সিলেটে সোনিয়া হত্যা: আগে থেকেই অপরাধের সাথে জড়িত সজিব
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেটে কলেজ ছাত্রী সোনিয়া বেগম (২০) হত্যার মামলার একমাত্র আসামি মো. সজিব হবিগঞ্জ জেলার আজমেরীগঞ্জ উপজেলার শরীফনগর গ্রামের মো. নুরুদ্দিনের ছেলে। তরুণ বয়সেই পা বাড়ান অপরাধ জগতে। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে শিশু অপহরণ ঘটনায় জড়িত থাকায় ২০১৮ সালে জেলও খাটেন তিনি।
থাকেন ঢাকায়। তবে মাঝে-মধ্যে আসেন সিলেটে। উঠেন ফুফুর বাসায়। শেষমেষ ফুফাতো বোনকেই করে বসলেন ‘খুন’।
সিলেটের আঞ্চলিক নাটকের অভিনেত্রী ও টিকটক তরুণী সোনিয়া আক্তার (২১) হত্যাকাণ্ডে তার মামাতো ভাই সজিব জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯। পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে প্রেরণ করবে পুলিশ। প্রয়োজনে সজিবকে রিমান্ডে নিতে চাইবে পুলিশ- বলছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ৯টার দিকে অভিযান চালিয়ে র্যাব-৯ এর একটি টিম ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানাধীন সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে সজিবকে গ্রেফতার করে। বিষয়টি মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২টায় প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের জানান র্যাব-৯ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো. মোমিনুল হক জিডি-পি।
এর আগে রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট মহানগরের শেখঘাট খুলিয়াটুলা আবাসিক এলাকার নীলিমা-১৪ নম্বর বাসা থেকে সোনিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কলাছড়া গ্রামের বিল্লাল আহমদের মেয়ে ও দক্ষিণ সুরমার নুরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী। তিনি মা ও সৎ বাবার সঙ্গে ওই বাসার ৪র্থ তলায় থাকতেন। সোনিয়া সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার নাটকে অভিনয় এবং মোবাইলভিত্তিক অ্যাপস টিকটক ও লাইকিতে ভিডিও করতেন।
পারিবারিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগের সোনিয়াদের বাসায় রাত্রিযাপন করেন তার মামাতো ভাই সজিব। রবিবার সকালে পরিবারের অন্য সদস্যরা অসুস্থতার কারণে সোনিয়ার সৎ বাবা সেলিম মিয়াকে দেখতে হাসপাতালে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর সজিবও ওই বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে দুপুর ১২টার সোনিয়ার শয়নকক্ষে গিয়ে তার গলাকাটা লাশ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
প্রথম থেকেই সোনিয়ার পরিবারের দাবি ছিলো- এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সজিব জড়িত। পুলিশের সন্দেহের তিরও ছিলো সজিবের দিকে। ঘটনার পর থেকে সজিব গা ঢাকা দেওয়ায় সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। সোনিয়ার ঘর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণলঙ্কারও খোয়া গেছে বলে দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব-৯-ও ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে। তদন্তের এক পর্যায়ে র্যাব তথ্য যুক্তির সহায়তায় সজিবের অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরে সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানাধীন সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
র্যাব-৯ এর অধিনায়ক মোমিনুল হক প্রেস ব্রিফিংকালে জানান- প্রায় সোনিয়াদের বাসায় আসতেন সজিব। তিনি তার গর্ভবতী স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে গত ৭ দিন যাবৎ সোনিয়াদের বাসায় অবস্থান করেছিলেন। ঘটনার আগের দিন (১১ ফেব্রুয়ারি) সোনিয়া চাকরির সন্ধানে সজিবকে নিয়ে বিয়ানীবাজার যান। ঐদিন বিয়ানীবাজার থেকে ফেরার পথে সিলেট শহরের শেখঘাটে সোনিয়ার অসুস্থ খালাকে দেখে তারা রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরেন। ঘটনার দিন সকালে সোনিয়ার সৎ বাবা অসুস্থ হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে যান তাকে। পরে হাসপাতাল হতে সোনিয়ার মা দুপুর ১২ টার দিকে বাসায় ফিরে সোনিয়াকে দেখতে না পেয়ে তার শয়নকক্ষে ঢুকে বিছানায় রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। সোনিয়ার মরদেহের গলার বাম পাশে কাটা এবং ডান হাতের কব্জির রগ কাটা পাওয়া যায়। পুলিশ এসময় তল্লাশি করে ঘটনাস্থলের খাটের তোষকের নিচ থেকে ধারালো রক্তমাখা একটি কাঁচি উদ্ধার করে।
র্যাব আরও জানায়- সজিবের নামে ঢাকার ভাষানটেক থানায় মামলা রয়েছে। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে শিশু অপহরণ ও সহায়তার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। এ মামলায় ২০১৮ সালে তিনি জেলও খেটেছেন।
এদিকে সজিব আহমদকে (২৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার র্যাব তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আজ বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সজিবকে আদালতে তোলা হয় সজিবকে। আদালতে পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ডর আবেদন করা হয়েছে।
রিমান্ড চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, আজ সোনিয়া আক্তার হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত মো. সজিব আহমদকে আদালতে তোলে তাকে রিমান্ডের নেয়ার আবেদন করা হয়েছে। আদালত কি সিদ্ধান্ত দেন তা পরে জানা যাবে।