‘নারী সাংবাদিকদের সাংবাদিকতাকে নিয়মিত পেশা হিসেবে নিতে বাধা দেয় আর্থিক অসচ্ছলতা’

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ

‘ডায়ালগ ফর ওমেন জার্নালিস্ট অন মেকিং ইনভিসিবল ভিসিবল’

শীর্ষক আর্টিকেল নাইনটিনের সংলাপে বক্তারা

 

বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকরা প্রায়ই কর্মক্ষেত্রে এবং কর্মক্ষেত্রের বাইরে যৌন হয়রানি, হুমকি, সহিংসতা, এবং বৈষম্যের শিকার হন। এসব কারণে নারী সাংবাদিকদের মধ্যে স্ব-সেন্সরশিপ ও পেশা ত্যাগ করার প্রবণতা বেশি। এজন্য জাতিসংঘের নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা রিজল্যুশন (জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রেজিলিউসন ১৩২৫) অনুযায়ী সরকারকে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন।  মতপ্রকাশের  স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন কর্তৃক নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কর্মকৌশল প্রণয়নের জন্য আয়োজিত সংলাপে এই কথাগুলো উঠে এসেছে। মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মমো ইন পার্ক অ্যান্ড রিসোর্ট, বগুড়ায় এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।

 

গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা এর আর্থিক সহযোগিতায়, “ইকুয়ালি সেফ: টুওয়ার্ডস এ ফেমিনিস্ট এজেন্ডা টু দ্য সেফটি অব  জার্নালিস্ট (FEMSOJ)” শীর্ষক দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশে পরিচালিত একটি প্রকল্পের অধীনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার ২৫ জন সাংবাদিক সহ সম্পাদক ও প্রকাশক অংশগ্রহণ করেন। আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক চাঁদনী বাজার পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক সুমনা রায় এবং টিএমএমএস এর উপ -নির্বাহী পরিচালক ডঃ মোঃ মতিউর রহমান।

 

অনুষ্ঠানে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়া এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার রুমকী ফারহানা এই সংলাপের উদ্দেশ্য ও কর্মকৌশল এবং নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও দক্ষতার উন্নয়নে আর্টিকেল নাইনটিনের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, অন্তর্বিভাগীয় লিঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি, সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আইনি কাঠামো এবং বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের বিষয়ে কথা বলেছেন।

 

দৈনিক চাঁদনী বাজার পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক সুমনা রায় বলেন, “নারী-বান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত, সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় কুসংস্কার, পারিবারিক বাধা দূর করলে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে নারীরা সাংবাদিকতা পেশায় আসতে উৎসাহী হবে।“

 

টিএমএমএস এর উপ -নির্বাহী পরিচালক ডঃ মোঃ মতিউর রহমান বলেন, “গণমাধ্যম হচ্ছে সমাজের দর্পণ। কর্মক্ষেত্রে নারী সাংবাদিকরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় বেশি হুমকির সম্মুখীন হয়।সাংবাদিকতা পেশায় আরও বেশি নারীদের আসা নিশ্চিত করার জন্য কর্মক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্রের বাইরে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।“

 

দৈনিক করতোয়া পত্রিকার সাংবাদিক নাছিমা আক্তার ছুটু বলেন, “সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। সাংবাদিকতা পেশায় নারী সাংবাদিকদের  নিয়মিত করতে হলে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

 

দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাংবাদিক মিলন রহমান বলেন, “মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না করতে পারলে জেলা পর্যায়ে কোন নারী সাংবাদিক থাকবে না।“

 

সভাপতির বক্তব্যে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, “বাংলাদেশে হত্যা, গুম, আইনি হয়রানি, হয়রানি, অপরাধের দায়মুক্তি এবং হুমকিসহ বিভিন্ন কারণে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। নির্বাচনের সময় এবং কোভিড ১৯-এর মতো মহামারীতে সাংবাদিকদের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। প্রতিটি ক্ষেত্রে, নারী সাংবাদিকরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে এবং কর্মস্থলের বাইরে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। কারণ যে কোন ধরণের সহিংসতা ও সঙ্কট সহজাতভাবে সমাজের অনগ্রসর ও কম ক্ষমতাপ্রাপ্ত অংশকে বেশি প্রভাবিত করে।“

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।