সিলেটে বিচারের জন্য ফের রাজপথে রায়হানের মা

নিজস্ব প্রতিবেদক::

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে রায়হান নামের এক যুবককে নির্যাতনে হত্যার বিচার দাবিতে আবারও রাজপথে নামলেন তার মা সালমা বেগম।

চার বছর পাঁচ মাসেও ছেলে হত্যার বিচার না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

গতকাল সোমবার বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে ব্যানার হাতে দাঁড়ান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা ছিলেন।

২০২০ সালের ১০ই অক্টোবর রাতে সিলেট বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় যুবক রায়হানকে।

 

ব্যানার হাতে রাজপথে অবস্থানকালে রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেখ হাসিনা শুধু তার বাবার খুনিদের বিচার করেছেন। আর কেউ বিচার পায়নি।

রায়হানকে ধরে নিয়ে পুলিশ যখন নির্যাতন করে খুন করে তখন তার মেয়ের বয়স ছিল মাত্র ২ মাস। এখন মেয়েও অনেক বড় হয়ে গেছে।

মেয়ে যখন বাবার কথা জিজ্ঞেস করে তখন পরিবারের কেউ কোনো জবাব দিতে পারেন না।

 

রায়হানের মা দাবি করেন, প্রধান আসামি বন্দরবাজার ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া মামলা আপসের জন্য নানারকম প্রলোভন দেখিয়েছেন।

২০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অফার করেছে। আজীবনের জন্য রায়হানের পরিবারের দায়িত্ব নিতে চেয়েছে; কিন্তু কোনো প্রলোভনে পরিবার আপস করেনি।

বিচারের মাধ্যমে রায়হানের খুনিরা ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলবে এমন আশায় অপেক্ষায় আছেন পরিবারের সদস্যরা- মানববন্ধনে এসে এমন কথা জানান রায়হানের মা সালমা বেগম।

 

সালমা বেগম আরও বলেন, চার বছর পাঁচ মাস ধরে ছেলে হারানোর কষ্ট বুকে নিয়ে তিনি আছেন। আশায় আশায় থাকলেও এখনো ছেলে হত্যার বিচার পাননি।

আসামিরা মামলা থেকে রক্ষা পেতে নানারকম কূটকৌশল করছে। তিনবার করে সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

এ সময়ের মধ্যে চারজন জজ বদলি হয়েছেন; কিন্তু রায়হান হত্যার বিচার হয়নি। বিচার পেলে তিনি মনে কিছুটা হলেও শান্তি পেতেন।

প্রসঙ্গত,২০২০ সালের ১০ই অক্টোবর সিলেট শহরের আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়া হয়। পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এরপর তার পরিবারের কাছে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

টাকা না পেয়ে ফাঁড়ির ভেতর পৈশাচিক নির্যাতন করা হয় এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রায়হান।

পরে ১১ই অক্টোবর ভোরে রায়হানের নিথর দেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

 

এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, প্রতিদিনের মতো গত শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে রায়হান আহমদ নিজ কর্মস্থল নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটের ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. শান্তা রানীর চেম্বারে যান।

পরদিন রোববার (১১ অক্টোবর) ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটে ০১৭৮৩৫৬১১১১ মোবাইল নম্বর থেকে রায়হানের মা সালমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দিলে সেটি রিসিভ করেন রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ।

এ সময় রায়হান আর্তনাদ করে বলেন, তিনি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছেন। তাকে বাঁচাতে দ্রুত টাকা নিয়ে বন্দর ফাঁড়িতে যেতে বলেন রায়হান।

এ কথা শুনে রায়হানের চাচা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে রায়হান কোথায় জানতে চাইলে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য বলেন, সে ঘুমিয়ে গেছে।

আর যে পুলিশ সদস্য রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও চলে গেছেন। এ সময় হাবিবুল্লাহকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে আসার কথা বলেন ওই পুলিশ সদস্য।

পুলিশের কথামতো হাবিুল্লাহ আবারও সকাল পৌনে ১০টার দিকে ফাঁড়িতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য জানান, রায়হান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এরপর রায়হানের চাচা ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রায়হানকে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান।

এ সময় হাবিবুল্লাহ পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে খবর দিলে তারা গিয়ে ওসমানীর মর্গে রায়হানের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ দেখতে পান।

এজাহারে মামলার বাদী উল্লেখ করেন, আমার স্বামীকে কে বা কারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে হাত-পায়ে আঘাত করে এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতনের ফলে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন।

 

পরে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে বন্দরবাজার ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহি, এএসআই হাসান উদ্দিন, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস ,

ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিলেট ভিউ এর কথিত সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।