‘তামাশার তপশিল’ প্রত্যাখ্যান করল বিএনপি

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) একতরফাভাবে ‘তামাশার তপশিল’ ঘোষণা করেছে মন্তব্য করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।

দলটি বলেছে, ‘গোটা বাংলাদেশের প্রত্যাশা, জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে নিশিরাতের সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তামাশার তপশিল ঘোষণা করেছে।’

বিএনপি বলেছে, ‘অতীতের মতোই আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য যে তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে তা বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেবে জনতা। সিইসি তপশিল জারির মাধ্যমে জাতির সঙ্গে তামাশা করেছেন। তার ভাষা প্রধানমন্ত্রীর ভাষারই প্রতিফলন।’

গতকাল বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরে দলের প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না দলটি। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে এক দফার আন্দোলন করে আসছে দলটি। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ প্রায় ১৪ হাজার নেতাকর্মী কারাগারে আছেন। ওইদিন থেকে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ও তালাবদ্ধ রয়েছে।

সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন থেকে হরতাল এবং পরবর্তীতে পাঁচ দফা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

 

চলমান ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি আগামীকাল শেষ হবে। সরকারের পতনের দাবিতে এবার চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। সেই কর্মসূচিতে আগামী রোববার ও সোমবার থেকে টানা হরতাল, অবরোধ কর্মসূচি আসতে পারে বলে জানা গেছে।

তপশিল ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশে একটি ভীতিকর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একতরফা নির্বাচনের এই তথাকথিত তপশিল-রঙ্গ জনগণ মানে না। এই নীল নকশার নির্বাচনের তপশিলে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো নির্বাচন হবে না।’

বিএনপির পক্ষ থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যৌথ উদ্যোগে দেশে যে ভয়াবহ অচলাবস্থা ও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হবে তার পুরো দায়ভার তাদেরকেই বহন করতে হবে।

 

এই সংকটের কারণে আওয়ামী মাফিয়াচক্রকে চিরকাল দায়ী থাকতে হবে। জনগণের চলমান অগ্নিগর্ভ আন্দোলন আরও তীব্র, আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবং অতি দ্রুতই আওয়ামী সরকারের পতন ঘটবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার করবে জনগণ।’

সিইসির কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ভাষণে বলেছেন- অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবেন। এ কথাতো ডাহা মিথ্যা, ভণ্ডামীপূর্ণ এবং মেকি। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা চোরাবালিতে পড়ার সামিল। পরপর তিনটি ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রেখে আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর দেশকে নরকপুরীতে ও জনগণের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।’

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন সব জেনেশুনেই দেশকে এক গভীর সংকটের মধ্যে ঠেলে দিতে তপশিল ঘোষণা করেছে। কারণ, বর্তমান কমিশন নিশিরাতের ভোটের সরকারের মনোনীত সিলেকশন কমিশন। তারা আওয়ামী লীগের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জনগণের কেউ নন। এই কমিশনকে কেউ মানে না। নির্বাচন কমিশন মূলত আওয়ামী কমিশন।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার সন্ত্রাসী বাহিনীর পাহারা এবং রায়টকার, জলকামান, সজোয়া যান নিয়ে শত শত পুলিশ র‍্যাব-বিজিবি বেষ্টিত ইসি ভবনে বসে আওয়ামী চেতনার নিশান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশে ভাষণে সিলেকশন ভোটের তপশিল ঘোষণা করে গোটা দেশকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করল। অতীতে রাকিব-হুদা কমিশনের মতোই কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দলদাসত্ব প্রদর্শন করে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।’

সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘রাজপথের দিকে তাকিয়ে দেখেন। গোটা দেশ অচল হয়ে গেছে। অবরোধে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ঢাকা। সমস্ত পোশাকি-অপোশাকি রক্ষী বাহিনী, লেঠেল বাহিনী নামিয়েও কিছুই করতে পারছেন না। বাংলাদেশের জনগণ একদিকে আর লাঠিয়াল বাহিনী একদিকে। এই উর্মিমুখর জনতরঙ্গ রুখবার ক্ষমতা সরকারের নেই। কান পেতে পতনের বুলন্দ আওয়াজ শোনেন। বিদায়ের রাগিণী বাজছে। ক্রমে ঘনিয়ে আসছে অন্তিম সময়।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশের প্রত্যাশা, জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তামাশা তপশিল ঘোষণা করেছে।

শেখ হাসিনার নির্দেশে অতীতের মতোই আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য মেরুদণ্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।