সিলেট বিআরটিএ: দুর্নীতির বরপুত্র এডি রিয়াজুল অবশেষে বদলী

স্টাফ রিপোর্ট :

অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বদলী হলেন বি আর টি এ সিলেট সার্কেলের সহকারী পরিচালক দুর্নীতির বরপুত্র ( এডি ) রিয়াজুল ইসলাম।

অনিয়ম দুর্নীতি। কোটি কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠজন পরিচয়দানকারি বিআরটিএ সিলেট সার্কেলের সহকারী পরিচালক ছিলেন রিয়াজুল ইসলাম ।

তার বিরুদ্ধে শ্রমিক নেতা, সাধারণ জনতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন সংগঠনের নানান অভিযোগ থাকা স্বত্ত্বেও নিজেকে টক অব অফ দ্যা বিআরটিএ বানিয়েও চাকরি করছেন বহাল তবিয়তে।

রিয়াজুল নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও গত ১৪ই আগস্ট অবসরে যাওয়া বি আর টি এ সচিব আমিন উল্লাহ নূরীর ছত্রছায়ায় থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বহাল তবিয়তে ছিলেন সিলেট সার্কেলে।

তাই ঝাড়ুদার থেকে পিয়ন সবই যেন তার নখদর্পনে। বেসামাল কর্মকাণ্ডে যেন নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন বহুদূর। বিআরটিএর কর্তাও বনে গেছেন তার শিষ্য দালালরা।

সূত্র জানায়,রিয়াজুল মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে ২০১১ সালে যোগদান করে নানা অভিযোগে ২০১৩ সালে বদলী হন।

 

তিনি প্রভাব খাটিয়ে ২০১৯ সালে পুনরায় যোগদান করেন। এরপর ২০২০ সালের ১২ই এপ্রিল বি আর টি এর সদর কার্যালয়ের এক আদেশে তৎকালীন সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সানাউল হককে সিলেট সার্কেল থেকে মাগুরায় বদলি করা হয়।

সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে রিয়াজুল ইসলাম উপর মহলে তদবীর করে ২০২০ সালের ১২ই এপ্রিল ৩৫.০৩.০০০০.০০১.১৯.১০৬.২০-৬৩১ নং আদেশ মূলে বি আর টি এ সিলেট ও সুনামগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে নেন।

যারফলে সিলেট সার্কেলে দালালরা মিলে সিলেট বি আর টি এ তে তৈরি করেন ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া।

 

জানা যায়, বায়োমেট্রিক সেকশন থেকে শুরু করে মালিকানা ট্রান্সফার, গাড়ি শনাক্ত করা সব ক্ষেত্রেই রিয়াজুল ও তার দালালদের হাত ছিল। টাকা ছাড়া কোন ফাইলই নড়ত না।

ড্রাইভিং লাইসেন্স বোর্ডে দালাল মারফত না গেলে গ্রাহক যদি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বরও পান, এর পরও তাকে ফেল করানো হত। কিন্তু টাকা দিলে সব ঠিক হয়ে যেত।

গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন এর সভাপতি মো. জাকারিয়া আহমদ ঘুষ,দুর্নীতি বন্ধ এবং রিয়াজুল ও আব্দুল বারীকে অপসারণের জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিলেও তাতে কোন লাভ হয়নি ।

একটি সুত্র জানায় তার অপকর্মের কারনে তাকে বদলী করা হয়েছে। তাকে সিলেট থেকে বদলী করে বিআারটিএ’র কুড়িগ্রাম সার্কেলে যোগদানের জন্য ১৪ই অক্টোবর বদলীর আদেশ জারি করা হয়।

তিনি সিলেট সার্কেলে থাকাকালিন সময়ে তার বিরুদ্ধে উঠে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ।

রিয়াজুল আওয়ামিলীগ ও যুবলীগের ক্যাডার দ্বারা নিয়ন্ত্রন করতেন তার দুর্নীতির রাজ্য।

যে ভাবে হত অবৈধ লেনদেন :-

যে কোনো ধরনের কাজের জন্য বি আর টি এ তে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এরপর পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ হয় এবং তারপর ফিঙ্গার দিতে হয়।

 

কিন্তু এর আগের দিন কাগজপত্র নিয়ে বি আর টি এ অফিসে গিয়ে একটি মার্ক করা লাগে। এই মার্ক করতে মেকানিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এস এম সামিউল ইসলামের মাধ্যমে ঘুষের টাকা নেওয়া হত।

এরপর দালালদের মাধ্যমে কাগজপত্রে ঘুষের মার্ক করানো লাগে। কাগজে মার্ক করা হয় ১, ২, ৩ করে। মানে এক হলে ১ হাজার টাকা, দুই হলে ২ হাজার টাকা। এক-পাঁচ দিলে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

 

গাড়িতে কোনো সমস্যা থাকলে সেটিও দালালের মাধ্যমে অবজেকশন দেওয়ানো হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার বিনিময়ে।

লাইসেন্স প্রতি সাড়ে ৩ হাজার। অস্থায়ী ফিঙ্গারের রোলের জন্য দিতে হয় ১ হাজার টাকা। সরকারি ফির বাইরে ফিটনেস পরীক্ষায় প্রতি সিএনজি বাবদ ঘুষ রাখা হয় ২ হাজার টাকা, বড় গাড়ি ৩ হাজার, ট্রাক সাড়ে ৪ হাজার টাকা।

 

বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে সিলেট যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী, পিংকু, ইমন, উত্তম, মনসুরকে ক্যাশিয়ার বানিয়ে সার্ভার থেকে পুরোনো নথি গায়েব, রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, লাইসেন্স শাখায় ঘুষ বাণিজ্যসহ সেবা নিতে আসা জনগণকে জিম্মি করে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য আর অর্থ আত্মসাত ছিল তার একমাত্র নেশা।

বি আর টি এ অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তারাও তাকে তোষামোদ করে ছিলেন আয়েশে। রিয়াজুলের বদলীতে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতংক।

রিয়াজুলের ঘুষ দুর্নীতির সংবাদ বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় তার বদলী হয়েছে বলে বি আর টি এ সুত্রে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।