মফস্বল সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা

উত্তম কুমার পাল হিমেল,সাবেক সভাপতি,নবীগঞ্জ প্রেসক্লাব,হবিগঞ্জঃ

সংবাদপত্র হলো সমাজের দর্পন, আর সাংবাদিকরা হলেন জাতির বিবেক। সমাজের অসংগতি দূর করতে এবং অবক্ষয় রোধে সাংবাদিকরা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। সাংবাদিকতা পেশা এমনিতেই চ্যালেঞ্জের, তার ওপর আবার মফস্বল সাংবাদিকতা।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় সাংবাদিকতায়। বিভিন্ন প্রকার হুমকি, মামলা-হামলার শিকার হতে হয় যে পেশায় সেটাই হলো সাংবাদিকতা। তবে ঝুঁকি থাকলেও অত্যন্ত সম্মানজনক পেশা এটা। সাংবাদিকদের সমাজের দর্পণ বা আয়না বলা হয়। তবে হলুদ সাংবাদিকদের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।
এরা প্রকৃত সাংবাদিকদের সম্মানহানি করে থাকে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। একটা সংবাদ তৈরি করতে হলে ছুটতে হয় একেবারে তৃণমূলে পর্যায়ে । অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় মফস্বল সাংবাদিকদের।
দুর্নীতি, অনিয়মের সংবাদ তৈরি করতে হুমকি বা হামলার শিকার হতে হয়। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন বা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সংবাদ হলেই অবস্থা কিছুটা অন্যরকম হয়। মফস্বল এলাকায় সাংবাদিকদের তেমন নিরাপত্তা দেওয়ারও কেউ থাকে না বললেই চলে।
অনেক সময় নিউজ প্রকাশিত হওয়ার কারনে মামলাও হয়। অনেক সময়  কিছু কিছু ব্যতিক্রম ঘটনাও ঘটে।
যেমন- পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আগে কোনো বিরোধ থাকলে তুচ্ছ কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাতকড়াও পরানো হয়। আসলে সাংবাদিকদের জন্য চরম লজ্জাজনক বিষয় এটা। সারাদিন ছুটতে হয় সংবাদের জন্য।
উপজেলা পরিষদ, পৌর পরিষদ, থানা, স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটতে হয় মফস্বল সাংবাদিকদের। এভাবেই চলছে মফস্বল সাংবাদিকতা।
তবে এভাবে চললে হবে না। সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য আইন পাস করা উচিত এবং আইনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আইনের পাশাপাশি সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে । কেননা একতাই বল।
একত্রে থাকলে শক্তি পাওয়া যায় এবং প্রতিপক্ষ ভীতচিত্ত অবস্থায় থাকে। দেশে দিন দিন সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন বেড়েই চলেছে। সাগর-রুনি হত্যার কোনো আসামির বিচার এখনো নিষ্পত্তি  হয়নি। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংবাদিকের ওপর হামলা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।
কিন্তু এর কোনো দৃষ্টান্ত মুলক বিচার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সাংবাদিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। সরকারের উচিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নজর দেয়া এবং সাংবাদিক নেতাদের উচিত সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করা।
মফস্বল সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন। আর এমনিতেই তো মফস্বল সাংবাদিকতা একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। এটা দেশের সব শ্রেণির জনগণই জানেন। এক প্রকার যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হয় মফস্বল সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্রে।
যোগাযোগের নেটওয়ার্কে বিশ্ব এখন এক সুতায় বাঁধা। তাই গোটা বিশ্বকে যোগাযোগের ভাষায় বলা হচ্ছে-‘গ্লোবাল ভিলেজ’।
আর বাংলাদেশ নামক ভিলেজটি দুর্নীতি সত্ত্বেও উন্নয়নের এমন একসময়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যখন একস্থান থেকে অন্যস্থানে পৌঁছা মাত্র দিনের ব্যাপার। এ যে বিশাল দেশটি যোগাযোগের একটি ছোট্ট গ্রামে পরিণত হয়েছে, তা শুধু সড়ক, জল বা আকাশপথে নয়।
সাংবাদিকতার ভাষায় আমরা যে যোগাযোগকে গণযোগাযোগ  বলি।  সে ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে ছোট্ট একটি গ্রামে। ঢাকা ও প্রধান শহরে তো বটেই, জেলা বা উপজেলা পর্যায়েও সংবাদপত্র বেরুচ্ছে নিয়মিত।
ঢাকা থেকে প্রচারিত সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে দেশের সর্বত্র। এর পরও রয়েছে জাতীয়-আঞ্চলিক সংবাদপত্রের বিভাজন। কিন্তু ভৌত অবকাঠামোর ক্ষেত্রে যাই হোক, গণযোগাযোগের বেলায় বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলকে যে আজ আর মফস্বল বলা যাবে না।এ কথা যত জোরে সম্ভব, তত জোর দিয়ে বলতে হয়, আরেকটি বাস্তবতা স্বীকার করতেই হবে।
দেশের নানা অঞ্চলে কর্মরত সাংবাদিকরা আমাদের মূলধারার সংবাদকর্মীদের থেকে এতটুকু বিচ্ছিন্ন নন। তারা মূলধারার সাংবাদিকতারই সক্রিয় অংশ। তারকা হতে হবে এমন ধারণা পোষণ না করে অনেক পথিকৃৎ সাংবাদিক আছেন জাতীয় কাগজগুলোয় গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পাঠিয়ে থাকেন।
যা দেশের আপামর মানুষের সুখ-দু:খের চিত্র তুলেধরা হয়। তাই শত প্রতিকুলতার মাঝে মফস্বল সাংবাদিকতা ঠিকে আছে,ঠিকে থাকবে যুগ যুগ ধরে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।