সুরমা টাইমস ডেস্ক : সিলেট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে নগরে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ক্যাডার সারোয়ার হোসেন এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
অথচ, তাদের ভয়েই জুলাই থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত অজানা আতঙ্কে ছিল সিলেটের ছাত্র-জনতা, গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে আন্দোলনে সমর্থনকারীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীর ছোড়া গুলিতে আন্দোলনকারীসহ সাধারণ মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়াও ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায় হেলমেট পরিহিত সারোয়ারসহ একদল অস্ত্রধারী। এদের অনেকেই ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। ছাত্র-জনতা হত্যায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। কিন্তু ছয় মাসের বেশি পেরোলেও অস্ত্রধারীদের অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী অনেককে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্রের জোগানদাতা সম্পর্কে জানা হচ্ছে। বাকিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে সরকার পতনের পরপরই এদের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে। প্রযুক্তি ও সোর্সের মাধ্যমে জড়িতদের অবস্থান শনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় ছাত্র-জনতার ওপর প্রকাশ্যে গুলি করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের গুলিতে হতাহতের সংখ্যাও কম নয়। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সেসব সন্ত্রাসীর অস্ত্রসহ ছবি ও ভিডিও তখনই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, প্রকাশিত হয় দেশের গণমাধ্যমেও।
তাছাড়া সিলেটের অপরাধ জগতের মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলো ছাত্রলীগ ক্যাডার সারোয়ার হোসেন। সিলেট নগরীর টিলাগড়ে অপরাধ রাজ্য গড়ে তুলেছিল এই শীর্ষ সন্ত্রাসী সরওয়ার। এক সময়ে চিহ্নিত ছিনতাইকারী হিসেবে কোতোয়ালি থানায় অপরাধীর তালিকায় তার ছবি ও নাম টানানো ছিল। দলীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে এ সব ম্যানেজ করে ফেলে সে। তার ভয়ে তটস্থ ছিলেন সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার আলমপুর ও টিলাগড় এলাকার মানুষ। সুত্র জানায়, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন সরকারি অফিসে চাঁদাবাজী ছিলো সরওয়ারের আয়ের অন্যতম উৎস। যেমন সেটেলমেন্ট অফিস, আলমপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শিক্ষা অফিস ইত্যাদি। এ সব সরকারি অফিস থেকে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজী করতো।
সুরমার দু’তীরে অপরাধ রাজ্য গড়ে তুলেছিল সিলেটের এই শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত সরওয়ার । প্রতিবাদ করলেই অস্ত্র নিয়ে তাড়া করতো। হুমকির পর হুমকি দিয়ে নিকটজনকেও দমিয়ে রাখতো। ২০২০ সালের ২০ মে নগরীর মিরবক্সটুলা এলাকার এক মহিলার ২০ হাজার টাকা ও চেকবই ছিনতাইয়ের মামলায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর আগে ২০১৯ সালের ৯ মে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. নাজিফা আনজুম নিশাতকে ধর্ষণ ও ছোরা দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেয় ছাত্রলীগ নামদারী সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন। এ ঘটনায় ১৪ মে দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ সারোয়ার হোসেনকে আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১৪ মে বেলা ১টার দিকে সিলেট নগরীর বন্দর বাজার কোর্ট পয়েন্ট এলাকা থেকে সারোয়োর হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরোদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সুত্র জানায়, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সে গা ঢাকা দিয়েছে।
এ ব্যাপরে কথা বলতে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বারে বার বার ফোন দিলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায় তাই তার বক্তব্য লওয়া সম্ভব হয় নি।
এ ব্যাপারে সিলেট শাহপরান থানার ওসি মোঃ মনির হোসেন জানান,যারা অপরাধীর তালিকা আছে তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান প্রক্রিয়া চলমান আছে।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম জানান, অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।