ডিজিটাল আইন হতে হবে স্বচ্ছ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাবান্ধব

সুরমা টাইমস ডেস্ক :

বাংলাদেশ ব্যাপক পদ্ধতিগত এবং কাঠামোগত রূপান্তরের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তনশীল
পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা এবং ডেটা সুরক্ষার মতো আইনি সংস্কারও রয়েছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডিজিটাল শাসননীতি এবং নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর সংস্কারের প্রয়োজনীয়
এবং সময়োপযোগী প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি জানিয়ে, আমরা, স্বাক্ষরিত সংগঠনগুলো, উদ্বিগ্ন যে অনেকটা পূর্ববর্তী প্রশাসনের মতোই এই উদ্যোগগুলো পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা বা অন্তর্ভুক্তিমূলক পরামর্শ ছাড়াই দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সাইবার প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫ (CPO) এবং পার্সোনাল ডেটা প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫ (PDPO) এর খসড়া বাংলাদেশের সাংবিধানিক কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর অধীনে থাকা মৌলিক অধিকারগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সাইবারস্পেস শাসন ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

 

এর পরিবর্তে, এই প্রস্তাবিত অর্ডিন্যান্সগুলো অজ্ঞাত, অস্পষ্ট এবং/অথবা অতিরিক্ত বিস্তৃত শব্দ এবং ধারা ব্যবহার করছে, বিশেষ করে মানবাধিকার এবং মিডিয়া সংগঠনগুলোকে দমন করতে ভুল ব্যাখ্যা, অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অপব্যবহারের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। ডিজিটাল সার্ভিস, মার্কেট এবং কমিউনিটিগুলোর ক্রস বর্ডার প্রকৃতির বিবেচনায়, এই খসড়াগুলো আইনের শিষ্টাচার এবং আইনের সংঘাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না সেই বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।

 

সংসদীয় ব্যবস্থা এবং এর প্রতিষ্ঠিত সুরক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে স্থগিত থাকায়, স্বচ্ছতা, জনসম্মুখে দায়বদ্ধতা এবং মানবাধিকার মেনে চলার বিষয়গুলো আরও ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

অস্বচ্ছ খসড়া প্রক্রিয়া অর্থপূর্ণ জনসম্পৃক্ততাকে বাধাগ্রস্ত করে :—

আমরা উদ্বেগের সাথে জানাচ্ছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশকিছু প্রস্তাবিত খসড়া বিশেষ করে সাইবার প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫ (CPO) এবং পার্সোনাল ডেটা প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫ (PDPO) এর প্রবর্তন, পর্যাপ্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ, শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া চক্র বা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এবং বৈশ্বিক সর্বোত্তম অনুশীলনের ভিত্তিতে আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা ছাড়াই বিবেচনাধীন।

যেমন, CPO-এর বিভিন্ন খসড়া সংস্করণ পূর্ববর্তী সরকারের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০১৮ (DSA) এবং সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০২৩ (CSA)-এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।

যদিও CPO খসড়া সংস্করণ ডিসেম্বর, ২০২৪ এ তিনদিনের জন্য জনসাধারণের পরামর্শের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এবং পরবর্তীতে ২২ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে আবারও দুই সপ্তাহের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তবুও পরামর্শ প্রক্রিয়া খসড়া সংস্করণের মধ্যে পরিবর্তনগুলোর জন্য স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করেনি বা আগের পরামর্শগুলোর ফলাফল ব্যাখ্যা করেনি।

 

 

আরও উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ (BTRA) এর প্রস্তাবিত সংশোধনী—যা নজরদারি, আটক এবং ইন্টারনেট বন্ধ করার অনুমতি দেয়— এখনও জনসাধারণের পরামর্শের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি।

 

ফলস্বরূপ, এই প্রস্তাবিত অর্ডিন্যান্সগুলো পর্যালোচনা করতে বা মানবাধিকার এবং অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন করতে সিভিল সোসাইটি সংগঠন, আইন ও সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ, প্রভাবিত সম্প্রদায়সমূহ, ইনন্ডাস্ট্রি প্রতিনিধি, প্রযুক্তিবিদ, একাডেমিক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা যথাযথভাবে সক্ষম হচ্ছেন না।

 

প্রস্তাবিত অর্ডিন্যান্সে অস্পষ্ট এবং অতিরিক্ত বিস্তৃত ধারা মৌলিক অধিকারের জন্য হুমকিস্বরুপ:—

