নিজস্ব প্রতিবেদক :
অশুভ শক্তি নাশ করতে কৈলাশ ছেড়ে মর্ত্যলোকে এসেছিলেন দেবী দুর্গা। প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে আজ শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
গতকাল রোববার (১৩ই অক্টোবর) দুপুর ৩টা থেকে সিলেটে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় প্রতিমা নিরঞ্জনের। শোভাযাত্রা করে নগরীর চাঁদনী-ঘাটে একে একে প্রতিমা নিয়ে জড়ো হন ভক্তরা।
দেবীকে চোখের জলে বিদায় জানাতে বিভিন্ন নদীর তীরে জমায়েত হোন হাজার হাজার ভক্ত। বিভিন্ন মন্দির ও পাড়া থেকে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় নদীতে।
উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী-বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ ওই শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
এরপর উলুধ্বনি ও বাদ্য বাজিয়ে সুরমা নদীতে একে একে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
এর আগে মণ্ডপ গুলোতে চলে সিঁদুর খেলা, মন্ত্রপাঠ আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। চলে মিষ্টিমুখ আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান।
দশমী পূজা উদযাপনের প্রধান আচারের অংশ হিসেবে এদিন নারীরা সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। শহরের মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করেন, যা ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলার অংশ।
এই আচারটি দেবী দুর্গার শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তারপর হিন্দু নারীরা একে অপরের গায়ে সিঁদুর মাখিয়ে জীবনে সমৃদ্ধি কামনা করেন।
প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রতিমা নিরঞ্জনের সুবোধ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।
এসময় তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে সিলেটে সুষ্ঠুভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করায় সকলকে ধন্যবাদ জানান।
এদিকে বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা নিরঞ্জনকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
পুলিশের বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত ইউনিটও নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বর্গলোক কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা।
নির্দিষ্ট তিথি পর্যন্ত বাবার বাড়িতে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ের কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে।
দেবীর অবস্থানকালে এই পাঁচ দিন পৃথিবীতে ভক্তরা দেবী মার বন্দনা করেন।
প্রতিমা নিরঞ্জনকালে অনেক ভক্তের চোখে জল চলে আসে, সৃষ্টি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। আবার অনেকেই ক্ষণটিকে সুন্দর করে কাটাতে নেচে-গেয়ে উদযাপন করেন।
প্রতিমা নিরঞ্জনের আয়োজন দুর্গা পূজার স্থায়ী সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তুলে ধরে। সনাতন সম্প্রদায়ের বিশ্বাস ও ভক্তির প্রদর্শন করে।
এবারের পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সিলেট মহানগর ও জেলায় ৫৯৫টি মণ্ডপে পূজা আয়োজন করা হয়।
এরমধ্যে সিলেটে জেলায় ৪৪১টি এবং মহানগরে ১৫৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।