কবে বন্ধ হবে গোয়াইনঘাটের সীমান্তের চোরাচালান বাণিজ্য?
দূর্গেশ সরকার বাপ্পী, (গোয়াইনঘাট থেকে):
সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই বিপুল অর্থের ভারতীয় চোরাই পন্য ঢুকছে অবাধে।
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী জনপদ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় বেশ কয়েটি ইউনিয়ন রয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) গোয়াইনঘাটের সীমান্ত এলাকা হতে বেশ কয়েক দিনযাবৎ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান করে ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা বিভিন্ন পন্য ও বাংলাদেশ থেকে পাচারকালে রসুন আটক করলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন চোরাকারবারিদের গডফাদাররা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানায় যায়, গোয়াইনঘাটের থানা পুলিশের ভুমিকা রয়েছে রহস্যজনক, সীমান্তের প্রতিটি ইউনিয়নের বিট অফিসারদের রয়েছে চোরাকারবারিদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ।
যার কারনে রাতের আঁধারে সীমান্ত এলাকা থেকে ভারত থেকে আসা অবৈধ পণ্য ট্রাকে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন জাগায়।
প্রতি দিন সন্ধ্যা হলেই সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচানীদের অভাধ বিচরন দেখা মিলে। স্থানীয় জনসাধারণ সঙ্গে কথা বলে জানাযায় সীমান্তের এলাকার গ্রামের মেঠোপথ গুলো চোরাচালানকারীরা নিরাপদ রোড় হিসাবে ব্যাবহার করে।
চোরাচালানিরা এলাকার প্রতাভশালীও বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যাক্তি হওয়াতে এলাকার লোকজন ভয়ে কিছু বলতে পারে না,
গত ৫ই আগষ্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের জেরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরে কিছুদিন বন্ধ ছিল সীমান্তের চোরাচালান।
বেশ কিছুদিন যাবৎ থেকে আবারও তৎপরতা শুরু হয়েছে, এবং চলছে নতুন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লাইনম্যান সিন্ডিকেট নিয়োগের তৎপরতা।
গোয়াইনঘাটের হাদারপার বাজার,রাধানগর বাজারে ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা গরুর হাট হিসাবে পরিচিত, সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় দেশি প্রজাতির গরুর চেয়ে ভারতীয় গরু বেশি।
উক্ত বাজারের অবৈধ গরুর ক্রয় রশিদ দেওয়ার জন্য রয়েছে বাজার সিন্ডিকেট। এইসব বাজার থেকে গরু পরিবহন সহজ হওয়ার কারণে দেশে বিভিন্ন জাগায় থেকে ক্রেতাদের সমাগম বেশি।
মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে চিনি ভর্তি গাড়ী, ভারতীয় গরুসহ ডি-আই, পিক-আপ গাড়ী আটকের খবর পাওয়া যায়,
কিন্তু আটককৃত গরুর ক্রয়কৃত রশিদ নিয়ে থানায় গেলেও বৈধতা পায় না রশিদটি, ক্রেতা ইজারদার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের দায়সারা উত্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীমান্তে এলাকা ভিত্তিক একাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন করে নিয়োগ দেওয়া হয় লাইনম্যান ।
ওই লাইনম্যান এক একটি করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। সেই সিন্ডিকেটের কোনো সদস্য বিজিবির গতিবিধি বা অবস্থান লক্ষ্য করেন।
বিজিবি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় টহলে গেলেই তারা সীমান্তে গিয়ে মাদক, ভারতীয় গরু, মহিষ, চিনি, কসমিটিকস,কিটসহ বিভিন্ন আমদানী নিষিদ্ধ পন্য নিয়ে আসে।
সেই গরু, চিনি সহ অন্যান্য পন্য আনতে গিয়ে ভারতীয় খাসিয়াদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে একের পর এক বাংলাদেশি নাগরিক ।
বিনিময়ে মাদক ও গরু ব্যবসায়ীদের ওই সিন্ডিকেটকে গরু প্রতি কমিশন দিতে হয়।
বিজিবি, ডিবি পুলিশ, থানা পুলিশের, নাম ভাঙ্গিয়ে সেই টাকা তুলে থাকেন কথিত লাইনম্যানরা।
এ বিষয়ে গোয়ানইঘাট থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা পণ্য ও মাদকের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে থানা পুলিশ।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি দেশের একটি অন্যতম সেরা পর্যটন স্পট।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর নাম ছড়িয়েছে গরু,মষিশ চিনি কিট,মাদক,কসমিটিকস সহ আমদানী নিষিদ্ধ বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালানের মূল রুট হিসেবে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা মাতুরতল, নকশিয়া পুঞ্জি , পিয়াইন ও ডাউকি নদী, জিরো পয়েন্ট, লামাপুঞ্জি, গুচ্ছগ্রাম, লালমাটি, সংগ্রামপুঞ্জি, তামাবিল, নলজুরী ও তালাবাড়ী দিয়ে ভারতীয় সবধরণের চোরাই পণ্য নিয়ে আসা হয়।
গোয়াইনঘাট উপজেলার স্থানীয় সচেতন মহলের মনে এখন একটি প্রশ্নই ঘোরপাক খাচ্ছে যে কবে বন্ধ হবে গোয়াইনঘাটের সীমান্তের চোরাচালান বাণিজ্য?