বর্তমান খসড়াগুলো অজ্ঞাত, অস্পষ্ট এবং/অথবা অতিরিক্ত বিস্তৃত শব্দ এবং ধারা ব্যবহার করছে, যা যথাযথ প্রসিডিউরাল সেইফগার্ডের অভাবে ভুল ব্যাখ্যা এবং অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অপব্যবহারের জন্য বিশেষত প্রান্তিক সম্প্রদায়, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী , সাংবাদিক, অধিকার কর্মী এবং সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।

যেমন, “অশ্লীল ভিডিও” এবং “যৌন হয়রানি” শব্দগুলোর সঠিক সংজ্ঞা CPO-তে দেয়া হয়নি, যেগুলোর জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড পর্যন্ত দণ্ডনীয় শাস্তি রয়েছে।

 

এদিকে, সাইবার সন্ত্রাসবাদকে অতিরিক্ত বিস্তৃত এবং অস্পষ্ট শব্দে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে জাতীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করা, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা, বৈদেশিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হওয়া, বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বা ব্যক্তির উপকারে আসার মত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার জন্য দশ বছরের কারাদণ্ড পর্যন্ত শাস্তি হতে পারে।

তেমনি, ক্রসবর্ডার স্থানান্তর নিষেধাজ্ঞার মত বিষয়ের অধীনে থাকা “গোপন ব্যক্তিগত তথ্য” শব্দটির সংজ্ঞা PDPO-তে দেয়া হয়নি। সাংবিধানিক ডকট্রিন অনুসারে, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রভাব ফেলা আইনগুলো যথাযথভাবে নিশ্চিত এবং পূর্বানুমানযোগ্য হওয়া উচিত। একইসাথে আইনি ম্যান্ডেটগুলো যুক্তিসঙ্গত, বৈষম্যমুক্ত এবং বেআইনি বা মনগড়া না হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া উচিত, যাতে মানুষ তাদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করার জন্য একটি স্পষ্ট আইনি মানদণ্ড পেতে পারে।

 

স্পষ্টভাবে, সিরাকুসা নীতি অনুযায়ী মানবাধিকার আইন স্পষ্ট ও সুগম হওয়া উচিত জাতিসংঘের সাধারণ মন্তব্য নং ৩৪ এ বলা আছে, "আইন এমনভাবে তৈরি হতে হবে যাতে একজন ব্যক্তি তার আচরণ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে… এবং এটি কোনোভাবেই এমন ক্ষমতা দেবে না, যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করার জন্য একতরফাভাবে প্রয়োগ করা যায়।”

একইভাবে, জাতিসংঘের সাধারণ মন্তব্য নং ৩৫ বলে, স্বেচ্ছাচারের অভাব মানে হলো যুক্তিসঙ্গততা,
পূর্বানুমানযোগ্যতা, প্রয়োজনীয়তা এবং অনুপাতিকতা। এই কারণে, আমরা উদ্বিগ্ন যে এই বিধানগুলো
আইসিসিপিআর-এর ৯(৪) ও ১৯(২) এবং (৩), মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১৯ এবং ২৯(২) এবং বাংলাদেশ সংবিধানের ২৬, ২৭, ৩১, এবং ৩৯(২) এর অধীনে অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে।

গোপনীয়তা লঙ্ঘনকারী বিধানগুলো মানবাধিকার বিষয়ক উদ্বেগ বাড়াচ্ছে:—

বর্তমান খসড়া আইনগুলোর মধ্যে কিছু বিধান রয়েছে যা— বিটিআরএ এবং ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবাদাতাদের লাইসেন্সিং কাঠামো অনুসরণ করে যা কিনা নাগরিকদের গোপনীয়তা অধিকারকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

 

উদাহরণস্বরূপ, CPO পুলিশকে সার্চ ওয়ারেন্টসহ ট্রাফিক তথ্য সংগ্রহের অনুমতি দেয়, যদি তাদের বিশ্বাস থাকে যে অপরাধ ঘটেছে, ঘটছে বা ঘটতে পারে। কিন্তু এই অনিশ্চিত এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিস্তৃত শর্তগুলো সাবজেক্টিভ ইন্টারপ্রিটেশন, অপব্যবহার এবং ভবিষ্যতে অপরাধ ঘটার সম্ভাবনা নিয়ে নজরদারি চালানোর সুযোগ তৈরি করে এবং এতে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি হয়।

 

আলটিমেটলি এটি সিকিউরিটি অধিকারের মধ্যকার ব্যালেন্স নষ্ট করে। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এমন শক্তিশালী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে,

 

যার ফলে তারা কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই সন্দেহের ভিত্তিতে যে কোনো জায়গায় প্রবেশ ও তল্লাশি করতে
পারে, যদি তারা বিশ্বাস করে যে একটি অপরাধ—যেমন হ্যাকিং বা সাইবার আক্রমণ— ঘটেছে, হচ্ছে বা ঘটতে পারে, অথবা যদি তারা মনে করে যে প্রমাণ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।

