টাকা ছাপিয়ে ফের ঋণ দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

সুরমা টাইমস ডেস্ক :

সমালোচনা উপেক্ষা করে টাকা ছাপিয়ে আবারও ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে আরও আড়াই হাজার কোটি টাকা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এ নিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হলো,

যদিও ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলেন, টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংককে ধার দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত সরকারের সময়ে রাষ্ট্রীয় মদদে এস আলমসহ কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ঋণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে।

 

এ কারণে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই ব্যাংকগুলো। কয়েকটি ব্যাংকের বাজে অবস্থার প্রভাব পুরো খাতে পড়তে পারে– এমন আশঙ্কায় গত নভেম্বরে ছয়টি ব্যাংককে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে জানুয়ারিতে আরও ৪ হাজার ৯১০ কোটি টাকা দেয়।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে দেড় হাজার এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে দিয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা।

 

গত নভেম্বরসহ এসআইবিএল সাড়ে ৫ হাজার এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পেল সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংক সাড়ে ৮ হাজার, ন্যাশনাল ব্যাংক ৫ হাজার, ইউনিয়ন ব্যাংক ২ হাজার ও গ্লোবাল ইসলামী

ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে। এবি ব্যাংক ২০০, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ২০০ ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি টাকা।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা ইস্যুকে ‘মানি প্রিন্টিং’ বা ‘টাকা ছাপানো’ বলা হয়। অবশ্য এই ছাপানোর অর্থ কাগুজে নোট ছেপে ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছে তেমন না।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা স্থানান্তর করে। তারা সমপরিমাণ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিতে পারে। প্রয়োজনে অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে পারে।

নোট ছাপিয়ে দিলে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়ে। যে কারণে টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে না দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে গভর্নর আগের অবস্থান বদলে জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলেই দুর্বল ব্যাংককে টাকা দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি টাকা দিলে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়ে। তবে ব্যাপক মাত্রায় যেন প্রভাব না পড়ে, সেজন্য একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত টাকা তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

ট্রেজারি বিল ও বন্ডের পাশাপাশি দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে টাকা তুলছে। যদিও এ উদ্যোগে তেমন সাড়া নেই। সামগ্রিকভাবে গত বছর ব্যাংক খাতের আমানত বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অধিকাংশ ব্যাংক তারল্য সংকটে চলায় এমন হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ব্যাংক খাতে আস্থার সংকট চলছে। আস্থা বাড়ানোর জন্য আমানতকারীকে বোঝাতে হবে, যে কোনো অঙ্কের টাকা ব্যাংক ফেরত দিতে সক্ষম। এ কারণেই টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

 

বিভিন্ন উপায়ে যে পরিমাণ টাকা উঠে আসছে, বাজারে তার কম দেওয়া হচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ধারের প্রভাব তেমন নেই মূল্যস্ফীতিতে,

গত নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আমরা টাকা ছাপাব না। আগের সে অবস্থান থেকে আমি সাময়িকভাবে সরে এসেছি, পুরোপুরিভাবে নয়।

 

আমরা সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে যে পরিমাণ তারল্যের জোগান দেব, বাজার থেকে সমপরিমাণ টাকা বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে তুলে ফেলব।

‘এক হাতে টাকা দেব, অন্য হাতে বাজার থেকে তুলে নেব। এ কারণে প্রক্রিয়াটিকে পুরোপুরি টাকা ছাপানো বলা যাবে না। বাজারে তারল্যের স্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।’

বাজার থেকে টাকা তুলে নেয়ার জন্য ৯০ ও ১৮০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিল প্রবর্তনের বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।

 

গভর্নর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে। এক ব্যাংকের টাকা অন্য ব্যাংকে গেলে সেখান থেকে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে তুলে ফেলব, যাতে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ভারসাম্য ঠিক থাকে, তারল্য পরিস্থিতি ঠিক থাকে।

 

‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের যে প্রচেষ্টা, সেটি থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি না। নতুন এ প্রক্রিয়ার কারণে গ্রাহকদের কোনো অসুবিধা হবে না। আবার বাজারকেও অস্থিতিশীল হতে দেব না।’

 

তবে গভর্নরের সেই কথার সঙ্গে বাস্তবে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ দুই মাসে ১০টি নিলামে বাজার থেকে উত্তোলন হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।