সিলেটে চিনিকাণ্ডে স্থায়ীভাবে পদ হারালেন মান্নান ও সুমন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃ
সিলেটের সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন আসছে ভারতীয় চিনি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে সিলেট ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে চিনি চোরাচালানে জড়িত থাকার নাম উঠেছিল।
গণআভ্যুথানে ক্ষমতা হারিয়েছে আওয়ামী লীগ। আত্মগোপনে এখনো দলটির নেতকার্মীরা।
কিন্তু মিষ্টি চিনির লোভ যেন সামলাতে পারেন না কেউই। এবার সেই মিষ্টিতে ডুব দিয়ে স্থায়ীভাবে পদ হারালেন সিলেট মহানগর বিএনপির দুই নেতা।
তারা হলেন- সিলেট মহানগরীর ২৫নং ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ সুরমার বারখলা রূপালি আবাসিক এলাকার মৃত ছানা মিয়ার ছেলে মো.সোলেমান হোসেন সুমন (৪২) ও ২৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ভার্থখলার সোনালী আবাসিক এলাকার মৃত দিলু মিয়ার ছেলে মো.আবদুল মান্নান (৪৩)।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আটক সিলেট মহানগর বিএনপির দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার (১৪ই অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থী অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে স্থায়ীভাবে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে অভিযুক্তদের কাছে প্রেরিত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সাংগঠনিক একটি পত্রে চিনি চোরাচালানিতে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, যারাই এ রকম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি যতই বড় নেতা হন না কেন সঠিক তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ইতোমধ্যে তাদেরকে বহিষ্কার করেছি। এবার কেন্দ্র থেকে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার (১৪ই অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুর সেতু এলাকা থেকে ওই দুই নেতা ও চোরাচালানে জড়িত আরও চারজনকে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় আটক করে পুলিশ।
চিনি ছিনতাইয়ের চেষ্টার দায়ে আটক ও বহিস্কৃত বিএনপি নেতারা হলেন- মহানগরীর ২৫নং ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সোলেমান হোসেন সুমন (৪২) ও ২৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান (৪৩)।
এ ছাড়া চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে আটককৃতরা হলেন- সিলেট সদর উপজেলার বটেশ্বরের মলাইটিলার মৃত করম আলীর ছেলে মনির আহমদ (৩২), জৈন্তাপুরের বাঘেরখালের মমতাজ আলীর ছেলে তোফায়েল আহমদ (২৬), একই এলাকার জালাল উদ্দিনের ছেলে মো. শাহীন আহমদ (২৫) ও গোয়াইন ঘাটের ফতেহপুর তৃতীয় মঈন উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪২)।
ওসমানীনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত জাহান চৌধুরী জানান, সাদিপুর সেতুর সামনে থেকে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
এ সময় জব্দ করা হয়েছে ভারতীয় চিনিভর্তি একটি ট্রাক, দুটি মাইক্রোবাস ও দু’টি মোটর সাইকেল। এদের মধ্যে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত চারজন এবং চিনির চালান ছিনতাইয়ের চেষ্টার দায়ে দুইজনকে আটক করা হয়।
আটককৃত চোরাকারবারীরা জানায়, জৈন্তাপুর থেকে তারা ট্রাকে করে ভারতীয় ২৫০ বস্তা চিনি নিয়ে যাচ্ছিল। পেছনে একটি মাইক্রোবাসে চোরাকারবারীদের চার সদস্য তাদেরকে অনুসরণ করছিল।
পথিমধ্যে একদল ছিনতাইকারী অপর একটি মাইক্রোবাস ও দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে চিনি ভর্তি ট্রাককে ধাওয়া করে।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় জনতা সাদিপুর সেতুর সামনে চিনিভর্তি ট্রাকসহ ৪ চোরাকারবারী ও দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে। এসময় কয়েকজন পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদেরকে থানায় নিয়ে আসে।