জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ ও জলবায়ু সুবিচারের দাবিতে তরুণদের ধর্মঘট

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
জলবায়ু সুরক্ষা ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে নবায়নযোগ্য শক্তির উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ, জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ এবং জলবায়ু সুবিচারের দাবি ধর্মঘট করেছে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা।
বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ আজ শুক্রবার (৩ মার্চ) ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাস প্রাঙ্গণে এক সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান তারা।
সুইডিস জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গের গড়ে তোলা স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিচালিত আন্দোলন ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’র বাংলাদেশ গ্রুপ, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এবং বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) যৌথভাবে এ জলবায়ু ধর্মঘটের আয়োজন করে। নানা ধরনের দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড হাতে দুই শতাধিক তরুণ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। দেশের ২৬টি জেলার তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বিশ্বব্যাপী এই জলবায়ু ধর্মঘটের দাবিগুলোর সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে।সমাবেশে বক্তারা ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানি বিশেষ করে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) অর্থায়ন বন্ধ এবং এলএনজি আমদানি নির্ভরতা কমাতেও সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহবান জানান। এছাড়া পরিবেশের ক্ষতি করে এমন প্রকল্পগুলো বন্ধ এবং জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ না করে টেকসই প্রকল্পে বিনিয়োগের আহবান জানানো হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্রমাগত মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়ায় উন্নত দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করে এসময় তরুণরা জলবায়ু কর্মীরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর প্রভাবের কারণে বিশ্ব এখন একটি জটিল সময় পার করছে। যা ইতিমধ্যে জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী মানবতার জন্য রেড অ্যালার্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে। উন্নত দেশগুলোকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মেনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ এ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে এখনই উদ্যোগী হতে হবে। সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই ক্ষতিকারক জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে জলবায়ু বিধ্বংসী কার্যকলাপের জন্য দায় নিতে হবে এবং সেখান থেকে সরে এসে অবিলম্বে উল্লেখযোগ্যভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তরুণরা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের আসন্ন বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য শক্তির অনুপাত উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারীসোহানুর রহমান জানান, “জীবাশ্ম জ্বালানিতে আমাদের নির্ভরতা কমানো যে কত জরুরিসেটা বোঝার জন্য কাল পযন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। জলবায়ু দুর্যোগ জনিত ক্ষয়-ক্ষতিমোকাবিলায় কাজ করার এখনই সময়। আমাদের অবশ্যই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উল্লেখযোগ্যভাবেবিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি দূষণকারী দেশগুলো থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।জলবায়ু এবং জ্বালানি সংকট শুধু একটি দুর্যোগই নয়; এটা আমাদের জন্য একটি বড় সতর্ক বার্তাও।’’এই তরুণ জলবায়ু কর্মী শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর পক্ষেন্যায়বিচার দাবি করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতেযথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক তহবিলের ব্যবস্থা করে দ্রুত কৌশল বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপকরেন। একই সঙ্গে নিঃশর্তভাবে  গ্লোবাল সাউথেরদেশগুলোর আর্থিক ঋণ বাতিলেরও দাবি তার।
বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতাচেয়ারম্যান ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানঅধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘‘তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষারজন্য বায়ুদূষণ হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য এখনই জরুরিপদক্ষেপ প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখতে হবে, জলবায়ু সংকট আর বায়ু দূষণ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।তিনি আরও বলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগতসম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।’’ তিনি জোরালোভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্যজ্বালানি ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘আসুন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসইভিত্তি তৈরি করতে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।”
জলবায়ু ধর্মঘটে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বাংলাদেশের চলমানবিদ্যুৎ সংকট ও আর্থিক বোঝার পেছনে ক্ষতিকর ও দামের দিক থেকে অস্থিতিশীল জীবাশ্ম জ্বালানিএলএনজি আমদানির প্রভাব উল্লেখ করে এর সাথে সংশ্লিষ্টদের সমালোচনা করেন। সাধারণ মানুষেরজীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়, বাড়তি বিদ্যুৎ বিল ও ঘন ঘন লোডশেডিং এবং মুদ্রাস্ফীতিরকারণে উদ্ভুত চ্যালেঞ্জগুলোও তুলে ধরেন। তরুণরা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরতে সরকারের আসন্ন বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য শক্তির অনুপাত উল্লেখযোগ্যহারেবাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
বিশিষ্ট জলবায়ু বিজ্ঞানী ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র পরিচালক অধ্যাপক সালিমুল হক তরুণদের আন্দোলনেসংহতি জানিয়ে এক বার্তায় বলেন, ‘‘জলবায়ু সংকট একটি স্পষ্ট এবং বর্তমান বিপর্যয় যা দ্রুতকার্যক্রমের দাবি রাখে। এই সংকটের বোঝা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে দরিদ্র মানুষদের উপর পড়লেও,ধনীরা এর জন্য মূলত দায়ী। জীবাশ্ম জ্বালানির উপর আমাদের নির্ভরতা কমাতে। আরও টেকসইএবং ন্যায়সঙ্গত নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোতে রূপান্তর করার জন্য আমাদের অবশ্যই দ্রæতপদক্ষেপ নিতে হবে। তরুণরা দৃঢ় বিশ্বাস এবং দৃঢ় সংকল্পের সাথে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে।একটি সুন্দর ভবিষ্যতের প্রচেষ্টায় আমি তাদের পাশে আছি। এখন সময় এসেছে, শুধু কথার ফুলঝুড়িনয়। বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি ন্যায়সঙ্গতও বাসযোগ্য পৃৃথিবী নিশ্চিত করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ  নেয়ার।’’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।