আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে ছাত্রলীগ মাঠে নামলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ

সুরমা টাইমস ডেস্ক:

 

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একুশে বইমেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

ফেব্রুয়ারি জুড়ে হরতাল–অবরোধসহ লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা করেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। তবে এতে শঙ্কার কোনো কারণ দেখছে না ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

পুলিশ বলছে, এরপরও নিষিদ্ধি ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ মাঠে নামার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘ভিডিও বার্তা, মিডিয়ার জগৎ-প্রোগ্রাম দিতেই পারে। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের অনেক নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

 

তাঁরা যদি এ রকম কোনো প্রচেষ্টা নেয় অবশ্যই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তবে আপাতত এ রকম কোনো শঙ্কা দেখছি না আমরা।

 

গত ২৯শে জানুয়ারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে লিফলেট বিতরণ, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ।’

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত একুশে বইমেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এসব কথা বলেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ‘এটা বিশ্ব মিডিয়ার যুগ। এক মিনিটের ভেতরে এই ঢাকা শহরের খবর ব্রাজিল চলে যাচ্ছে।

 

এমনকি যদি টাওয়ার থাকে, ব্রাজিলের আমাজন বনভূমিতে যোগাযোগ হয়ে যাচ্ছে। তাই এই যুগে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন প্রোগ্রাম আসছে। পুলিশ সেসব মোকাবিলা করবে।’

বইমেলার বই প্রকাশের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে—এমন কনটেন্ট ঠেকাতে মেলায় বই প্রকাশের আগেই পাণ্ডুলিপি যাচাইয়ে বাংলা একাডেমিকে অনুরোধ করছি।

২০২৬ সালের একুশে বইমেলা থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হোক।’

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এর আগে বইয়ের কনটেন্ট নিয়ে মেলায় সমস্যা হয়েছে— এমন পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশের কোনো উদ্যোগ আছে কি না? জবাবে ডিএমপির কমিশনারে শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘আমরা একটা সমন্বয় সভা করেছিলাম, সেখানে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা ছিলেন।

তাদের আমরা অনুরোধ করেছি-এ রকম কোনো বই যেন মেলায় না আসে, যেখানে উসকানিমূলক কথা বা লেখা আছে।’

 

এদিকে অমর একুশে বইমেলা ঘিরে কারামুক্ত জঙ্গিদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করছে পুলিশ। তবে জঙ্গি হামলার কোনো শঙ্কা রয়েছে কি না— সেই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি ডিএমপি কমিশনার।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে লেখক হুমায়ুন আজাদকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়।

কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই বছর আগস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। পরে ১২ আগস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

এরপর ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে জঙ্গি হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায়। চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান তাঁর স্ত্রী।

 

২০২৩ সালে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের নামে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে উড়োচিঠি দিয়ে বোমা হামলার হুমকি দেওয়া হয়।

তবে শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন ছাড়াই শেষ হয় মেলা।

নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মেলায় ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তদারকি করা হবে।

পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, সিটিটিসিসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। ডগ স্কোয়াডও কাজ করবে।’

অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক অবস্থা নিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ট্রাফিকের অবস্থা ভঙ্গুর, মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আন্দোলনকারীদের বলব আপনারা যেকোনো দাবি নিয়েই রাস্তায় নেমে আসবেন না।

এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগে পড়তে হয়। আপনাদের আন্দোলন করতে হলে ফুটপাতে গিয়ে করেন।’

শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি দেখি মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকে। ২০ জন মানুষ রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে।

ওইসময় রাস্তায় কোনো মুমূর্ষু রোগীও থাকতে পারে, বয়স্করা চলাচল করতে পারে না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার আড়াই মাস হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে দেখেছি কিছু হলেই রাস্তা ব্লক করে আন্দোলন করেন।

আমি অনেকবার অনুরোধ করেছি ছোটখাটো দাবি নিয়ে রাস্তায় আসবেন না। আপনারা ফুটপাতে থেকে মানববন্ধন করেন।

কিন্তু খুবই দু: দুঃখজনক, যেকোনো দাবি আদায়ের আপনারা মোক্ষম স্থান পেয়ে গেছেন রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।