সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও ভাষাসৈনিক অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজ বলেছেন, সিলেটে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবী সর্বপ্রথম উত্থাপন করেছিল কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ। সাতচল্লিশের দেশ ভাগের পরেই সংসদের মুখপত্র আল ইসলাহ ও সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীর পক্ষে যৌক্তিকতা উপস্থাপন করে। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলনে কেমুসাসের ভূমিকা সচেতনভাবে তুলে ধরতে হবে। গতকাল সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নগরীর সোলেমান হলে ভাষা ‘আন্দোলনে সিলেট : প্রেক্ষিত কেন্দ্রীয় মুসলিম
সাহিত্য সংসদ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের (কেমুসাস) উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে অধ্যাপক আব্দুল আজিজ আরো বলেন, ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখেন ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সৈয়দ মুজতবা আলী, দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফসহ সিলেটের আলোকিত মনীষা।
অথচ আজ জাতীয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে সিলেটের অবদান অবহেলিত। এই অবহেলাকে কাটিয়ে চূড়ান্তভাবে স্বীকৃতি আদায় করতে হবে।
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমেদ নূরের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান। মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন শাবিপ্রবির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুল আলম হিরন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক দীপঙ্কর মোহান্ত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সেমিনার বাস্তবায়ন উপকমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ সৈয়দ মুহাদ্দিস আহমদ। সেমিনার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব জগলু চৌধুরী ও কেমুসাসের কার্যকরী পরিষদ সদস্য ফায়যুর রাহমানের যৌথ সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশ নেন কেমুসাসের সহসভাপতি অধ্যক্ষ কালাম আজাদ, কেমুসাসের কার্যকরী পরিষদ সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী, প্রথম আলো নর্থ আমেরিকার সম্পাদক ইবরাহিম চৌধুরী খোকন। অনুষ্ঠানের শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন
কেমুসাসের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মবনু। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী আলী মুরতাজা বিন আমিন।
ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখায় কেমুসাসের পক্ষ থেকে ভাষাসৈনিক মো. আব্দুল আজিজ ও ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খানকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন কেমুসাসের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহিদ দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারকের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান বলেন, ভাষা আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। কারণ এখনো সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার হচ্ছেনা। এমন একটা প্রয়াস আসুক যাতে অফিস আদালতসহ সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়।
মূল প্রবন্ধে দীপঙ্কর মোহান্ত ১৯৩২ থেকে ৫২ পর্যন্ত ইতিহাসের পর্বগুলো আলোচনা করে বলেন, সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, আল ইসলাহ এবং নওবেলালকে উপেক্ষা করে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পূর্ণঙ্গভাবে লেখা অসম্ভব। মূখ্য আলোচকের বক্তব্যে শাবিপ্রবির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সামসুল আলম হিরন বলেন, ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজের মাধ্যমে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে মুসলিম সমাজের মুখপত্র শিখা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সময়ের পরিক্রমায় এই নবজাগরণ সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের মুখপত্র আল ইসলাহও নবজাগরণ সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। আল ইসলাহ ঐতিহাসিকভাবে বঙ্গভঙ্গ, দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের চিন্তচেতনার স্বার্থক প্রতিফলন ঘটেছে।
সভাপতির বক্তব্যে কেমুসাসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমেদ নূর বলেন, ভাষা আন্দোলনে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেই আন্দোলনে পুরুষের পাশাপাশি সিলেটের নারীরাও স্বতস্ফূর্ত অংশ নিয়েছেন। আজ যদি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হয়, তবেই ভাষাসৈনিকদের রক্ত ও ঘাম ঝরানো স্বার্থক হবে।
কেমুসাসের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মবনু বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে যদি বলা হয় একাত্তরের পটভূমি, তাহলে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, আল ইসলাহ ও নওবেলালে ভূমিকাকে বলতে হবে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি।