সি‌লেট সি‌টি ক‌র্পো‌রেশ‌ন নির্বাচ‌নে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দি‌লেন মেয়র আরিফ

নিজস্ব প্রতিবেদক::

 

আসন্ন ২১শে জুন অনুষ্ঠিতব্য সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ও টানা দুই বারের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আজ শনিবার (২০শে মে) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর ঐতিহাসিক রেজিস্টারি মাঠে অনুষ্ঠিত নাগরিক সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।সেই সা‌থে নগরবাসী‌কে ভোট কে‌ন্দ্রে না যাওয়ারও আহ্বান জানি‌য়ে‌ছেন তিনি।

 

এর আগে নগরীর কুমারপাড়ায় নিজ বাসভবন থেকে পদযাত্রা করে শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে যান। এ সময় তাঁর সামনে দুই শতাধিক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। মেয়রের সঙ্গে পদযাত্রায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা গেছে। মাজার জিয়ারত শেষে পদযাত্রা করে বেলা ৩টা ২২ মিনিটে তিনি রেজিস্টারি মাঠে পৌঁছান।

 

সমাবেশস্থলে পৌঁছানোর পর উপস্থিত জনতা হাততালি ও স্লোগান দিয়ে মেয়র আরিফুলকে স্বাগত জানান। এ সময় বিভিন্ন বয়সী মানুষ ‘আরিফুল হক চৌধুরীকে আবার মেয়র হিসেবে দেখতে চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

জনসভায় বক্তব্যকালে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আর্দশে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছি। আমার জীবন থাকতে এই দলের ক্ষতি হয় এমন কোন সিদ্ধান্ত নিবো না।

 

অনেকেই আমাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমি সেই সুযোগ কাউকে দিতে চাই না। এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। বিশেষ করে ইভিএম নিয়ে নগরের মানুষজন জানে না। এটা ভোট কারচুপির মহা আয়োজন। আমি বাংলাদেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, আমার মা জননী ও আমার শ্রদ্ধেয় আলেম-উলামাদের পরার্মশে এই নির্বাচন বর্জন করলাম।

‌এসময় আরিফ বলেন, অতীতে আপনারা আমার পাশে ছিলেন। আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় আপনারা আমর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি সেইসব কথা ভুলতে পারিনা। আমি আপনাদের সন্তান, আমি আপনাদের ভাই। আমি মেয়র না থাকলেও আপনাদের পাশে সবসময় থাকবো। আমাকে আপনারা ক্ষমা করে দিবেন।

আসন্ন নির্বাচনকে প্রহসনের উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এই মূহূর্তে সিলেট তথা সারাদেশেই নির্বাচনী কোন পরিবেশ নেই। আপত্তি সত্ত্বেও সিলেটে ইভিএমে ভোটগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে।

 

অথচ সিলেটের মানুষ ইভিএমের সাথে একেবারে অপরিচিত। এখানে ইভিএম নিয়ে আসাই ভোট ডাকাতির ইঙ্গিত। বর্তমান নির্বাচনও কমিশন সুষ্ঠু ভোট চায় না। তারা ডিজিটাল ভোট ডাকাতি চায়।

আরিফ বলেন, নির্বাচনে কারচুপির নীলনকশার অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে। একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আমার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এরকম অবস্থায় আমি নির্বাচনে যেতে পারি না। আমি বিএনপির সিদ্ধান্তের সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমি প্রহসনের নির্বাচনে প্রার্থী হবো না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়র আরিফ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নগরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আমার বাসায় গিয়ে আমাকে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করছেন। তাদের ‘এতিম অবস্থায়’ ফেলে না যাওয়ার অনুরোধ করছেন। আমি তাদের সকলের কাছে, এই নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। তবে মেয়র না থাকলেও এই নগরবাসীর যে কোন প্রয়োজনে, সকল ভালো কাজে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমি সবসময়ই থাকবো।

 

তিনি বলেন, আমি নির্বাচন করলে আপনারা দলে দলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আমাকে ভোট দিবেন। কিন্তু সেই ভোট অন্ধকারে কার কাছে যাবে সেটা আপনারা সবাই জানেন। আমি আপনাদের এই আমানত অন্ধকারে নিয়ে যেতে চাই না।

এ প্রহসনের নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করছি না। আমি আপনাদের আরিফ, বিএনপির অন্ধকারে হারিয়ে যাবো না।

নাগ‌রিক সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী প্রমুখ উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

 

প্রসঙ্গত- বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও গত এক মাস ধরে আরিফ তাঁর প্রার্থিতার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখেন। ফলে সিটি নির্বাচন ঘিরে তাঁকে নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনা তার অবসান তিনি নিজেই করলেন ।

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।