নগরীতে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের মিছিল: আটক ৭

আওয়ামী লীগের পলাতক চার নেতার বাসায় হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক::

সিলেটে ফের ঝটিকা মিছিল করেছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ। গতকাল বুধবার (২রা মার্চ) নগরীর ধোপাদীঘিরপাড় এলাকায় মিছিল ও লিফলেট বিতরণ করে তারা।

জানা যায়, সকালে নগরীর ধোপাদীঘিরপাড় এলাকায় ১৫/২০ জনের একটি দল ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিল বের করে।

 

ব্যানারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের ছবি ছিল এবং তাঁর নামে স্লোগান দিতেও শোনা যায়।

পরে এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভিডিওটি আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজেও আপলোড করা হয়েছে।

 

নগরীর পাঠানটুলা এলাকার ছাত্রলীগের ক্যাডার সাফায়েত এই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। মিছিলের অধিকাংশই নগরীর বাইরের এলাকার এবং পলাতক নাদেলের অনুসারী।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর ধোপাদিঘীর সিটি করপোরেশন জামে মসজিদের সামনে হঠাৎ করেই ১৫/২০ জনের একটি গ্রুপ ব্যানার নিয়ে মিছিল বের করে।

মসজিদের সামন থেকে ওয়াকওয়ে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। পুলিশ ও ছাত্র জনতা খবর পাওয়ার আগেই এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যেই তারা মিছিল শেষ করে সটকে পড়ে।

এর আগেও নগরীর দু তিন স্থানে মিছিল ও লিফলেট বিতরণ করেছে ছাত্রলীগের দু/তিনটি ক্যাডার গ্রুপ।

এ ব্যাপারে এসএমপির এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সুরমা টাইমস কে বলেন,নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মিছিলে অংশগ্রহণের দায়ে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন নিষিদ্ধ সংগঠনটি চোরাগোপ্তা/ঝটিকা মিছিল করেই লোকচক্ষুর আড়াল হয়ে যায়। সকালে পুলিশ গিয়ে তাদের খুঁজে পায়নি। এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে মিছিল করে তারা পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে পুলিশ নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে ৭ জনকে গ্রেফতার করে,

গ্রেফতারকৃতরা হলো, মদিনা মার্কেট এলাকার গার্ডেন গলি বাসার (নং-২৫/০৫) বাসিন্দা এবং সুনামগঞ্জের দিরাই ভাটিপাড়া গ্রামের রাহাত নুরের ছেলে জহিরুল ইসলাম (১৯),

পাঠানটুলা এলাকার আমির খান গলির বাসিন্দা (বাসা নং-৩৭/০৫ অগ্রনী) এবং সুনামগঞ্জের দিরাই থানার মাটিয়াপুর গ্রামের জালাল আহমদের ছেলে সোহেল আহমদ সানী (১৮),

সিলেটের টুকেরবাজার নালিয়া এলাকার রমনী মোন করের ছেলে রবিন কর (২৩),

নাইওরপুল এলাকার বঙ্গবীর ব্লক-বি-৮২ এর বাসিন্দা ফারুক আহমদের ছেলে ফাহিম আহমদ (২৩),

শামীমাবাদ এলাকার রহমান ভিলার বাসিন্দা নুর মিয়ার ছেলে রাজন আহমদ রমজান (২৩),

পাঠানটুলা এলাকার আমির খান গলির বাসিন্দা (বাসা নং-১৫৪) মৃত হাফিজ খানের ছেলে বশির খান লাল (৫০) এবং খাদিমপাড়া এলাকার মতিন মিয়ার ছেলে সোয়েব আহমেদ (২৫)।

ভিডিও ফুটেজ দেখে সাফায়েত নামের একজনকে তখন শনাক্ত করা গেছে। যিনি পাঠানটুলার এলাকার দুই বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের দুই নেতার শেল্টারে মিছিলটি বের করেছে বলে লোকজন অভিযোগ করছেন।

মিছিলের সময় কয়েকজনের মুখে মাস্ক পরা ছিল।বাকীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

মিছিলকারীদের মুখে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পলাতক সাংগঠনিক সম্পাদক নাদেলের নামেও স্লোগান শোনা যায়। শেখ হাসিনার পাশাপাশি ব্যানারেও তার ছবি ছিল।

ইতিপূর্বে নাদেল তার অনুসারী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগকে দিয়ে নগরীতে জঙ্গি মিছিল করিয়েছেন।

এর আগে নাদেল পালিয়ে কলকাতায় বসে ফেইসবুক লাইভে ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেখ হাসিনা ফিরবেন বলে উস্কানি দিয়েছেন।

গতকাল বুধবার সকালে নগরীতে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের মিছিল বের হওয়ার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার,

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সাবেক সিসিক কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার (২রা এপ্রিল) সন্ধ্যারাতে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকাস্থ শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বাসায় সন্ধ্যার পর বেশ কয়েকজন মিছিল সহকারে এসে ঢুকে পড়ে। এসময় তারা বাসার সিসি ক্যামেরা, ল্যাপটপ ভাংচুর করে।

এদিকে, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায়ও হামলার ঘটনা ঘটে।

 

একইভাবে হামলাকারীরা সাবেক এমপি রঞ্জিত সরকার ও সাবেক কাউন্সিলর আফতাব হোসেনের বাসায়ও হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে এসএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে মিছিলকারীদের ৭ জনকে গ্রেফতার করেছি। বাকীদের গ্রেফতারেও আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

আওয়ামীলীগের নেতাদের বাসায় হামলার ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।

এ বিষয়ে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

এ বিষয়ে এসএমপির জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। শুনেছি বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা এই হামলা চালিয়েছে।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।