহ যুবলীগ ছাত্রলীগের আরও অনেকে।
কালীঘাট কারখানা ঘাটে গেলেই চোখে পড়বে টেবিলে টেবিলে আছে কাগজের কিছু টুকরো। গ্রাহকরা আসছেন সারি বেঁধে। চেয়ারে বসা যুবকরা তাদেরকে ১০/২০/৫০/৩০০ টাকার বিনিময়ে একটি টোকেন দিচ্ছেন। কেউবা নিচ্ছেন কয়েকটি। এমনকি কেউ কেউ একসাথে ২০টি টোকেনও নিচ্ছেন। এ যেন কোনো যানবাহনের অথবা চিকিৎসকের টিকিট কাউন্টার। কিন্তু আসলে এই টোকেন হচ্ছে শিলং তির খেলার। একই জায়গায় বসে ঝান্ডু-মান্ডু জুয়া আসর। দল বেধেঁ জুয়াড়িরা ঝান্ডু-মান্ডুর খেলেন। এই জুয়ার বোর্ডের নেতৃত্ব দেন ১৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামি লীগের সহ-সভাপতি মজলাই মিয়ার ছেলে সমসু ও তার ভাই পাপ্পু,। এদের মূল কাজই হচ্ছে জুয়ার বোর্ড বসানো। বেপরোয়াভাবে জুয়াড়ীদের মদদ দিচ্ছেন গুটি কয়েক অসাধু পুলিশ ও রাজনৈতিক লেবাসধারীরা। তাদের ছত্রছায়ায় কিছুতেই বন্ধ হচ্ছেনা কালীঘাট কারখানা ঘাটের সাইফুল সিন্ডিকেটের এই জুয়ার বোর্ড।
এই সিন্ডিকেটের দেদার চলছে জুয়ার রমরমা ব্যবসা, প্রতিদিন লুটে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
বিগত কয়েক বছর ধরে একটি সাইফুল চক্র সিন্ডিকেট করে কারখানা ঘাটে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে জুয়ার আসর তৈরি করে কালীঘাট এলাকার মানুষকে বিপথগামী করছে। তাছাড়া নগরীতে এই সাইফুলের একাধিক জুয়ার বোর্ড রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কোতোয়ালি থানাধীন বন্দরবাজার পুলিশ ফাড়ির আইসি ও অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই চলে এসব জোয়ার বোর্ড। তাই অপরাধী চক্রের অপরাধ দেখেও নীরব ভূমিকা পালন করছেন কর্তৃপক্ষ।
জুয়াড়ি চক্র প্রকাশ্যে দিবালোকে এইসব স্পটে দুপুর ২ ঘটিকা থেকে মধ্যেরাত পর্যন্ত শীলং তীর, জান্ডু-মুন্ডু, নামক বোর্ড বসিয়ে রমরমা জুয়ার ব্যবসা চালানোর কারণে জুয়ায় আসক্ত নিম্ন আয়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে। এসব কারণে একদিকে যেমন বাড়ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অন্যদিকে বাড়ছে পারিবারিক বিবাদ-কলহ, চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড।
ভূক্তভোগীরা বলেন, রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন কিছু করার থাকে না। খোদ প্রশাসনই জুয়া বন্ধ করতে পারছে না। গরিব মানুষগুলো ফকির হয়ে যাচ্ছে আর জুয়ার বোর্ড মালিকরা প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এসব জুয়ায় নগরীর টোকাই, ভিক্ষুক, নিন্ম এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ঠেলাচালক, ভ্যানচালক, রিকশাচালক, সিএনজি চালক, বাসচালক, মাইক্রোবাস চালক, ট্রাকচালক, পিকআপ চালক, হেলপার, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, বেকার যুবক, বিভিন্ন কলোনির বিধবা মহিলা, কাজের বুয়া এবং তাদের সন্তানরা রাতারাতি বড়লোক হওয়ার লোভে এসব জুয়ার আসরে সারাদিনের ইনকাম বিনিয়োগ করে দিনশেষে প্রতারিত হয়ে খালি হাতে বাসায় ফেরছেন।
এ ব্যাপার অভিযুক্ত কালীঘাট কারখানা ঘাটের জোয়ার বোর্ডের মালিক সাইফুল ইসলাম এর ব্যবহৃত মোবাইলে বার বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
এ ব্যাপারে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক এর মুঠোফনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখনই লোক পাঠাইতেছি।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম জানান, অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।