রাজধানীর মালিবাগ থেকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র খুলনা বিভাগীয় বিভিন্ন পদবীর ০২ জন নেতাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩

হরকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলাম (হুজি) কেন্দ্রীয় সংগঠন ১৯৮৪ সালে সোভিয়াতে-আফগান যুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দলটি প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায় ১০০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুতে এ দলকে দায়ী করা হয়। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বিদ্রোহকে সমর্থন করার জন্য এই গ্রুপটি অত্যন্ত পরিচিত। বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠির মধ্যে অন্যতম হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি) ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নাশকতামূলক হামলা চালায়। তাদের উল্লেখযোগ্য হামলাসমূহের মধ্যে রয়েছে ১৮ জানুয়ারি ১৯৯৯ সালে কবি শামসুর রহমানকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। ০৬ মার্চ ১৯৯৯ সালে যশোরের উদিচি সমাজে একটি বোমা হামলা চালায়।

০৮ অক্টোবর ১৯৯৯ সালে খুলনায় আহমাদিয়া মসজিদে বোমা হামলা চালায়। ২০ জুলাই ২০০০ তারিখে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকায় কমিউনিস্ট পার্টি সমাবেশে বোমা হামলা করে। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা পার্কে বাঙালি নববর্ষের উদযাপনে বোমা হামলা চালায়। ০৩ জুন ২০০১ তারিখে গোপালগঞ্জের একটি গির্জায় বোমা হামলা চালায়। ২০০১ সালের ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা করে। ২০০১ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর বাগেরহাটে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে বোমা হামলা করে। ২১ মে ২০০৪ তারিখে সিলেটে শাহ জালাল মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার লক্ষ্য করে গ্রæপ বোমাবর্ষণ করে।

২০০৪ সালের ২১ জুন সুনামগঞ্জে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের একটি দল বোমা হামলা করে। ২০০৪ সালের ০৭ আগস্ট সিলেটের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে এই দলটি হামলা চালায়। ২০০৪ সালের ২৪ শে আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ঢাকা আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে দলটি আক্রমণ করেছিল। ২৭ জানুয়ারি ২০০৫ তারিখে শাহ এএমএস কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে আক্রমণ করেছিল এবং মাঠে প্রস্তুত ছিল হরকাতুল জিহাদ এর প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা। ২০০৪ সালে র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে র‌্যাবের জঙ্গি বিরোধী অভিযানে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের গ্রেফতারের ফল¯্রুতিতে ২০০৬ সালের দিকে দলটি প্রায় নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পড়ে এবং এদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে মাদক, অস্ত্র, জঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর সাদা পোশাকের গোয়েন্দা দল কুষ্টিয়া, মাগুরা এবং যশোর জেলা হতে গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র সক্রিয় সদস্য ১। আব্দুল কুদ্দুস (৫৭), পিতা-মৃত আমির আলী মোল্লা, সাং-মির্জাপুর, থানা-বাঘারপাড়া, জেলা-যশোর এবং ২। মোঃ সিরাজুল ইসলাম @ সালাউদ্দিন (৩৫), পিতা মোঃ সেকেন্দার মোল্লা, সাং-বারান্দীপাড়া, থানা-কোতয়ালী, জেলা-যশোরদেরকে রাজধানীর মালিবাগে গোপন বৈঠকের প্রাক্কালে ১২/০২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ রাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকৃত আব্দুল কুদ্দুস হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র যশোর জেলার আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। পাশাপাশি সে যশোর জেলার শেকহাটি এলাকায় ‘‘ওবায় বিন কাব’’ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করে জীবিকা নির্বাহ করে। তার নামে ২০০৭ সালে ঝিনাইদহ জেলার সদর থানায় একটি হরকাতুল জিহাদ সংশ্লিষ্ট জঙ্গি মামলা রুজু হয় এবং বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক উক্ত মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। সে ২০০৭ সাল থেকে ১০ বছর ০২ মাস সাজা ভোগ করে ২০১৮ সালে জেল হাজত থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়ে দল পূণঃগঠনে যশোর, মাগুরা এবং নড়াইল জেলার বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় নিয়মিত হালাখা (গোপন বৈঠক) করতে থাকে। উক্ত হালাখা সমূহে ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করত। হালাখার স্থানসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যশোর সীমা টেক্সটাইলের মসজিদ, যশোর নরের মহাসড়কের বেইলি ব্রিজের ডান পাশের ছোট মসজিদ, যশোর নিউমার্কেট এলাকার মারকাজ মসজিদ প্রভৃতি। ২০২২ সাল নাগাদ সে মোটামুটি ভাবে অত্র এলাকায় একটি শক্তিশালী হুজি-বি ইউনিট গঠন করতে সক্ষম হয়। কুদ্দুস মাদ্রাসার যুবদের মনে সমাজ বিদ্বেষী মনোভাব ছড়িয়ে দিত এবং প্রচলিত কলুষিত সমাজের বিরুদ্ধে জঙ্গী তৎপরতা চালানোর মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার কথা বলে তাদের মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে হুজি-বি’তে অংশগ্রহণ করাত।