 

এই ধরনের বিধান আরও বিভ্রান্তিকর এবং আইনপ্রয়োগকারীদের ক্ষমতা অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়, যা গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এক্ষেত্রে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে বাধ্য যার মধ্যে যেকোন তথ্যপ্রকাশ করাও অন্তর্ভুক্ত তবে এসব তথ্য সুরক্ষা করা বা সরকারের অতিরিক্ত ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করার জন্য কোন স্পষ্ট ব্যবস্থা নেই।

একইভাবে, PDPO তেও গোপনীয়তা সুরক্ষার জন্য বিশেষ কোনকিছু উল্লেখ নেই। বিশেষ করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়েছে, যা রাষ্ট্রের কর্মকতাদের তথ্য সংগ্রহ ও পরিচালনায় দায়মুক্তি দিয়ে দেয়।

 

এই ছাড়ের ফলে পারপাস লিমিটেশন, ডাটা মিনিমাইজেশন এবং সম্মতির মত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষা নীতিগুলো উপেক্ষা করা হয়, এবং এটি কর্তৃপক্ষকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়া এবং সংরক্ষণ করতে কোনো বিধিনিষেধ ছাড়া অনুমতি দেয়।

 

এই ধরনের সিস্টেমেটিক লুপহোল সরকারের নজরদারি ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে, যা অতীতে গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ হয়েছে।

 

এছাড়া, প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সব ডেটা কন্ট্রোলার এবং প্রোসেসরদের একটি পাবলিক রেজিস্টারে নাম লেখাতে হবে, যেখানে তাদের তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়া করার বিস্তারিত থাকবে। এটা স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য হলেও, এটি গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি করছে।

 

বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান সংবেদনশীল তথ্য, ব্যবসায়িক গোপনীয়তা বা গোপন বাণিজ্যিক তথ্য পরিচালনা করছে, তাদের জন্য এটা বিপদজনক। এর ফলে সাইবার আক্রমণ, গুপ্তচরবৃত্তি এবং হয়রানির ঝুঁকি বাড়ছে, বিশেষ করে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং অ্যাকটিভিস্টদের জন্য।

 

আমরা উদ্বিগ্ন যে, এই বিধানগুলো অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি, অতিরিক্ত নজরদারি এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন ঘটাতে পারে, যা আইসিসিপিআর-এর ১৭ ধারা, বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ১২ ধারা এবং বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৩ ধারা লংঘন করে।

খন্ডিত সংস্কার উদ্যোগ ডিজিটাল শাসন ব্যবস্থার একটি পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গিকে বাধাগ্রস্ত করে: সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য সুরক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়া হলেও, আমরা উদ্বিগ্ন যে, ডিজিটাল শাসন ব্যবস্থার সংস্কারের পদক্ষেপগুলো খুবই সীমিত, একক এবং খণ্ডিত।

 

এই জটিল আইনগুলোর প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো শুধু তাৎক্ষণিক সমাধান এবং একক বিষয় নিয়ে কাজ করছে, কিন্তু ডিজিটাল শোষণ এবং সাইবার নিরাপত্তার মূল সমস্যা সমাধান করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

যেমন, শিশু আইন, ২০১৩, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন, ২০০০, এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ নারী এবং শিশুদের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক অত্যাচারের সুরক্ষা দেয়, তবে এই আইনগুলোতে শিশুদের যৌন শোষণমূলক উপাদান এবং প্রযুক্তি-নির্ভর লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলায় শক্তিশালী বিধান এবং প্রয়োগ ব্যবস্থা নেই।

 

যদিও CPO তে নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে করা কিছু অপরাধের জন্য শাস্তি বাড়ানো হয়েছে, তবে এর প্রয়োগ ব্যবস্থা দুর্বল এবং এক্সট্রা টেরিটোরিয়াল লিমিটেশন এর কার্যকারিতা কে সীমাবদ্ধ করে। নতুন আইন তৈরি না করে,

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, উল্লিখিত আইনগুলোতে সংশোধন এনে ডিজিটাল হুমকি মোকাবেলা করতে পারে এবং নারী ও শিশুদের অনলাইন হওয়া ক্ষতি থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।

যদি বর্তমান সরকার একটি ব্যাপক কৌশল না নিয়ে শুধুমাত্র একক সমস্যার সমাধানে মনোযোগ দেয় তাহলে সেটি দুর্বল, খন্ডিত এবং অকার্যকর আইন তৈরি করবে যা ডিজিটাল বাজার এবং পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে পারবে না।

