সুরমা টাইমস ডেস্ক :
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ই আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
এই সরকারের ছয় মাস পূর্তিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে বিএনপি লিখিত বক্তব্যে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আনার সুপারিশ করে।
এ সময় দলটির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস, বিরাজমান রাষ্ট্র পরিস্থিতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, পতিত ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করে যাচ্ছে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহায়তায় দেশের বাইরে থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এই তৎপরতা চালিয়েই যাবে।
সুতরাং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা দরকার।
চিঠিতে বলা হয়, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী রক্তঝরা আন্দোলন–সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪–এর জুলাই–আগস্টে অভূতপূর্ব ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বৈষম্যহীন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্নপূরণের জন্য দেশের জনগণ অপেক্ষমাণ।
গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উস্কানিমূলক আচরণ, জুলাই–আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র অভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য–মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে।
এরই ফলশ্রুতিতে অতি সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ছয় মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে–বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।
অথচ জুলাই ছাত্র–গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল।
‘বিরাজমান অস্থিতিশীল রাষ্ট্র পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বুগতি, অবনতিশীল আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিনিয়োগ–বাণিজ্যে স্থবিরতা ও বাজার সরবরাহ ব্যবস্থায় নৈরাজ্যপনা ইত্যাদি সীমাহীন জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে প্রতিনিয়ত নানান ধরনের দাবিনামা নিয়ে মব কালচারের মাধ্যমে সীমাহীন জনদুর্ভোগ, সড়কে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষ্যণীয়, যা মোকাবিলায় সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
এক ধরনের সামাজিক নৈরাজ্যের বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ফলশ্রুতিতে গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা ম্রিয়মাণ হতে শুরু করেছে।
চিঠিতে বলা হয়, এই পরিস্থিতির উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের সার্বিক আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং সার্বিক গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতকরণ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে জন–আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
প্রধান উপদেষ্টা ও তার সরকারের প্রতি বিএনপির সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন, অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করুন, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রদান করুন, প্রশাসনের সর্বস্তরে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর মুক্ত করুন।