গ্রেফতারকৃত সিরাজুল ইসলাম ২০০১ সালে যশোর কোল্ডস্টোরেজের নাইটগার্ড হিসেবে চাকুরী করত। সে চাকুরী থাকা অবস্থায় ২০০১ সালে উক্ত কোল্ডস্টোরেজের নাইট গার্ডের তৎকালীন প্রধান মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি) সংগঠনে যোগদান করে। সে যশোর জেলার প্রধান হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র রিক্রুটার এবং অর্থনৈতিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। এছাড়াও বিদেশী বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সাথে যোগসাজসে     হুজি-বি’র অভ্যন্তরীন ব্যয়ভার বহনের অর্থ যোগানের ব্যবস্থাও সে করত বলে জানায়। সে ছদ্মবেশে রং মিস্ত্রির কাজ করে এবং হুজি-বি’র সাংগঠনিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল গোয়েন্দা নজরদারী চালায়। ২০১০ সালে তার নামে একটি বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। উক্ত মামলায় যশোর কোতয়ালী থানা কর্তৃক ২০১১ সালে ধৃত হয় এবং ২০১২ জামিনে মুক্ত হয়ে মামলাটি আর কোন শুনানিতে হাজির হয়নি। তখন থেকেই সে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় পলাতক অবস্থায় আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে থাকে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির প্রকৃত নাম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম হলেও আত্মগোপনে থাকাকালীন সে সালাউদ্দিন@রিয়াজুল ইসলাম@বিশ্বাস@আমির@আব্দুল্লাহ প্রভৃতি ছদ্মনাম ব্যবহার করত।

২০২২ সাল থেকে  জঙ্গী আব্দুল কুদ্দুস এবং সিরাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকা আরও বেশ কয়েক জন শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গী সদস্যবৃন্দ মিলে একটি বড় ধরনের জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা করে আসছিল। সেই পরিকল্পনাকে সফল করার নিমিত্তে ইতোমধ্যে তারা বেশ তৎপরতা চালাতে শুরু করে এবং নিয়মিত হালাখার মাধ্যমে তাদের কর্ম পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, কার্যপদ্ধতি এবং কর্মী সংগ্রহের কাজ ব্যপকভাবে বেগবান করে। এই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং নাশকতামূলক এই জঙ্গী গ্রæপটির কার্যক্রমের সন্ধান পায়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কুষ্টিয়া, যশোর এবং মাগুরা এলাকায় তথ্য সংগ্রহের জন্য গমন করে। সোর্সের দেয়া তথ্য, গোয়েন্দা নজরদারি এবং ডিজিটাল সার্ভেইলেন্স এর মাধ্যমে মালিবাগ এলাকা থেকে গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার সময় তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

 

 

 

বিজ্ঞপ্তি ।।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।