প্রস্তাবনা:—

আমরা, নিচে স্বাক্ষরিত সংগঠনগুলো, বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ডিজিটাল শাসন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য তাদের পদ্ধতিগুলো পুনরায় পর্যালোচনার অনুরোধ করছি, যাতে আইনগুলো মানবাধিকারভিত্তিক, নাগরিককেন্দ্রিক এবং দূরদর্শী হয়, একইসাথে স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্ত এবং প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণ পদ্ধতির মাধ্যমে তৈরি হয়।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৩(১) ধারার অধীনে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই আইনগুলো সংসদীয় আইনের মধ্যে রাখার এবং জনগনের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বে রয়েছে।

বিশেষভাবে, আমরা সুপারিশ করছি:—

বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত উদ্দেশ্য অনুযায়ী, CSA আইন বাতিলের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিন এবং এই আইনের পাশাপাশি এর পূর্ববর্তী আইন ডিএসএ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ধারা ৫৭ এর অধীনে দায়ের করা সমস্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অন্যান্য ক্ষতিকর মামলা প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুন।

 

সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করুন, এবং অনলাইন নিরাপত্তা ও তথ্য সুরক্ষা সহ, বহুমুখী এবং জটিল ডিজিটাল হুমকি কমাতে একটি পরামর্শ প্রক্রিয়া তৈরি করুন।

বিটিআরএ এবং ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর অধীনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অতিরিক্ত ক্ষমতা এবং অপব্যবহার রোধে আরও শক্তিশালী পদ্ধতিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করুন, এবং তাদের পর্যবেক্ষণ, ডেটা আটকানো ও প্রবেশাধিকার বিষয়ে স্পষ্ট আইনি সীমাবদ্ধতা আরোপ করুন।

আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরামর্শ নিশ্চিত করুন, খসড়া আইন এবং সংশোধনীগুলো যথাযথভাবে আগাম বিজ্ঞপ্তি সহ প্রকাশ করে যাতে জনসাধারণের সাথে অর্থপূর্ণ পরামর্শ করা যায়, শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ ব্যবস্থা তৈরি করুন যাতে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের মতামতকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। একইসাথে খসড়াগুলোর মধ্যে আনা পরিবর্তনগুলোর কারণ ব্যাখ্যা করুন।

সব সংস্কার উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করুন, এবং নিশ্চিত করুন যে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, এবং গোপনীয়তার উপর যে কোনো বিধিনিষেধ কঠোরভাবে আইসিসিপিআর, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র, এবং বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়।

 

বিশেষভাবে, আমরা সুপারিশ করছি: আইনি শব্দগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা, অস্পষ্ট এবং অতিরিক্ত ধারাগুলো সরিয়ে ফেলা, এবং মৌলিক অধিকার সুরক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রাখতে নিয়মিত পর্যালোচনা ও স্বাধীন প্রভাব মূল্যায়নের প্রতিশ্রুতি দিন, যাতে কোনো অপব্যবহার সম্ভব না হয়।

 

ডিজিটাল শাসন ব্যবস্থায় একটি পূর্ণাঙ্গ এবং সঙ্গতিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করুন, যাতে গঠনগত দুর্বলতাগুলো মোকাবেলা করা যায়।

 

একক এবং নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক বিধিনিষেধের বাইরে গিয়ে একটি বিস্তৃত কাঠামো তৈরি করুন, যা প্রতিযোগিতা, ভোক্তা সুরক্ষা, অনলাইন নিরাপত্তা, প্ল্যাটফর্ম লায়াবিলিটি , ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস, গোপনীয়তা, তথ্য সুরক্ষা, ক্রস বর্ডার তথ্য প্রবাহ এবং উদীয়মান প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণসহ সব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।

 

এর মাধ্যমে একটি সুষম, মানবাধিকার-সম্মত এবং উদ্ভাবন-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করুন, যা নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এবং একই সাথে দায়বদ্ধ কর্পোরেট ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করবে।

এই আইনগুলোর অধীনে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি, বাংলাদেশ ডেটা প্রোটেকশন বোর্ড, এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন, যেন স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং শক্তিশালী তদারকি থাকে তা নিশ্চিত করুন।

তাদের কার্যক্রমগুলো জনসাধারণের কাছে দায়বদ্ধ হতে হবে, এবং সিদ্ধান্তগুলো—বিশেষ করে যেগুলো নাগরিকদের অধিকারকে প্রভাবিত করে সেগুলো স্বাধীন পর্যালোচনার আওতায় পড়তে হবে।

 

 

 

ARTICLE 19 এর প্রতিবেদন::—

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।